
গৃহকর্তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক আছে-এমন সন্দেহে গৃহকর্মীকে খুন করেন গৃহকর্ত্রী সৈয়দা সামিনা হাসান (৬০)। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এমনটাই দাবি করেছেন।
শনিবার হত্যার অভিযোগে সামিনা ও তার স্বামী সৈয়দ জসীমুল হাসানকে (৬৩) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গুলশানের নিকেতনে তাদের বাসায় নিহত পারভীন ওরফে ফেন্সি (৩০) নামের ওই গৃহকর্মী কাজ করতেন। গত ১ ডিসেম্বর তাকে হত্যার পর মরদেহ তুরাগের দিয়াবাড়ীর ঝাউবন এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়।
রোববার গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রীকে গ্রেপ্তার এবং গৃহকর্মীকে হত্যার নেপথ্য কারণ জানাতে মিরপুর ৬০ ফিটে পিবিআইয়ের ঢাকা মহানগর উত্তরের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেথানে জানানো হয়, গত ২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তুরাগের দিয়াবাড়ীর ঝাউবন এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে তুরাগ থানা পুলিশ। পিবিআই তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয় এটি গৃহকর্মী পারভীনের মরদেহ। অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার হওয়া গৃহকর্মীর মরদেহ শনাক্ত করেন তার স্বজনরা। তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর জেলায়।
পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানান, অভাবের তাড়নায় দেড় বছর আগে পারভীন তার স্বামী মোমিনুলের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসেন। তিনি গুলশানের নিকেতনের ই ব্লকের ছয় নম্বর সড়কের ১৫ নম্বর বাড়ির এ-১ নম্বর ফ্ল্যাটে গৃহকর্মীর কাজ নেন। তার স্বামী ঢাকায় রিকশা চালানো শুরু করেন। স্বামীর সঙ্গে তাকে দেখা করতে দেওয়া হতো না। তাকে আটকে রাখা হতো। স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে না পারা ও আটকে রাখার ঘটনায় মোমিনুল গত সেপ্টেম্বরে গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে একবার দেখা করার সুযোগ পান। অক্টোবরে দিকে মোমিনুল গ্রামের বাড়ি চলে যান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, গৃহকর্ত্রী সামিনা সন্দেহে করতেন তার স্বামী সৈয়দ জসীমুলের সঙ্গে গৃহকর্মীর অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে ১ ডিসেম্বর সকালে ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে পারভীনকে লাঠি দিয়ে মারধর করেন তিনি। এতে অচেতন হয়ে গৃহকর্মী ঘরের মেঝেতে পড়ে গেলে তার বুকে আঘাত করে হাড় ভেঙে ফেলা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর গৃহকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে সামিনা মরদেহটি গুম করার পরিকল্পনা করেন। এরপর তাদের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক রমজান আলীর সহায়তায় প্রাইভেটকারে করে মরদেহ দিয়াবাড়ীর ঝাউবনে ফেলে আসা হয়।
নিহতের স্বামী মোমিনুলের বরাত দিয়ে পিবিআই বলছে, ওই বাসায় তার স্ত্রী মাসে সাত হাজার টাকা বেতনে কাজ করছিলেন। কিন্ত গৃহকর্তা প্রতি মাসে তাকে বিকাশের মাধ্যমে এক হাজার টাকা পাঠাতেন।