-1.7 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৩, ২০২৫

কানাডা-ভারত উত্তেজনায় নতুন মাত্রা

কানাডা-ভারত উত্তেজনায় নতুন মাত্রা
কানাডায় নিযুক্ত ভারতের শীর্ষ দূতসহ আরও পাঁচ কূটনীতিককে অটোয়ার বরখাস্তের সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনার সর্বশেষ ঘটনা

কানাডায় নিযুক্ত ভারতের শীর্ষ দূতসহ আরও পাঁচ কূটনীতিককে অটোয়ার বরখাস্তের সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনার সর্বশেষ ঘটনা। কয়েক মাস ধরেই দেশ দুটির মধ্যে এই টানাপড়েন চলছে। কিন্তু এর পেছনে কী এমন আছে যা এই উত্তেজনায় প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে।

খালিস্তান বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের ঘোরতর বিরোধী ভারত। এই আন্দোলনের মাধ্যমে কিছু শিখ ভারতের ভূখ-ে খালিস্তান নামে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। ভারত বলছে, এই সম্ভাবনা অসাংাবিধানিক এবং দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। অটোয়া দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের অখ-তা অক্ষুণœ রাখার ওপর জোর দিয়ে আসছে। তাই বলে তারা কানাডায় বাক স্বাধীনতাকে দমন করতে পারে না।

- Advertisement -

খালিস্তানের সমর্থকরা মাঝে মাঝে কানাডায় সমাবেশের আয়োজন করেন এবং তারা একে বলে থাকেন রেফারেন্ডাম। এগুলো কানাডার মূল ধারার গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে কমই। আয়োজকদের অভিযোগ, ভারত তাদেরে ওপর দশকের পর দশক ধরে নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে, যা অস্বীকার করেছে দিল্লী।

ভারত কি কোনো কানাডিয়ানকে হত্যা করেছে? ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই ঘোষণা দেন যে, ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় শিখ নেতা হারদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকা-ে ভারত সরকারের সম্পৃক্ততার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্পর্কিত বিশ^াসযোগ্য তথ্য নিয়ে কানাডিয়ান গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্ত করছে।

নয়া দিল্লী প্রথমে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা সরাসরি অস্বীকার করেছিল। পরে অবশ্য বলে, বিচার বহির্ভুত হত্যা রাষ্ট্রীয় নীতি নয়।

গত মে মাসে এডমন্টন থেকে পুলিশ তিন ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করে এবং তাদের বিরুদ্ধে ফার্স্ট ডিগ্রি মার্ডার ও নিজ্জরের মৃত্যুতে হত্যা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।

ভারত বরাবরই বলে আসছে যে, এই হত্যাকা-ে ভারতের সম্পৃক্ততার পক্ষে কোনো প্রমাণ কানাডা কখনো তাদেরকে দেয়নি। যদিও ট্রুডো সোমবার বলেছেন, কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ এই তথ্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিনিময় করেছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ভারত কি কানাডার জন্য গুরুত্বপূর্ণ? ২০২২ সালে নভেশ^রে কানাডা ভারতকে তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে ঘোষণা করে। একটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর, আরও কাজ বিনিময় এবং নবায়নযোগ্য জ¦ালানিতে অংশীদারিত্বের আহ্বান জানায়।

চীনের ব্যাপারে উদ্বেগ বৃদ্ধির মধ্যে যেসব দেশ নয়া দিল্লীকে পাশে টানতে দীর্ঘ সময় ব্যয় করেছে কানাডা তাদের অন্যতম। অটোয়া বলেছে, বিশ^ব্যাপী গণতন্ত্র ও বহুত্ব উৎসাহিত করতে ভারত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

মসুর ও পটাশের বড় আমদানির জন্য কানাডার ওপর নির্ভরশীল ভারত। এ ছাড়া বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদেরও জনপ্রিয় গন্তব্য হচ্ছে কানাডা। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কানাডা ও ভারত বাণিজ্য চুক্তির জন্য উচ্চ পর্যায়ে বেশ কিছু বৈঠক করে ফেলেছে। কিন্তু নিজ্জর হত্যাকা-ের বিষয়টি প্রকাশ করার আগে আগে সর্বশেষ আলোচনাটি স্থগিত ঘোষণা করে কানাডা।

তাহলে এটা কি রাজনৈতিক বিবাদ? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদির সরকার এই যুক্তি দিয়ে আসছে যে, খালিস্তান বিচ্ছিন্নতাবাদের বিষয়টি ট্রুডো গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন না। তার প্রতিনিধি দল জাস্পাল আটওয়ালকে আমন্ত্রণ জানালে ২০১৮ সালে ট্রুডোর ভারত সফর নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ১৯৯৬ সালে একজন ভারথীয় মন্ত্রীকে হত্যা চেষ্টায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার এই শিখ।

এসবের পরম্পরায় সোমবার যা ঘটেছে তা পরিস্থিতির অবনতিরই প্রতিফলন। ভারতীয় সরকারের এজেন্ট সংশ্লিষ্ট হত্যা, নিপীড়নের মতো অপরাধেল ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক করে দিয়েছে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি)। এর আগে আরসিএমপি ও কানাডিয়ান কর্মকর্তারা ভারতের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে দিল্লী সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানালে অটোয়া ছয় ভারতীয়ি রাষ্ট্রদূতকে কানাডা ছাড়ার নির্দেশ দেয়। ভারতও সমসংখ্যক কানাডিয়ান রাষ্ট্রদূতকে বহিস্কার করে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles