3.2 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৩, ২০২৫

পিংকি প্রমিজ!

পিংকি প্রমিজ!
পিংকি প্রমিজ

বিকালবেলা বিছানায় লেপের তলায় আধাশোয়া হয়ে চায়ে চুমুক দিচ্ছিলাম। দখিনা তার মগে আইস্ড কফি বানিয়ে এনে পাশে বসে স্ট্র দিয়ে আয়েশ করে টানতে লাগলো।

জিজ্ঞেস করলাম, কেমন হইছে রে?

- Advertisement -

– ইয়াম্মী!

– দে তো দেখি এক সিপ?

সে দ্বিধাগ্রস্ত হাতে মগটা এগিয়ে দিলো।

আমি মুখটা বাংলা পাঁচের মতো করে, যেন বিশ্রী তেঁতো  কোনো ওষুধ খেতে যাচ্ছি; এমন ভংগিমায় গায়ের গেন্জির কর্নার দিয়ে স্ট্র মুছতে থাকি।

দখিনা হেসে বলল, বাবা!

– একটু ভালো করে মুছে নিচ্ছি, তোর থুথু থাকতে পারে

– তুমি আমার মুখ থেকে ফেলা জিনিস খাও, আমার হাজারটা এঁটো জিনিস খাও, এঁটো আইসক্রিম খাও না? এখন ঢং করতেছো?

সে আমার কীর্তি দেখে বেশ মজা পাচ্ছিলো। স্ট্র দিয়ে এক সিপ কফি টেনে মগ হাতে টিভির দিকে চেয়ে খবর দেখার ভান করতে থাকি।

সে ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কফি কেমন হইছে বাবা?

– ঠিক বুঝলাম না, আরেকটু খেতে হবে..

– তোমার ট্রিকস কিন্তু আমি জানি!

– দাঁড়া, থার্ড সিপ না নিলে আসলে বোঝা মুশকিল..।

আমার তৃতীয় দফার টান আর শেষই হচ্ছে না দেখে সে জোর করে মগ কেড়ে নিয়ে তাকিয়ে বিশ্ময়ে বলল- অর্ধেক শেষ!

সে কফি হাতে পালালো।

.

একটু চোখ বুজতে না বুজতেই দেখি আমার গায়ের ওপর, লেপের তলায় দখিনা। আমার বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে। ভাগ্য ভালো মেয়েটা শুঁটকি টিংটিঙে তালপাতার সেপাই। আন্ডার ওয়েট। গায়ের ওপর শুইলে কিছু মনেই হয় না, মশার মতো। আল্লাহ বাঁচাইছে নাদুসনুদুস না।

কিছুক্ষণ পর আস্তে, নরম গলায় আহলাদ করে ডাকলো, বাবা!

– হু

– ঘুম?

– না

– একটা কাজ করতে পারবা?

– বল

– প্রমিজ করো, এখুনি করবা? বলবা না যে ‘পরে’

– চেস্টা করবো

– পিংকি প্রমিজ করো?

– বল তুই আগে?

সে জোর করে তার কেনি আঙ্গুলের সাথে আমার কেনি আঙ্গুল আংটার মতো বাধিয়ে বলল, পিংকি প্রমিজ করে বলো কাজটা করবা?

– মা রে, বাংলাদেশে কেনি আঙ্গুল এর সাথে কেনি আঙ্গুল ঠেকানো মানে কোনো প্রমিজ না; আড়ি নেওয়া

– মানে?

– মানে সম্পর্ক কাট অফ করা, উল্টা

– এটা কি বাংলাদেশ?

– আচ্ছা যা, পিংকি প্রমিজ; কাজটা করবো

– আমার ঘরে একটা মশা

– শীতকালে মশা?

– হু, মারবা? মশার মতো একটা পোকা জানালায়!

আমি পোকা মেরে আসার পর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ গলা জরিয়ে ধরে বলল, আমি ছোটকালে কী ভাবতাম জানো বাবা?

– কী?

– কাউকে বলবা না কিন্তু!

– ওকে, কাউকে বলব না; পিংকি প্রমিজ!- বলে আমার কেনি আঙ্গুল এগিয়ে দেই।

– ছোটকালে ভাবতাম আমি মশাদের আম্মু!- [সে ফিসফিস করে বলতে থাকে]

– মানে!

– ভাবতাম মশা মানুষের ব্লাড খেয়ে এগ তৈরি করে। তাই যখন মশা কামড়াতো, ভাবতাম আমি মশার বাবুদের আম্মু হবো!

– ধ্যাত! কি সব আজগুবি কথা.. এসব কে শেখায় তোকে?

– বিত্ত বলতো

– ঐ ফাজিলের কথা বাদ দে..

– বাবা

– বল

– এইটা ডিসেম্বর

– তো?

– তারপর জানুয়ারী

– তো?

– জানুয়ারী তে কী বলো তো?

– কী?

– জানুয়ারী তে কে হইছিলো?

আমি না বুঝার ভান করি।

আমার সোনামণিটা জানুয়ারীতে দুনিয়ায় মুখ দেখেছিল। টরন্টো শহরে। তখন নতুন এসেছি এ দেশে। কি এক অবর্ণনীয় কষ্টের মাঝে তার জন্ম! কোনো কুল-কিনারা পাচ্ছিলাম না; সামনে শুধু ছিল অনিশ্চয়তা আর লক্ষ্যহীন ভবিষ্যত। দিশেহারা। আমাদের সহায়সম্বল ছিল শুধু আদরের ধন বাচ্চা দুটো। তারাই ছিল আমাদের বেঁচে থাকার প্রেরণা।

হঠাৎ তার নি:শ্বাস ভারী হতে থাকে।

ঘুমিয়ে পড়ে আমার কোলের মধ্যে।

 

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles