5.6 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

মায়া রিভারা : নবম পর্ব

মায়া রিভারা : নবম পর্ব
মায়া রিভারা নবম পর্ব

হাঁটতে শুরু করলাম সমুদ্র সৈকতের দিকে । সাগরের দিকে যাবার পথেই সুমিং পুল। সেখানে বাজছে সুন্দর রিদোমিক মিউসিক। সাঁতারে ব্যস্থ নর নারী তরুন তরুণীরা। সময় হোল তাদের সুইং পুলে দাঁড়িয়ে নাচের মতো করে ব্যায়াম করার। প্রশিক্ষক দুজন এসে দাড়ালো। আসাধারন ব্যায়াম ভঙ্গি। প্রচণ্ড আনন্দ দায়ক ভাবে চলছে শরীর চর্চার পালা। প্রশিক্ষক দুজন পুলের পাশে আর অন্যরা পুলের ভেতরে নৃত্য ব্যায়াম চলছে। এ এক দেখার মতো দৃশ্য। আমি কিছুক্ষণ সে দৃশ্য দেখলাম। এই দৃশ্য দেখে আমি আর লোভ সংবরণ করতে পারলাম না। কিন্তু আমি প্রস্তুতি নিয়ে আসিনি পুলে নামার জন্য। মনের বাসনা পুরনের জন্য আমি প্রশিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে মিউসিকের সাথে কিছুক্ষণ নৃত্য ব্যায়াম করলাম। মনে মনে ভাবলাম জীবনটা যদি এভাবে শুধু আনন্দে কাটিয়ে দেয়া যেতো মন্দ হতো না। এই ভাবনাটা যদিও একটা অবাস্তব ভাবনা।
আবার এগুতে থাকলাম সমুদ্রের দিকে। আজো আবার দেখা তার সাথে। আসলে প্রতিদিনই আমার দেখা হয় বিউটি কুইন পাখিটির সাথে। রোজই আমি ওর সাথে কিছু কথা বলি। আজো দেখলাম তাকে লেজ দুলিয়ে আপন মনে হেঁটে বেড়াচ্ছে। আজ তার একটু কাছে গিয়ে জিজ্ঞাস করলাম ওগো বিউটি কুইন, তুমি কেনো একা ঘুরে বেড়াও? তোমার কি কোন সখা সখী নেই? তোমার মনে কি অনেক দুঃখ? আমার এত প্রশ্নের জবাবে সে তার কালো চকচকে ঠোটে কোন শব্দ করলো না। বিউটি কুইন আমাকে তেমন পাত্তা না দিয়ে নির্ভয়ে হেঁটে চলে গেলো। উড়ে যাবারও কোন প্রয়োজন মনে করলো না। বুঝে নিলাম সে ভয় পাবার পাখি না। নির্ভয় চিত্তের পাখি।

আমরা এসে বসলাম সাগরের গা ঘেষে। আমাদের সামনেই বসে আছে বিরাট একটি পরিবার। দাদা দাদি নানা নানি নাতি নাতনী সবাই এসেছে দল বেঁধে। হাসি আনন্দে উছলে পরছে পরিবারটি। এই পরিবারটিও আমাদের মতো টরন্টো থেকে এসেছে।
হঠাৎ করে চোখে পড়লো চারটি সাদা বক, পানির উপরে ঘুরে ঘুরে উড়ে বেরাচ্ছে। একবার একেবারে পানির কাছা কাছি চলে আসছে আবার উপরের দিকে উঠে ঘুরছে। একসময় দেখলাম চারটি বকই মাথা ডুবিয়ে দিলো পানিতে, চারটি বকের মুখেই চারটি মাছ। মাছ মুখে নিয়ে উড়ে চলে গেলো চারটি বকই। দৃশ্যটা দেখে খুব আনন্দ পেলাম। বকের মাছ ধরার দৃশ্য আমার আগে কখনো দেখা হয়নি।

- Advertisement -

আজ একদল তরুন তরুণী এসেছে দলবেঁধে। সবাই মনে হয় এরা বন্ধু কতোনা আনন্দ করছে ওরা পানিতে নেমে। কখনো গোল হয়ে দাঁড়িয়ে গান গাইছে, কখনো পানিতে হাত ধরাধরি করে নাচছে। একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে দিয়ে হেসে গড়িয়ে পরছে। মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করছি তাদের নির্ভেজাল আনন্দটুকু । বুকের ভেতর ছোট্ট একটু বেদনাও উঁকি দিলো, নিজেদের তরুন বয়সের কথা ভেবে। মনে হোল আহারে আমরা যদি পারতাম নিজেদের তরুন বয়েসটি এভাবে উপভোগ করতে। আমাদের ছিলো কত বাধা, কত বিপত্তি, কত শাসন। কত অল্প কিছুতেই আমাদের বড় রকমের আনন্দ ছিলো। এত নিয়ম কানুনের মাঝে চলা সত্তেও¡ সেখানে যেনো ছিলো স্নিগ্ধ ,নরম, আদুরে ধরনের আনন্দ। জানিনা আজকালকার তরুন তরুণীদের মাঝে এই স্নিগ্ধ আদুরে আনন্দ টুকু আছে কিনা?

আজ প্রচণ্ড গরম। কিন্তু বাতাস থেমে নেই। গরমকে তাড়াবার জন্য বাতাসও বয়ে চলেছে তার সর্ব শক্তি প্রয়োগ করে। কিন্তু গরমের সাথে প্রতিযোগীতাতে হেরে যাচ্ছে বারবার। গরমের কারনে মানুষেরও আজ সাগরের সাথে মাখা মাখি আনন্দটা একটু বেশি রকমের।
আজ আমি ভেবেছিলাম পা ভিজিয়ে ভিজিয়ে হেঁটে যাবো সৈকতের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। শুধু পা ভিজাব গা ভিজাব না। কিন্তু আমি আমার কথায় ঠিক থাকতে পারলাম না। আমাকে জেনো সমুদ্র ডাকতে লাগলো তার বুকে ঝাঁপিয়ে পরার জন্য। আমি ঝাঁপিয়ে পরলাম সাগরের বুকে। আজ আমি জলের খেলাতে ব্যস্ত থাকবো সারাটা দিন। বিশাল বিশাল ঢেউ এসে আমাকে কখনো গলা পর্যন্ত ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। কখনো ঢেউয়ের ধাক্কাতে আমি পরে যাচ্ছি। আমি কিশোরী মেয়ের মতো হেসে গড়িয়ে পরে আবার উঠে দাঁড়াচ্ছি। আমি জীবনের সমস্ত ব্যথা, যন্ত্রণা, হাহাকার সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়ে পানি ও বাতাসের উচ্ছলতায় নিজেকে ভরিয়ে নিলাম।

ম্যাল্টন, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles