10.7 C
Toronto
রবিবার, মার্চ ১৬, ২০২৫

মানুষ খুন যেন সাজ্জাদের বাম হাতের খেল!

মানুষ খুন যেন সাজ্জাদের বাম হাতের খেল!
সাজ্জাদ হোসেন

কথায় কথায় গুলি ছোড়েন তিনি । চাঁদা না দিলে মহাবিপদ। মানুষ খুন যেন তার বাম হাতের খেল। গেল ৫৩ দিনের ব্যবধানে প্রকাশ্য দিবালোকে ট্রিপল মার্ডারের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। ১৫-২০ জনের বাহিনী নিয়ে চার থানা এলাকায় দাপিয়ে বেড়ান তিনি। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, চাঁদাবাজির মামলা আছে ১০টি ৷ দুর্ধর্ষ এই সন্ত্রাসীর নাম সাজ্জাদ।

হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদ। সবশেষ সোমবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে তার গুলির নিশানা হন নগরের চান্দগাঁও থানাধীন শমসের পাড়া এলাকার ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীন (২৬) ৷

- Advertisement -

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) (তদন্ত) সবেদ আলী জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসী সারোয়ার বাবলা এবং সাজ্জাদ হোসেন গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় প্রাণ হারান আফতাব উদ্দিন তাহসীন। নিহত তাহসীন চান্দগাঁও থানার চার নম্বর ওয়ার্ডের হাজীরপুল এলাকার দিলা মিস্ত্রি বাড়ির মো. মুসার ছেলে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সারোয়ার বাবলা এবং সাজ্জাদ দুজনেরই ‘গুরু’ এক সময়ের দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার চট্টগ্রামে আলোচিত বহদ্দারহাটে ‘এইট মার্ডার’ মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাজ্জাদ হোসেন। সাজ্জাদ বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতে পলাতক আছেন।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, এই দুজনের অপরাধ জগতের ‘গুরু’ সাজ্জাদ হলেও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সারোয়ার বাবলা এবং সাজ্জাদ হোসেনের মধ্যে আছে দ্বন্দ্ব। গত ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। জামিনে বেরিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সাজ্জাদ। সবসময় কোমরে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করেন তিনি।

পুলিশ বলছে, সাজ্জাদের গ্রামের বাড়ি জেলার হাটহাজারী হলেও তার অপরাধ জগত নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ থানাসহ চার থানাজুড়ে বিস্তৃত ৷ ওই চার থানা এলাকার তিন লাখ বাসিন্দার মূর্তিমান আতঙ্ক সাজ্জাদ হোসেন। ব্যবসায়ী তাহসীনসহ গত ৫৩ দিনে তিনটি খুনের ঘটনায় সাজ্জাদ সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

একের পর এক খুনে জড়িত দুর্ধর্ষ এই সন্ত্রাসীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করতে না পারায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে এলাকার মানুষ। সোমবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ছেলের (তাহসীন) লাশ দেখে তার বাবা মুসা বার বার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘সাজ্জাদ আর কত লাশ ফেলালে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করবে।’

চাঁদা না পেয়ে কেয়ারটেকারকে পিটিয়ে আহতচাঁদা না পেয়ে কেয়ারটেকারকে পিটিয়ে আহত
পুলিশ জানায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে নগরের কালারপুল এলাকায় তিনজন অস্ত্রধারী সহযোগী নিয়ে এক ভবন মালিকের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা চাইতে আসেন সাজ্জাদ। তিনজনের হাতেই ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। সেদিন শটগান হাতে ছিল সাজ্জাদ। ভবন মালিককে খুঁজতে খুঁজতে শটগান থেকে গুলি ছুড়তে থাকেন সাজ্জাদ। সেদিন তার সঙ্গে আসা এক অস্ত্রধারীর নাম মো. হাছান বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজীর দৃশ্য ভবনটির সিসিটিভির ফুটেজে ধরা পড়ে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মূলত নির্মাণাধীন ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক চাঁদা তোলেন সাজ্জাদ। নগরের চান্দগাঁও হাজীরপুল ও পাঁচলাইশ, অক্সিজেন এলাকার অনন্যা, শীতলঝর্ণা, কালারপুল এবং শহরের সীমান্তবর্তী হাটহাজারীর কুয়াইশ এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন সম্পর্কে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা বলেন, ‘সাজ্জাদ খুবই হিংস্র এবং ভাড়াটে খুনি।’

এর আগে গত ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় এলাকায় এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা নেওয়ায় ইকবাল নামে এক যুবক প্রতিবাদ করলে তার বাড়ি লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি করেন সাজ্জাদ। এ ঘটনায় ইকবাল বাদী হয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় মামলা করেন।

চাঁদা না পেয়ে গত বছর ২৭ অক্টোবর চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকার হাছান নামে আরেক ব্যবসায়ীর বাসায়ও গুলি করেন সাজ্জাদ। এ ঘটনায় হাছান চান্দগাঁও থানায় মামলা করেছেন।

বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন অনন্যা আবাসিক ও কুয়াইশ এলাকায় গত ২৯ আগস্ট প্রকাশ্যে গুলি করে মো. আনিস ও মাসুদ কায়সার নামে স্থানীয় যুবলীগের দুই কর্মীকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয় বায়েজিদ ও হাটহাজারী থানায়। এই জোড়া খুনের ঘটনায়ও সাজ্জাদ সরাসরি জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

এ দিকে সোমবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে বহদ্দারহাট শমসের পাড়ায় সংঘটিত আফতাব উদ্দিন তাহসীন খুনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এক প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকদের জানান, ট্রাকে করে আনা বালু আনলোড করাচ্ছিলেন তাহসীন। কিছুক্ষণ পর সেখানে আসে একটি নোহা মাইক্রোবাস। প্রথমে গাড়ির ভেতর থেকে আফতাবকে লক্ষ্য করে একটি গুলি ছোড়া হয়। এরপর সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ও তার সহযোগী মাহমুদ, হাছানসহ চারজন গাড়ি থেকে নেমে গুলি করতে থাকেন। তারা আফতাবের উরু ও পায়ে পরপর চারটি গুলি করে চলে যান। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল তাহসীনের রক্তাক্ত নিথর দেহ উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। তবে এর আগেই ঘটনাস্থলে নিহত হন ব্যবসায়ী তাহসীন।

নিহত তাহসীন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য আরশাদুল আলম বাচ্চুর অনুসারী হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। তবে তাহসীন চলাফেরা করতেন সারোয়ারের সাথে ৷ পুলিশ জানায়, নিহত তাহসীন ইট, বালু ও সিমেন্টের ব্যবসা করতেন। তার এ ব্যবসায় সহযোগী ছিলেন সারোয়ার বাবলা।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles