
প্রতিদিন বিকেলে সমুদ্রের হাওয়া খেতে গেলেও সমুদ্রের অবস্থা দেখে মন খারাপ হয়েছে। প্রকৃতির সাথে সাথে সমুদ্রও নোংরা হয়ে গেছে। উইড ভেসে ভেসে আসছে স্রোতের সাথে। অনেকটা জায়গা জুরেই উইড । এতো দেশ ঘুরেছি এতো সমুদ্র দেখেছি নেমেছি সাতার কেটেছি । কিন্তু এমন নোংরা অবস্থা আমি কখনো দেখি নি। কিন্তু সমুদ্র সৈকত ছিলো পরিচ্ছন্ন । চারপাশে আরাম দায়ক চেয়ার পাতা। রাতের বেলা এখানকার কর্ম চারীরা উইড পরিস্কার করে সৈকত টাকে পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করে। পরে জানতে পারলাম ইদানিং এমন উইডের উৎপাত শুরু হয়েছে আগে এমনটি ছিলো না। ওদের কথাটা বিশ্বাস যোগ্য মনে হলো কারন আমরা যখন” মায়া রিভারা” গিয়েছিলাম তখন সমুদ্রের পানি ছিলো সচ্ছ সুন্দর। আমি প্রতিদিন সমুদ্রে সাঁতার কেটেছি । কিন্তু এখানে আমার একদিনও সমুদ্রে নামতে ইচ্ছে হয় নি। তারপরও অনেক আনন্দ করেই বিদায় নিলাম “ পুন্তা কুনা” থেকে কিন্তু ফেরার সময় মনে হয়নি , আবার আসবো একবার এখানে। যা কিনা মনে হয়েছে অন্য কোন জায়গা থেকে ফিরে আসার সময়।
আপাতত এই ভ্রমণটাকেই শেষ ভ্রমন হিসাবেই মেনে নিলাম। ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যৎ বলবে।
শুধু দুঃখ হয় পৃথিবীর কতো দেশে ঘুরলাম, কতো দেশে বসবাস করলাম অথচ নিজের দেশটি দেখা হলো না ঠিক করে। ছাত্র বয়েসে বিয়ে হয়ে বিদেশ যাত্রা । নিজের দেশে একদিনের জন্যও সংসার করা হয় নি। দেশে যখন যাই কারো না কারো উপর নির্ভিরশীল হতে হয়। যে দেশে জন্ম গ্রহন করেছি যে দেশে বড় হয়েছি সে দেশটি এখন বড্ড অচেনা লাগে। যার ফলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও দেশটাকে আমার ঘুরে দেখা হয় না। প্রতিবারই ভেবে যাই , এবার অনেকটা ঘুরে আসবো কিন্তু নানা কাজে সময় চলে যায় । দেশ দেখা আর আমার হয় না।
কবি গুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর আমার প্রানের কবি। কবি গুরুর গানে আমি খুঁজে পাই আমার শান্তি, দূর হয় আমার ক্লান্তি, আমি খুঁজি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে আমার বিরহে, আমার আনন্দে, আমার ভালোবাসায় । অথচ শান্তি নিকেতন আমার দেখা হয় নি। দেখা হয়নি জোরা সাকোর ঠাকুর বাড়ি । আরো কতো কতো কিছু আমার দেখার বাকি। আমার নিজেকে একজন খুব দুরভাগ্যবান নারী মনে হয়। এবার দেশে গেলে সব কিছু দেখে আসার ইচ্ছে যদি সৃষ্টি কর্তা সহায় থাকেন। পরিশেষে কবি গুরু রবীন্দ্র নাথের কবিতা দিয়েই বলতে ইচ্ছে করছে…
বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে, বহু ব্যয় করি,
বহু দেশ ঘুরে ,দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শীষের উপরে
একটি শিশির বিন্দু।
প্রথম ফ্লাপের কথা।
কুমিল্লা জেলা শহরে আমার জন্ম। সে শহরের শান্ত আলো বাতাসে আমি বেড়ে উঠেছি । স্কুল জীবনের উচ্ছলতা, কলেজ জীবনের আনন্দঘন দিনগুলো কাটিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকো্ত্তর ডিগ্রি অর্জন করি। জীবনের অধিকাংশ সময় প্রবাসে বাস করলেও আমার ভাবনা, কল্পনা, এবং স্বপ্নের সব কিছুই বাংলাদেশকে ঘিরে। বাংলাদেশের মাটির গন্ধে বারবার ফিরে আসি বাংলাদেশে। বাস্তব জীবনে চলতে চলতে অনেক কিছুই মনের ভেতর গেঁথে যায় । কখনো কখনো মন প্রতিবাদী হয়ে ওঠে । নানা রকম প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। সে ভাবেই নানা ধরনের লেখা লিখি থাকি। নানা প্রকাশনী থেকে আমার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। ২০১১ তে ‘ নির্বাকের বাক্যালাপ , ২০২১ সে আকাশের ওপারে আকাশ, ২০১৪ তে মেঘের ভেলায় ভেসে, ২০১৮ তে জীবনের বর্ণ মালা.২০২২ সে বেলা শেষের ডায়েরি । এবার যাচ্ছে আমার, “ ঘর বেঁধেছি নানা দেশে”।
তাসরীনা শিখা সুদীর্ঘ দিন থেকে দেশের বাইরে বসবাস করছেন। নানা দেশে তার বসবাস নানা দেশে ভ্রমণ তার মধ্যেও রয়েছে বাংলা এবং বাঙালীদের প্রতি হৃদয়ের টান । প্রবাস জীবনে বসে দেশে, এবং প্রবাসের নানা দেশের নানা পত্রিকাতে নানা ধরনের প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস , কবিতা তিনি লিখে চলেছেন। তাসরীনা শিখার, “ ঘর বেঁধেছি নানা দেশে” বইটিতে তাঁর নানা দেশে বসবাস করা এবং ভ্রমন করার গল্প তুলে ধরেছেন। তার এ্রর মধ্যে পাঠকরা তার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবেন। পৃথিবীর বহু দেশে অস্থায়ী ভাবে বসবাস করার পর ১৯৯৪ সালে তিনি ক্যানাডার টরোন্ট শহরে স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন।
ম্যাল্টন, কানাডা