3.2 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৩, ২০২৫

আমাদের ছেড়ে চলে গেলো

আমাদের ছেড়ে চলে গেলো
আমাদের ছেড়ে চলে গেলো

অবাক লাগে আমার মায়ের ৪ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট আমার একমাত্র বোন এমন আচমকা আমাদের ছেড়ে  চলে গেলো। কখনো এমনটা ভাবিনি। যাবোতো সবাইসবার বড় বলে আমারই প্রথমে যাওয়ার কথা!  তার কিছুটা চড়া ডায়াবিটিস ছিলো ঠিকই,তাই বলে ৪ দিনে মারা যাবে কি ভাবে!  তা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। হঠাৎ পা কিছুটা ফুলে উঠে ছিলো,মাথা ঝিমঝিম করে চক্কর দিচ্ছিলো,মাটিতে বসে পড়ড়ে ছিলো সে।

তখনি ভয় পেয়ে তার ছেলে মেয়ে আর স্বামী বাড়ির পাশের ১০ তলা কুখ্যাত ইসলামীয়া নামের এক হাসপাতালে নিয়ে গেলে তারা চেকআপের জন্যে ভর্তি করে নেয়। চট্টগ্রামে আমার যে একজনই ছোট ভাই থাকে নাম তাার  সৈয়দ আকতার এককালের দেশ চেম্পীয়ান বেডমিন্টন খেলোয়াড়। নিজ আবাসের পাশে হেলথ পয়েন্ট হাসপাতালে কেবিন বুক করে ছুটলো সেই হাসপাতালে বোনকে নিয়ে আসতে।

- Advertisement -

সেই হাসপাতাল জানালো-নিয়ে গেলে নিজ দায়িত্বে নিয়ে যান। পথে যদি কিছু হয় আমরা দায়ী থাকবো না। বরং একরাত এখানে থাকুক চেকআপ হোক,কাল অবস্থা বুঝে নিয়ে যাবেন। বোন ভাইকে হাসতে-হাসতে বল্লো – ভাই ,এমন কিছু না! চিন্তা করবেন না। মাঝে মধ্যে সুগার ফল করলে এমনটা হয়। ভাই,আমাকে চা এনে দাও না! খুব খেতে ইচ্ছে করছে।

ভাই বলে  একটা রাত থাক বোন এখানে কাল তোকে নিয়ে যাবো বাড়ির পাশের হাসপাতালে। তখন চা,পান,বিরিয়ানী যা চাইবি এনে হাজির করবো। ওকে রেখে সবাই চলে এলো। রাতে কি এমন অবস্থা খারাপ হলো যে ১১ হাজার মূল্যের লাইফ সেভিং ইঞ্জেকশান দিতে হলো। সেই থেকে বোনটি অজ্ঞান। সকালে ভাই গিয়ে দেখে বোনকে আই সি ইউতে  নাকে মুখে নল ঢুকিয়ে অচেতন অবস্থায় শুইয়ে রাখা হয়েছে। ভালো করে কিছু বোঝার আগেই আরেক রাত পার।

এবার আনা হয়েছে লাইফ সাপোর্টে। পরের রাত ভোর হতেই হাসপাতাল কতৃপক্ষ জানালেন – আপনাদের রোগী মারা গেছেন,বডি নিয়ে যান। আমাদের হাসপাতালের সুনাম আছে আমারা মৃত্য রোগী লাইফ সাপোর্টে রেখে বিল বাড়াই না। আমাদের প্রাপ্তী যে বড় অংকের বিল এসেছে সেটাই পরিশোধ করলে চলবে। দেশ থেকে এতদূরে খবরটি পেয়ে আমি হতবাক! এ কেমন দেশ?

গোটা বাংলাদেশের ছোট বড় সব শহরেই ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা এ কেমন হাপপাতাল! এতো রোগীকে সুস্থ করার জাগায় পাঠিয়ে দেয় মৃত্যুপাতালে। কাকে বলবো! বলেই বা আর কি হবে! প্রায় প্রতি বছর জানুয়ারীর দিকে দেশে যাই।  যদি ও থাকি ৩ মাস ঢাকায়। অতিকষ্টে সময় বের করে ৩ দিনের জন্যে বাড়ি যেতাম চট্টগ্রামে মা,ভাই,বোনের সাথে দেখা করতে।

যদিও গতবছর ডিসেম্বরে মাও চলে গেছেন। মাত্র্র তিন দিন খুবই অল্প সময় । মা থাকতে দুই তিনবার বুকে জড়িয়ে কাঁদলেই টাইম শেষ হয়ে যেতো। এরই মধ্যে তবুও ঘন্টা খানেক সময় বের করে বোনের বাড়ি যেতাম। একমাত্র ছোট বোন সে আনন্দে দিশাহারা হয়ে উঠতো।

নিজে রেঁধে আমার যত প্রিয় খাবার খাওয়াবে,নাকি প্রাণ ভরে বড় ভাইকে পেয়ে গল্প করবে বুঝতে না পেরে পাগল প্রায় হয়ে উঠতো। এখন সেসব স্মৃতির মাছি হয়ে মগজে শুধু ভনভন করে ঘুরপাক খাচ্ছে। কামনা করি দেশ থেকে দূরে থাকা মানুষের অহরহ যেন এই কষ্ট না হয়।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles