
একটা সময়ে সবকিছুই সুন্দর থাকে, অনুকূলে থাকে। কম বয়সে মানুষের চৌকস চেহারা ও শক্তি-সামর্থ্যতে ভরা থাকে। কিন্তু সময়ের কাছে সবই ধরা। সময় চলে গেলে সব চলে যায়। ভারতের তারকাদের দিকে তাকান, বিগবস অমিতাব বচ্চন থেকে শুরু করে সম্রাট শাহরুখ খানের পর্যন্ত বয়স চলে গেছে। আগে তারা যতটা দুনিয়া কাঁপাতেন এখন আর পারেন? না। তাদের কি টাকার অভাব আছে? না। টাকা দিয়ে কি তাদের সেই জৌলুস, চৌকস যৌবন বা দুনিয়া মাতানো ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে পারবেন? না। কিছুই পারা যাবে না।
পৃথিবীর মধ্যে একজন মানুষ আছেন, তাঁর মরা*র পর তাঁর প্রেমে পড়েছি আমি। তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়েছি। তিনি হলেন ভারতের রতন টাটা। কিছুদিন আগে তিনি দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। ইয়াং কালে তাঁর যে চেহারা-সুরত, ফিগার বলেন আর চোখের চাহনী সবকিছুতেই তিনি ছিলেন এক কথায় অসাধারণ !
তাঁর জীবন কাহিনি ও মৌলিক যে রুচিবোধ ছিল তেমনটা পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া বিরল। সারা দুনিয়ায় সর্বোচ্চ ধনীদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। অথচ তাঁর চালচলনে, অভিব্যক্তিতে ফুটে উঠেছে এক সাধারণ মহাকালের শ্রেষ্ঠত্ব। কীভাবে নিজেকে তিনি একটা মার্জিত অভিরুচির গণ্ডির মধ্যে রাখতে পেরেছেন তা ভাবতেই আমি বহুবার অবাক হয়েছি। আমার নিজের কার্য বা অভ্যাসগুলোর সঙ্গে মিলাতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছি প্রচণ্ডভাবে।
তিনি জীবনে অনেক কিছুর স্বপ দেখেও ছুঁতে পারেন নি ভাগ্যের এক অলৌকিকতার কশাঘাতে। সময়টা পার হয়ে গেছে। এক বুক দুঃখ বা আকাঙ্ক্ষা নিয়েই হয়তো তাঁর প্রস্থান হয়েছে। কী অসাধারণ ব্যক্তিত্বের একজন ছিলেন তিনি! ভারতের যেসব শীর্ষ ধনী রয়েছেন বর্তমানে, তাঁদের যে সম্পত্তির বা টাকার পরিমাণ তারচেয়েও বেশি রতন টাটা ডোনেট করেছেন। চিন্তা করেন! অথচ এই মানুষ শেষ বয়সে এক জন্মদিনে একটা কাপ কেক কেটে একটুকরো মুখে নিয়েছিলেন that’s it। তিনি তো ইচ্ছে করলেই মহাকাশে গিয়েও জন্মদিন পালন করতে পারতেন। অথচ আরেক ধনী মোকেশ আম্বানি তাঁর ছেলের বিয়েতে বিশ্ব রেকর্ড ব্রেক করেছেন খরচে। $600 million খরচ করেছেন যা আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কারোর রেকর্ডে আছে বলে আমার জানা নেই। আপনাদের জানা থাকলে বলবেন।
তো যা বলছিলাম এই অসাধারণ ব্যক্তিত্বের একজন মানুষেরও সময় চলে গেছে স্বপ্ন পূরণের চরম অপূর্ণতা নিয়ে।
এই যে হেমন্ত এসেছে কী তার সৌন্দর্য ! অল্প কিছুদিনের জন্য সেই সৌন্দর্যের স্থায়ীত্ব। সময় গেলেই সব শেষ। কেউ কি পারবে পৃথিবীর সব অর্থ খরচ করেও প্রাকৃতিকভাবে হেমন্তের এই সৌন্দর্যকে ধরে রাখতে? না।
এই যে ধরেন ট্রাম্প কাক্কু জিতলেন। তাঁরও একটা নির্দিষ্ট ম্যানমেড সময় রয়েছে শাসনকার্য পরিচালনা করার। চার বছর পর তাঁকে বিদায় নিতে হবে। সেই তো সময়ের অবধারিত নিয়মেই শেষ হবে তাঁর কার্য। জীবনটাও তো তেমনি। চুল কাঁচা থাকার সময় শেষ হবে। দাঁত গালে থাকার সময় শেষ হবে। গায়ের শক্তি শেষ হবে। মনের জোর শেষ হবে। জাগতিক ও প্রাকৃতিক অসংখ্য আগ্রহে ভাটা পড়বে। কিছুই কিন্তু বাকি থাকবে।
সবকিছু শেষ হতে পারে, কিন্তু একটা অসাধারণ ব্যক্তিত্বের ক্ষয় নেই। পালাক্রমে অনেক কিছু চলে গিয়ে ফিরে আসে। আসবে অনন্তকাল। টাকা গেলে টাকা আসে। হেমন্ত গেলে হেমন্ত আসে। কিন্তু দুইটা জিনিস গেলে কখনোই ফিরবে না। এক; সময়। দুই; ব্যক্তিত্ব বা সম্মান।
আল্লাহ আপনাদের সুস্থ রাখুন।
টরন্টো, কানাডা