
ভিয়েতনামের প্রভাবশালী শিলপ্পতি ট্রুং মাই ল্যান। ৬৮ বছর বয়সী এই শিল্পপতিকে বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাংক জালিয়াতির দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি এই দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। তিনি তার মৃত্যুদণ্ড এড়াতে লড়াই করছেন। খবর এনডিটিভি ও বিবিসির।
ভিয়েতনামের আইন অনুযায়ী, চুরি হওয়া অর্থের ৭৫ শতাংশ পরিশোধ করলে তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। আর এ কারণে অভিযুক্ত ল্যান তার আত্মসাৎকৃত ১২ বিলিয়ন ডলারের তিন-চতুর্থাংশ অর্থাৎ ৯ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের চেষ্টা করছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, হো চি মিন সিটির একটি বাজারে ট্রুং মাই ল্যান একজন বিক্রেতা হিসেবে তার যাত্রা শুরু করেন। সেখানে তিনি তার মায়ের সাথে প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রি করতেন। ১৯৮৬ সালের অর্থনৈতিক সংস্কারকে পুঁজি করে তিনি তার ব্যবসা সম্প্রসারিত করেন। এরপর ১৯৯০ এর দশকে হোটেল এবং রেস্তোরাঁ ব্যবসার মাধ্যমে তিনি তার ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেন। যখন তিনি ভ্যান থিন ফ্যাট গ্রুপের চেয়ারম্যান হন, তখন তার রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য বিশাল ছিল এবং এই সেক্টরে তার উল্লেখযোগ্য প্রভাব ছিল।
২০২২ সালের অক্টোবরে গ্রেপ্তারের পর ট্রুং মাই ল্যানের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড সবার সামনে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। প্রসিকিউটররা জানান, তিনি গোপনে দেশের পঞ্চম বৃহত্তম ঋণদাতা সাইগন কমার্শিয়াল ব্যাংক (এসসিবি) নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন।
২০১২ থেকে ২০২২ এর মধ্যে শেল কোম্পানি এবং তৃতীয় পক্ষকে ব্যবহার করে ল্যান জাল ঋণের আবেদনের মাধ্যমে বিশাল আর্থিক জালিয়াতির পরিকল্পনা সাজান। এই স্কিমের মাধ্যমে তিনি প্রায় ১২.৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেন। প্রসিকিউটররা অনুমান করেছেন যে, তার জালিয়াতি থেকে মোট ক্ষয়ক্ষতি ২৭ বিলিয়ন ডলারের মতো হতে পারে, যা ২০২২ সালে ভিয়েতনামের জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশের সমান।
তরে এই প্রতারণার ফলে হাজার হাজার সাধারণ নাগরিক তাদের সারা জীবনের সঞ্চয় হারিয়ে ফেলে। ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট দেখা দেয় এবং রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় ধস নামে। এই জালিয়াতিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ল্যান এবং তার সহযোগী যেমন সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা, সরকারি কর্মকর্তাদের ৫.২ মিলিয়ন ঘুষ দিয়েছেন- যা ভিয়েতনামের ইতিহাসে রেকর্ড করা সবচেয়ে বড় ঘুষের ঘটনা।
মজার ব্যাপার হলো, এই মামলার প্রমাণ মোট ১০৪টি বক্সে সংরক্ষিত আছে, যার ওজন ৬ টন। এই মামলায় ল্যানের স্বামী, হংকংয়ের একজন ব্যবসায়ী এবং তার ভাতিজিসহ ৮৫ জন আসামি বিচার চলছে। যাদের সবাই নিজেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। চলতি বছরের এপ্রিলে ল্যানকে আত্মসাৎ, ঘুষ এবং ব্যাঙ্কিং বিধি লঙ্ঘনের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
এখন ট্রুং মাই ল্যানের আইনজীবীরা তার মৃত্যুদণ্ড এড়াতে প্রয়োজনীয় ৯ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহের জন্য কাজ করছেন। আর এর জন্য তারা ল্যানের বিভিন্ন সম্পদ বিক্রি এবং বন্ধুদের কাছ থেকে ঋণ চাইছে। এছাড়াও বিলাসবহুল রিয়েল এস্টেট এবং বিভিন্ন অংশীদারি ব্যবসায়ের শেয়ারসহ তার বিভিন্ন সম্পদ বিক্রি করছে।
তার আইনজীবীরা বলেন, ল্যানের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ তার সম্পদ বিক্রির সময় সর্বোত্তম মূল্য নিয়ে আলোচনা করার সুযোগে বাধা দিচ্ছে। কারণ ল্যানের মৃত্যুদণ্ডের আদেশের সুযোগে ক্রেতারা তার সম্পদের ন্যায্য মূল্য দিতে চাইছে না।