-0.8 C
Toronto
বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫

টরন্টোর জর্জব্রাউন কলেজ এবং রিয়া

টরন্টোর জর্জব্রাউন কলেজ এবং রিয়া
টরন্টোর জর্জব্রাউন কলেজ এবং রিয়া

টরন্টোর জর্জব্রাউন কলেজের ২য় বর্ষ-Health Information Management ক্লাসে মনোযোগ দিয়ে লেকচার শুনছি। ফোনটা সামনেই সাইলেন্ট করা। লক্ষ করলাম রিয়া ঘন ঘন কল দিচ্ছে। আমাকেতো সে কখনো কল করেনা। ভাবছি আর ক্লাস করছি। ফোন নং সে নিয়েছিলো কোন বিপদে যেন আমার সাহায্য চাইতে পারে এমন ভেবে। আমার পাশের ভারতীয় ডাক্তার সহপাঠী বিরক্ত হয়ে বলল

-ফোন ধরিস না কেন?
-বাজতে থাকুক, ক্লাস শেষে কথা বলবো।
-কোন জরুরী কলওতো হতে পারে?
ফোন নিয়ে বাইরে এলাম। রিয়াকে কল দিলাম
-ভাইয়া?
-হ্যা।
-ভাইয়া একটু আসতে পারবেন?
-কোথায়?
-পারিবারিক আদালতে।
রিয়া বলতে থাকলো
-আজ সকালে পারিবারিক আদালতে এসেছি। আমার হাজবেন্ড এ আদালতে অভিযোগ করেছে যে আমি ছেলে নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যাবো এবং গেলে আর ফিরবো না তাই আদালত আমাকে ডেকেছেন। আপনিতো জানেন আমি এক মাসের জন্য দেশে যাবো আব্বা-মা ও ভাইবোনদেরকে দেখতে এবং আমার ছেলেকে দেখাতে। কিন্তু জাজ আমি একা দেখে এই কেস নিয়ে কথা বলতে চাননি এবং আমার সাথে একজন লোক নিতে বলেছেন অন্তত: আজকের জন্য তাই আপনাকে কল দিয়েছি।
আমার ক্লাস ততক্ষনে শেষ হয়েছে তাই জানতে চাইলাম
-কোথায়?
-কলেজ রোডের পারিবারিক আদালতে লান্চ আওয়ারের পরে।
ঘড়ি দেখলাম। সময় ১১ ৩০ এর কাছাকাছি।
-আচ্ছা, আমি আসছি।
-ভাইয়া ১৩ তলায় এসে খোঁজ নিবেন আমি এখানেই থাকবো।
সাবওয়ে রেল ধরলাম। অল্প সময়ে পৌঁছে গেলাম কলেজ রোডে। লান্চ সেরে ১৩ তলায় উঠলাম। এ সময়ে তেমন জন সমাগম থাকেনা, সবাই লান্চে ব্যস্ত। প্রয়োজনীয় চেকিং সেরে আদালত সীমানায় প্রবেশ করলাম। রিয়াকে তো কোথাও দেখিনা। ফোন দেই সেটাও বন্ধ পাই। হঠাৎ পেয়ে গেলাম পেশকারকে। একজন বললো তাকে জিজ্ঞাসা করতে।
-Good afternoon
-Good afternoon.
-আমি রিয়ার জন্য এসেছি। তুমি জানো রিয়া কোথায়?
-কিছুক্ষন আগে দেখলামতো, আশে পাশে কোথাও আছে? অপেক্ষা করো।
-রিয়া তোমার কি হয়?
-আমার Cousin
-কিন্তু ওযে বললো তুমি তার বন্ধু?
ভালো বিপদে পড়লাম। পেশকারের মুখে অন্য কথার সুর। উত্তরতো দিতেই হবে তাই বললাম
-আমাদের দেশে কাজিনও আমাদের ভালো বন্ধু হয়।
তিনি আমার কথায় পুরা সন্তুষ্ট নন বলে মনে হলো তারপর প্রসংগ বদলে বললেন
-মেয়েটির সাথে কোন উকিল নেই তাই জাজ সাহেব একজন উকিল বা নিদেনপক্ষে পরিচিত কাউকে সাথে রাখতে বলেছেন আদালত চলার সময়।
কিছুক্ষণ পর রিয়ার সাথে দেখা।
-ভাইয়া আমি একটা ঘরে নামাজ পড়ছিলাম।
-তুমি তাকে বলেছো কেন আমি তোমার বন্ধু হই?
রিয়া ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললো
-তা কি বলবো?
মনে হলো কাজিন শব্দটাও দরকারের সময় তার মাথায় আসেনি।
রিয়া আর আমি দুজন পাশাপাশি বসেছি। পাশেই আরেক সারি আসনে তার হাজবেন্ড মবিন ও তার উকিল বসেছে।
আদালত বসেছে, জাজ তার সিটে। আমাকে দেখিয়ে দিলেন পেশকার।
আমি পরিচিতি দেব অথচ লক্ষ করলাম পেশকার এবং আদালত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগন কেমন যেন গম্ভীর হয়ে আছেন। মনে হচ্ছে আদালতের আলোটাও যেন অন্ধকার।
আমি শুরু করলাম
-Your honour আমি সৈয়দ আযম একজন কানাডীয় নাগরিক। জর্জব্রাউন কলেজে পড়ছি বর্তমানে। রিয়ার কল পেয়ে আদালতে এসেছি।
লক্ষ করলাম ইওর অনার বলার সাথে সাথে সবাই খুব খুশী, বুঝতে পারলাম এই একটি কথাই শোনার জন্য সবাই দুশ্চিন্তায় ছিলো কারন এটা হলো আদালতের পরিভাষা। বাংলাদেশে যেমন বলা হয় -মাই লর্ড আর এখানে ইওর অনার।
আনারেবল জাজ কেন আমাকে রিয়া ডেকেছে তা আমাকে বুঝিয়ে দিলেন যা আমি পেশকারের মুখে আগেই শুনেছি। তিনি বললেন
-২১ দিন পর আর একটা হাজিরা আছে তখন তুমি কি আসতে পারবে?
সবিনয়ে বললাম
-ইওর অনার সে সময় আমার একটা পরীক্ষা আছে তাই আমি আসতে পারবোনা।
-আচ্ছা ঠিক আছে আমরা না হয় ওর জন্য একজন আইনজীবি নিয়োগ করবো।
আমি বললাম
-রিয়া ইংরাজী বুঝে তবে বলতে একটু সমস্যা তাই ওর কথা আমি মহামান্য আদালতকে জানিয়ে দেব।
রিয়ার স্বামী আর তার আইনজীবি পাশের সারিতে বসে আমাদের কথা শুনছে। অল্প সময় পরে আদালত শেষ হলো সেদিনের মতো। মাননীয় জাজ সিট থেকে উঠে চলে গেলেন।
সবাই উঠেছেন আসন থেকে বেরনোর জন্য। আমি ভাবছি জীবনটা কত কঠিন-স্বামী-স্ত্রী আজ একজন আরেক জনের শক্র। আদালতের পরিভাষায় একজন বাদী আর একজন বিবাদী। তাদের বর্তমান কলহ বিচ্ছিনতা নিয়ে আর বিচ্ছিন্যতার বলি তাদের একমাত্র সন্তান। আমি আবার কলেজে ফিরে এলাম বৈকালিক ক্লাসে।

- Advertisement -

ইয়েলোনাইফ, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles