![প্রেম অনল প্রেম অনল](https://www.thebengalitimes.com/wp-content/uploads/2024/11/Picture24.png)
তারা স্কুলে চলে গেছে। তরু অফিসের জন্য রেডি হয়ে বের হয়েছে মাত্র। রাস্তার একপাশে গর্ত হয়ে পানি জমে আছে। একটা মটর বাইক পাশ দিয়ে সাঁ করে চলে গেছে। কিছু টা কাঁদা-পানি তরুর কামিজের এক পাশে লাগলো। পানির ছিটা বিন্দু বিন্দু হয়ে দুই হাতে পরেছে।
এমন পরিস্থিতি তে রাগ না লাগলে ও রাগ লাগার কথা। বাইক টা অনেক দূরে চলে গেছে। রেডিয়াম কালারের হ্যালমেট পরা ছিল লোক টা।
ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে মুছতে মুছতে রাস্তা পার হবার জন্য দুই দিকে তাকিয়ে দেখলো। সাঁই করে আবার বাইক টা ফিরে এসেছে।
লোকটা বাইক থেকে নেমে হ্যালমেট খুলতে খুলতে বললো-
– সরি আমি খুব সরি। সামনের দোকান থেকে পানির বোতল আনতে গিয়েছিলাম। এইনিন খুব বেশি নোংরা হয়নি। সবুজ কালারের জামা তো তাই কাঁদার দাগ খুব একটা পরিষ্কার না।
তরুর ইচ্ছে করছিল কয়েক টা কাঁটা কাঁটা কথা বলে দেয়ার। কিন্তু আজকে বলার মুড নেই। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাবার বাসায় যেতে হবে। মেহমান আসবে,সেখানে গিয়ে ও রাজ্যের ঝামেলা পোহাতে হবে। রান্নাবান্নায় হাত না লাগালে মা,ভাবি একা কুলিয়ে উঠতে পারবে না। তার মাঝে এটা তার প্রথম বিয়ে নয়,যে বান্ধবীরা তাকে নিয়ে রং তামশা করবে।
মাঝেমধ্যে মনে হয় বিয়ে টা না করলেই জেনো জীবন বেঁচে যায়। দিনের শেষে মনেহয় নিজের কিছু কথা থাকে,ভরসা করার মতো একটা কাঁধ লাগে। বেঁচে থাকার জন্য খুব মাঝেমধ্যে, কোন এক দিন একটা মানুষের জন্য সাজুগুজু করে বসে থাকালাগে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একটা বিশেষ মানুষ কে জিজ্ঞেস করার খুব ইচ্ছে জাগে –
‘আমাকে কেমন লাগছে?’
নিজের ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে তরু অনুভব করলো তার মেজাজ কেমন জানি ফুরফুরে হয়ে গেছে। এই লোকটার সাথে কথা বাড়াতে ইচ্ছে করছে না।
তরু খুব অমায়িক স্বরে বললো –
– পানি লাগবে না, পরিষ্কার করেছি।
আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
– আমি আবির,একটা মাল্টিনেশনাল কোম্পানিতে জব করছি।
– ও আচ্ছা।
– আপনাকে একটা অটো ডেকে দেই,কোথায় যাবেন?
– না,না কোন প্রয়োজন নেই।
– আপনার দেরি করিয়ে দিলাম তো।
– যা দেরি করিয়েছেন তো করিয়েছেন,এখন তো আরও বেশি দেরি হচ্ছে।
কথা শেষ করে হাত ইশারা একটা অটো থামি,অটোরিকশায় চেপে বসতে বসেত তরু বললো-
– পানির বোতল টা দেন,আবির সাহেব।
আবির চলে গেল তার গন্তব্যে।
তরু অফিসে পৌঁছে দেখলো থমথমে অবস্থা। পনেরো মিনিট লেট। দারওয়ান এসে বলল –
–
ম্যাডাম স্যার আপনাকে যেতে বলেছেন।
তরু ভেবেছিল দুপুরের দিকে ছুটির দরখাস্ত দিবে। সবশেষ, কাজ হবে না ফুল টাইম ডিউটি শেষ করে যেতে হবে। কোন এক ফাঁকে বাবা কে কল দিয়ে জানিয়ে দিতে হবে, পাত্র পক্ষ কে বলতে, জেনো রাতের দিকে আসে।
কপাল জুড়ে চিন্তার ভাঁজ নিয়ে,স্যারের রুমে ঢোকল।
– আসসালামু আলাইকুম স্যার।
– আপনার বাবা এসেছিলেন কিছুক্ষণ আগেই গেলেন। যাবার আগে ডকুমেন্টস গুলো রিয়াদ সাহেব কে মেইল করে দিয়ে যাবেন।
আর বেস্ট অফ লাক।
তরুর মাথা থেকে একটা পাহাড় সমান বোঝা নেমে গেল,অনুভব করছে।
– স্যার চা /কফি কিছু দিতে বলবো?
– আদা চা।
– ঠিক আছে স্যার।
কাজ হ্যান্ড ওভার করে অফিস থেকে বের হতে দুপুর দুইটার ও বেশি হয়ে গেছে। শীতে রোদ অথচ গা জ্বলানো রোদ।
তরুর রিকশা এসে থেমেছে একদম বাসার গেইটের কাছে। গেইটে নতুন রং করা হয়ছে আব্বা বলেছি। রংটা এতো চমৎকার ফুটে উঠেছে আব্বার কথায় বুঝতে পারেনি। কলো রং,উপরের তীরের মতো কাটা গুলো সোনালী রংয়ের। তার মাঝে মাধবীলতা ফুল গাছ ভর্তি ফুল এসেছে। গাছের অর্ধেক অংশ গেইটের বাহির চলে এসেছে।
ভাড়া দিয়ে সোজা রান্না ঘরে ঢোকল তরু।
ভাবি বললো-
– তুমি রান্নাঘরে কে?ন যাও ফ্রেশ হও। তোমার ভাইয়া কি যে সুন্দর তিনটা শাড়ি এনেছে। না দেখলে অনুমান করতেই পারবে না। যাও যাও ফ্রেশ হও রান্নাবান্না শেষ। তুমি শাড়ি পরলে আমি পরতে পারি। আমার তো আর তর সইছে না।
– আহাঃ আবার নতুন শাড়ির কি দরকার বলো তো ভাবি। শুধু শুধু অকারনে কতগুলো টাকা খরচ। আমি তো শাড়ি নিয়ে এসেছি।
– বেশি কথা বলো না। এমন শাড়ি ঈদে পর্বে পাওয়া যায়। বছরের মাঝামাঝি তে এমন এক্সপেনসিভ শাড়ি পাওয়া কল্পনাতীত,ননদিনী। তুমি অনুমান করতে পারছো না তোমার ভাই কি জিনিস নিয়ে এসেছে।
এর মাঝে তরুর ভাই তানভীর এসে রান্না ঘরে এক চক্কর দিয়ে গেল। আবার এসে তানভীর জিজ্ঞেস করলো কি কি রান্না হয়েছে,বলেই সব গুলো খাবারের ঢাকনা সড়িয়ে দেখতে লাগলো।
তরু কে বললো-
– সবই ঠিকঠাক আছে তোর হাতের স্পেশাল আলুর চপ ছাড়া মণ্ডা-মিঠাই, তেহারি-বোরহানির স্বাদ মাটি।
ভাবি তানভীরের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললো-
– তুমি এখন আর ঝামেলা করো না তো। তরু অফিস হয়ে এসেছে। একটু পরে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।
-আরে ভাবি সমস্যা নেই। আলুর চপ আর কি কঠিন কাজ। আলুসিদ্ধ করা তো আছেই। টোস্ট বিস্কুটের বয়াম টা কোথায়?
বিস্কুট গুলো গুড়ো করে । ডিম টা ভেঙে ফেটে নিল। আলু খোসা ছাড়িয়ে সাথে শীতের নতুন ধনেপাতা আর কাঁচা,মরিচ,পেঁয়াজ,লবণ দিয়ে মাখার সাথে সাথে এতো লোভনীয় ঘ্রাণ বের হলো।
তরুর মা বললো-
-এখান থেকে একটু খানি আলু ভর্তা তুলে রাখিস, রে তরু।
আলু ভর্তা একটা বাটিতে তুলে রেখে। চপের জন্য রাখা আলুর ভর্তায় ফেটে রাখা ডিম টা হাত দিয়ে অল্প অল্প করে দিয়ে আবার চটকে নিল। অল্প অল্প করে চপ গুলোর খামির ডিমের আকৃতি দিয়ে টোস্টের গুড়ায় চেপে চেপে গড়িয়ে তেলে ভজে একটা সার্ভিং ডিশে তুলে রাখতে রাখতে বললো –
– ভাইয়া খাও তোমার প্রিয় আলুর চপ। একটু ক্যাচাপ দিব?
গরম গরম একটা চপ মুখে দিতে দিতে তানভীর বললো-
-অমৃত,অমৃত এই না হলো আলুর অথেন্টিক চপ। সেদ্ধ ডিম ভেতরে দিয়ে উপরে আলুর খামির কে কি চপ বলে রে?
তোর ভাবি কে শিখিয়ে দিস তো,আলুর চপ কি ভাবে বানাতে হয়। আলুর চপ বললেই তোর ভাবি,বেসনের গুলায় আলুভর্তা চুবিয়ে গরম তেলে ছেড়ে দেয়। এটা তো আলুনি হয়ে যায়।
ভাবি তরু কে ডেকে বললো –
-যাও এবার গিয়ে,ফ্রেশ হয়ে শাড়ি টা পর।
তানভীর ফুঁড়ন কেটে বললো-
– তরু তারাতারি শাড়ি টা পর। তুই শাড়ি পরছিস না বলে তোর ভাবি ও পরতে পারছে না। যার কারনে ফেইসবুকে এখনো কোন স্টরি দেখতে পারছি না।
– শোন তুমি আমার সাথে একদম সেধে-সেধে ঝগড়া করতে এসো না।
– ঝগড়া করলাম কোথায়! পারুল শোন শাড়ি পরে স্টরি দিও সাথে কোন গান দিও না তো। স্টরি নিরিবিলি দেখার জিনিস। ঝনঝন করে গান বেজে উঠলে দেখার মুড থাকে না।
– তরু,দেখো তোমার ভাই কিন্তু সেধে -সেধে ঝগড়া লাগছে। তুমি সাক্ষী রইলে।
-আরে ভাইয়া তোমার কি আর কোন কাজ নাই? ভাবির সাথে খোঁচাখুঁচি করা ছাড়া।