-5 C
Toronto
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫

সাতকাহন

সাতকাহন
সাতকাহন

এক. মুলত দুটো প্রধান কারণে বাংলাদেশের মানুষ ভারতে যায়। চিকিৎসা ও ভ্রমণ। ব্যবসার কারণেও যায় তবে সেটার সংখ্যা কম।

ভারতের বিজেপি সংঘর্ষ সমিতির লোকেরা বলেছে বাংলাদেশের মানুষকে হোটেল দিবে না এবং তাদের পতাকাকে নমস্কার না করলে চিকিৎসা দিবে না।

- Advertisement -

দুটো বক্তব্যই চরম বিদ্বেষপ্রসূত হলেও আমি মনে করি বাংলাদেশের জন্যে ভাল খবর। বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্হার দিকে সিরিয়াসলি নজর দেবার সময় এসেছে। আমাদের দেশের চিকিৎসকরা ভারতের চেয়ে কম জ্ঞানী নন। কিন্তু এক শ্রেণীর অর্থ ললুপ মানুষের জন্যে চিকিৎসা ব্যবস্হা চরম অরাজকতাপূর্ণ। সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে।

আর বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ আছি আমরা যারা এখনো বাংলাদেশটাকেই ঠিকমত ঘুরে দেখি নাই। পাশে রয়েছে নৈসর্গিক নেপাল, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড। দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্হা ও পর্যটন শিল্প উন্নত করলে, চিকিৎসা ব্যবস্হা দুর্নীতিমুক্ত ও সহজলভ্য করলে দেশের মানুষের ভারত যাবার প্রয়োজন হবে না। এর জন্যে প্রয়োজন একজন জাতীয়তাবাদী নেতার মন্ত্রমুগ্ধ বাঁশির হুইসেল।

অবশ্য আরো একটি বিষয় রয়েছে তা হলো, দেশেই পিঁয়াজ, রসুন, আলু মরিচের উৎপাদন বাড়ানো।

ভারতের উপর নির্ভরশীলতা যত কমাতে পারবো ততই আমাদের উপর তাদের খবরদারী কমে যাবে। দেশকে আত্মমর্যাদাশীল করতে এবং কোটি কোটি বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে চিকিৎসা ব্যবস্হা, পর্যটন শিল্প এবং কৃষি উৎপাদনে নজর দেবার এখন সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সময়।

দুই. ‘বাংলাদেশে হিন্দুদের মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে’—এমন দাবি জানিয়ে একটি ভিডিও ফুটেজ নিজেদের এক্স অ্যাকাউন্টে প্রচার করেছে সংবাদমাধ্যম আরটি ইন্ডিয়া। এ বিষয়ে ফ্যাক্ট চেক বা তথ্য যাচাই সংস্থা রিউমার স্ক্যানার জানিয়েছে, এ তথ্য সঠিক নয়। আর ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় বরং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের।

কল্পনা করা যায় কত বড় ভয়ংকর চক্রান্ত চলছে বাংলাদেশকে নিয়ে?

তবে ভাল খবর হলো বাংলাদেশের হিন্দু ভাইয়েরা অনেকেই বিষয়টা বুঝতে শুরু করেছেন। ফলে গতকাল ঢাবির জগন্নাথ হলের একদল ছাত্র মিছিল নিয়ে আগরতলায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত রাজু ভাস্কর্যের সমাবেশে যোগ দেয়।

এভাবে ভারতীয় ও এদেশীয় চক্রান্তকারীদের রুখে দিতে বাংলাদেশের সকল ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

কারণ সত্যিই যদি কখনো কোন কারণে বাংলাদেশ যদি বহিঃশত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হয়, সে সময় আজকের উস্কানিদাতারাও রেহাই পাবেন না। ঠিক যেমনটি দেশে ভুমিকম্প বা সাইক্লোন হলে ধনী গরীব, হিন্দু মুসলিম সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অবশ্য কেউ কেউ রেহাই পেতে পারেন যদি তারা পাকিস্তানি হানাদারদের মত ভারতীয় হানাদারদেরকেও লুঙ্গী খুলে দেখানো শুরু করেন।

তিন. ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা, বাংলাদেশের পতাকায় আগুন দেয়ার তীব্র নিন্দা জানাই। এর সম্পুর্ণ দায় ভারত সরকারের। তাদের দায়িত্বহীন বক্তব্যে ও উস্কানিতেই ভারতের সাম্প্রদায়িক জংগীরা এই জঘন্য কর্মকান্ডের সাহস পেয়েছে। ভারত সরকার বাংলাদেশে দীর্ঘদিন একটা অগনতান্ত্রিক ও ভুয়া নির্বাচনী ব্যবস্হা টিকিয়ে রেখে নিজেদের যে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আধিপত্যবাদ বাংলাদেশে কায়েম করেছিল তা গত ৫ই আগষ্ট ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানে এক লহমায় উড়ে যাওয়ায় সম্পুর্ণভাবে হতবিহবল হয়ে পড়েছে। কিন্তু তাদের জানা উচিত, কোন ভাবেই শেখ হাসিনার সরকারকে তারা আর ফেরত আনতে পারবে না। এমনকি কোন কারণে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হলেও শেখ হাসিনা আর আসবেন না, এটাই বাস্তবতা। এই দেশের অধিকাংশ মানুষ এখন শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ থেকে ফোকাস ভারতের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। মুষ্টিমেয় কিছু সুবিধাভোগী ছাড়া দেশের সিংহভাগ মানুষ এখন ভারতকে ঘৃণা করে। মুম্বাই, আগরতলা সহ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশের পতাকা পুড়ানো এবং হাই কমিশনে হামলা করে এই ঘৃণা আরো তীব্র থেকে তীব্র হবে, কোনভাবেই কমবে না। এতে ভারতের যা ক্ষতি হবে তার তুলনায় বাংলাদেশের ক্ষতি হবে খুবই নগন্য।

নীচের ছবিটি আজ টিএসসি থেকে তোলা। যে দল বিগত ষোল বছর দাপটের সাথে ক্ষমতা চালিয়েছে, আজ তার ছিটেফোটাও ঢাবি ক্যাম্পাসে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই ছবিই তার প্রমাণ। অতএব ভারতের উচিত কাল বিলম্ব না করে বাস্তবতা মেনে নেয়া এবং বাংলাদেশের সাথে সমমর্যাদার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিস্হাপন করতে এগিয়ে আসা।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles