সংস্কারের অন্যতম একটি বিষয় হলো সরকারের মেয়াদ। ভবিষ্যৎ নির্বাচিত সরকার সেটা রাষ্ট্রপতি হোক কিংবা সংসদীয় হোক, অবশ্যই হতে হবে চার বছর মেয়াদী। কিন্তু দেশের দুটো বড় দল বিএনপি এবং জামাত চাইছে পাঁচ বছরই থাকতে হবে। এটা গণ আকাংখা বিরোধী বলে আমি মনে করি।
বাংলাদেশের মত একটা অসহিষ্ণু জাতির জন্যে পাঁচ বছর একটা দীর্ঘ সময়। ভোটের মালিক জনগণ। একবার কাউকে ভোট দিলে নির্বাচিত ব্যক্তি বা দল যদি নির্বাচনী ওয়াদা পালনে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভোটারদের অধিকার আছে তার দেয়া ভোট প্রত্যাহার করার বা ফিরিয়ে নেবার। সেই কারণে পৃথিবীর অনেক দেশে ভোট ‘রিকল’ করার ব্যবস্হা আছে। বাংলাদেশে নেই। ঘটি বাটি বিক্রি করে কিংবা লুটপাটের অর্থ খরচ করে, হুন্ডা গুন্ডা পেশী শক্তি ব্যবহার করে, সত্য মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোন রকমে একবার নির্বাচনে পাস করতে পারলে পুরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে চায় বাংলাদেশের নেতারা। কারণ তারা নির্বাচনকে মনে করে বিনিয়োগ। পুর্ণ পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে তাদের পুরো বিনিয়োগ উঠিয়ে না নেয়া পর্যন্ত তারা ক্ষমতা ভোগ করতে চায় জনগণ চাক আর না চাক।
বেকারত্ব, ঘনবসতিপূর্ণ জনসংখ্যার বাংলাদেশে যেখানে দ্রব্যমুল্যের উঠানামা, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম, প্রতি পদে পদে বৈষম্যের দেশে জনঅসন্তোষ খুবই স্বাভাবিক বিষয়। সেই অসন্তোষকে ব্যবহার করে বিরোধী দল বা পরাজিত দলগুলোর জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করা, আন্দোলনের নামে ধর্মঘট, ভাংচুর একটা নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। ফলে পাঁচ বছর তাদের জন্যে একটা দীর্ঘ সময়।
প্রথম বছর সবাই কাটিয়ে দেয় মোটামুটি ক্লান্তিজনিত সময়, কেউ কাটায় প্রত্যাশায় ও প্রাপ্তির আশায়, কেউ বসে বিগত নির্বাচনের হিসাব নিকাশ নিয়ে। দ্বিতীয় বছরে দল গোছানো, জোট সংগী খোঁজা, তহবিল সংগ্রহে সময় কাটে। মুলত তৃতীয় বছরে শুরু হয় আন্দোলন। অথচ চার বছরের সরকার হলে, আর মাত্র এক বছর পরেই নির্বাচন। অর্থাৎ আন্দোলনের আর প্রয়োজন হবে না। নির্বাচনই হবে সরকার পরিবর্তনের একমাত্র পথ।
পাঁচ বছর মেয়াদের সমর্থকরা বলেন, কোটি কোটি টাকার নির্বাচনী ব্যয়ে দেশের ক্ষতির কথা। এটা শুনে আমার মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে শুধু একটা কথাই বের হয়, তা হলো, ‘ওরে মা রে মরছি রে’! একি কথা শুনি আজ মন্হরার মুখে!
হাজার হাজার কোটি টাকার লুটেরাদের মাত্র পন্চাশ বা একশত কোটি টাকার নির্বাচনী খরচের জন্যে কি মায়া!!!
আরে ভাই টাকা দিবে গৌরি সেন! ডোন্ট অরি এ্যাবাউট ইট। বিগত বায়ান্ন বছরে দেশে আন্দোলনের নামে জ্বালাও, পোঁড়াও, ভাংচুর, দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারে যত সম্পদ ও অর্থ নষ্ট হয়েছে তা দিয়ে সম্ভবত আরো একশতটি জাতীয় নির্বাচনের খরচ মেটানো সম্ভব হতো।
কাজেই বিএনপি, জামাত সহ সকলকে বলবো, গণ-অভ্যুত্থানের পর আপনারা যে পরিমান দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন তা নজিরবিহীন। কিছু কিছু বিষয় বাদে অধিকাংশ বক্তব্য বিবৃতিই গঠনমুলক ছিল। কাজেই জবাব দিহিতার বিষয়টাও অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখবেন বলে আশা করি। ভোটারদেরকে গুরুত্ব দিলে, ভোটের মালিক তথা দেশের মালিক জনপ্রতিনিধি বা আমলারা নয়, জনগণ এবং জনগণের কাছে সরাসরি সকলেই আপনারা দায়বদ্ধ, এই সত্য মেনে, জনগণের কাছে সরাসরি জবাবদিহিতার স্বার্থে, নুতন সরকারের মেয়াদ চার বছর মেনে নেয়া হবে যৌক্তিক ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের কর্তব্য।
স্কারবোরো, কানাডা