এই সময়ের জনপ্রিয় ও গুণী অভিনেত্রী অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। ২০০৬ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার সুন্দরী প্রতিযোগিতায় রানার-আপ হওয়ার মাধ্যমে বিনোদন অঙ্গনে পা রাখেন। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ নানা ধরনের পুরস্কার। অভিনয় জীবন তো বটেই ব্যক্তিগত জীবনে নানা চড়াই-উতরাই পার করেছেন এই অভিনেত্রী। যেকোনো অন্যায়ের জন্য থেকেছেন সম্মুখভাগে। আজ তিনি পা দিলেন ৪১ বছর বয়সে। সব কিছু নিয়েই কথা বলেছেন তিনি।
জন্মদিন কেমন কাটছে?
বেশ ভালো কাটছে বলা যায়। সকালে মেয়েকে নিয়ে স্কুলে গিয়েছিলাম। তারপর ফিরে বাসাতেই সময় কাটছে। সবাই উইশ করছেন।
সবার ভালোবাসা গ্রহণ করছি।
৪১ বছরে পা রাখলেন, কখনো কারো কাছ থেকে পাওয়া বিশেষ শুভেচ্ছার কথা মনে আছে?
সে রকম করে আলাদা কিছু মনে পড়ছে না। সব পছন্দের মানুষরাই সব সময় উইশ করেন। এবারও করেছেন। এটাই ভালো লাগে।
দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ার আপনার। এত দিনে আপনার জীবনের সেরা অর্জন কোনটি বলে মনে করেন?
আমি নিজেকে মানুষ হিসেবে দাবি করতে পারছি, নিজেকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারছি, এটাই আমার জীবনের সেরা অর্জন।
এবার একটু দেশ নিয়ে কথা বলি। কিছুদিন আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলন হয়ে গেল। আপনি একদম সামনে থেকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এই বোধটা অনেক শিল্পীর মধ্যে তৈরি হয়নি। তারাও শিল্পী, আপনিও শিল্পী-এই পার্থক্য থাকার কারণ কি বলে মনে হয়?
এই পার্থক্য নিয়ে আমি কিছুই বলতে পারছি না। নো কমেন্টস।
দেশে নতুন সরকার ক্ষমতায় বসার পর সরকারের নানা সাংস্কৃতিক কমিটিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিল্পীরা সুযোগ পাচ্ছেন। আশ্চর্জনকভাবে আপনাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। কারণ কী?
এটা একেবারেই আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমি কোনো কমিটিতে ঢুকব না। বা কোথাও সেভাবে যুক্ত হবো না। আগের সরকারের আমলেও আমি কোনো কমিটিতে ছিলাম না। ভবিষ্যতেও আমি থাকতে চাই না। আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাই। আমি যেটা করতে পারি সেটাই করতে চাই। তবে এটা সত্যি এই সরকারে যারা আছেন তাদের কাছে আমি অনেক সম্মানিত হয়েছি। তাদের বলেছি, আমি আমার মতো থাকব, আমার জীবন নিয়ে বাকি পথটা চলব। একটু বলে রাখি, আমাকে কিন্তু বিভিন্ন কমিটিতে থাকার জন্য বলা হয়েছিল, তারা অনুরোধ জানিয়েছিলেন। আমি বিনয়ের সঙ্গে জানিয়েছি, আমি কোনো কমিটিতে থাকতে চাই না।
আপনার সঙ্গে সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছবি রয়েছে, সেটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা রকম ট্রল হয় ও হচ্ছে। বলা হচ্ছে আপনি একসময় আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন ও সুবিধা নিয়েছেন। কতটুকু সত্য?
সত্য বা অসত্য কিছু নাই। যে প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে গেছেন তার সঙ্গেও আমার ছবি আছে। সব মন্ত্রী ও অনেক এমপির সঙ্গে ছবি আছে। ছবি থাকা না থাকার সঙ্গে ট্রল করার কী সম্পর্ক এটা আমি জানি না। দেখুন, আমি বাংলাদেশের একজন শিল্পী, অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে। ছবি তুলেছেন। বিএনপিরও বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে ছবি আছে। অন্য দল এবং অনেক অ্যাম্বাসাডরের সঙ্গে ছবি আছে। সেটা নিয়ে ট্রল করা বা না করা বিষয়ে তো আমি কিছু বলতে পারছি না। আর আওয়ামী লীগের কথা বললেন, আমার স্বীকার করতে একটুও বাধা নেই ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আমি আওয়ামী লীগের হয়ে প্রচারণা করেছি। সেটা তখন প্রয়োজন মনে করেছি বলে করেছি। তাই বলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করব না? যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমি সারা জীবন সরব থেকেছি, সামনেও থাকব। আর সুযোগ কতটুকু নিয়েছি সেটা জানতে চাইলে বলব, আমার বাচ্চার বাবার অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু সুযোগ নিয়েছি।
যে আশায় দেশে এত বড় পরিবর্তন হলো সেটা কতটুকু পূরণ হয়েছে বলে মনে করেন?
আমি খুবই আশাবাদী। তরুণরা আমাদের একটা ওই রকম শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্তি দিয়েছে, এটাই শান্তির ও স্বস্তির। এখন যে সরকার আছে সেখানে সব ভালো মানুষেরা আছেন। যদিও এ দেশের মানুষ ভালো মানুষদের শাসন কতটা নিতে পারবে, সেটাই চিন্তার বিষয়। কারণ আমরা সব সময় দুঃশাসনে অভ্যস্ত। তবে এখন যে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হয় সেটা প্রশাসন ও পুলিশের মধ্যে এখনো কিছু আগের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা মানুষজন আছে, তারাই করছেন। তারা যেটা করছেন সেটা খুবই ন্যক্কারজনক। আমি আশাবাদী, দ্রুত সেটা থেকে বের হয়ে আসতে পারব। আর এত অল্প সময়ের সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে, এটা আশা করাও খানিকটা ভূল। তবে একদিন সবই ঠিক হয়ে যাবে। আমি আশাবাদী।
আপনার নতুন সিনেমার খবর জানানোর কথা ছিল। সেটা কতদূর এগোল?
আমার দুটি সিনেমা হওয়ার কথা ছিল এ বছর। একটা সেপ্টেম্বরে আরেকটা ডিসেম্বরে। এর মধ্যে একটা ক্যানসেল হয়েছে। আরেকটার শুটিং আগামী বছরের শুরুতে হবে। আর ‘এষা মার্ডারে’র শুটিংহবে আগামী ডিসেম্বরে। এর মধ্যে রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের ‘মাস্টার’ সিনেমাটা শেষ করেছি। এই তো।