-0.8 C
Toronto
বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫

হালকা স্নো পড়া শুরু হয়ে গেছে

হালকা স্নো পড়া শুরু হয়ে গেছে
হালকা স্নো পড়া শুরু হয়ে গেছে

রাত আটটায় চুপি চুপি জামা-কাপড় পরে, জ্যাকেট গায়ে নি:শব্দে বাসা থেকে বের হয়ে এলাম। বাইরে ঠান্ডা প্রায় মাইনাস চার। রাস্তা বেশ পিছলা। নরমাল কেডস পরে বের হয়েছি। তাই সাবধানে হাঁটতে হচ্ছে।

আজ না হাঁটলেই নয়।

- Advertisement -

অনেক্ষন অলসের মতো শুয়ে বসে ছিলাম। লুকিয়ে বের হবার কারন আমার মেয়ে। সে রাতে কারন ছাড়া আমাকে বের হতে দেয় না; তার বাবাকে চোখের আড়াল করতে চায় না। ঠিক দু-তিন বছরের বাচ্চার মতো করবে; যে কিনা ক’মাস পর তেরো হবে!

অবিশ্বাস্য।

সে বেশিরভাগ সময় বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকে।

কিছুক্ষণ পরপর বই পড়া বাদ দিয়ে তার ঘর থেকে নেমে এসে বাইরের ঘরে আমাকে না পেয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজবে। সারা বাড়ি চষে বেড়াবে; বেইজমেন্টেও ভয়ে ভয়ে, সাবধানে স্টেপ ফেলে খুঁজবে আর ডাকবে- বাবা! কোনাকান্চি তে খুঁজে দেখবে কোথাও লুকিয়ে আছি কি না। শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে ফোন দিবে।

ঠিক তাই; মিনিট দশেকের মাথায় উদ্বিগ্ন গলায় ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলো- বাবা তুমি কোই?

– হাঁটতে বের হইছি

– সত্যি করে বলো? [অভিমানে তার গলা ধরে আসছে]

– সত্যি হাঁটতে বের হইছি। তোকে বলিনি; বললে তুই বের হতে দিতি না

– আর কতক্ষণ?

– এই ধর বিশ মিনিট?

– রাতে তোমাকে আর কখনো বের হতে দিবো না। আমাকে না বলে বের হবার শাস্তি!

– হা হা..

– আরেকটু আগে আসবা?

– দেখি..

– প্লিজ বাবা, খুব জরুরী কাজ আছে যে.. প্লিজ?

– কী জরুরী কাজ? [আমি হো হো করে হেসে ফেলি]

– আসো, তারপর বলবো। আসলেই খুব জরুরী!

– ওকে

– আই লাভ ইউ বাবা!

– লাভ ইউ ঠু!

– স্টে সেইফ, ওকে?

সে এখন খুঁজে খুঁজে জরুরী কাজ বের করবে। হয়তো তার স্কুলের কোনো ফর্ম সাইন করতে হবে; কিংবা তার ট্যাব এর ফেটে যাওয়া স্ক্রীন প্রটেক্টর চেন্জ করে নতুনটা লাগাতে হবে। কিংবা কিছুই না। দেখা যাবে আসার পর জড়িয়ে ধরে বলছে- এটাই তার কাছে জরুরী।

বাবার সাথে তার অনেক চালাকি। আমিও কম যাই না।

এগুলো শিখিয়েছি আসলে আমি। যতো মজার উল্টা পাল্টা কাজ, কনফিউজিং কথাবার্তা শেখাই..

হাঁটতে হাটঁতে অনেক দূরে চলে যাই। বিশ মিনিটে ফেরা হবে না। সে কাটায় কাটায় স্টপ ওয়াচের মতো বিশ মিনিট পর ফোন দিয়ে বলবে- আব্বু, বিশ মিনিট তো হয়েই গেলো! আর কতক্ষণ?

হালকা স্নো পড়া শুরু হয়ে গেছে। আর খুব বাতাস। লোকজন খুব কম, অল্প কিছু গাড়ি চলছে। ঠান্ডা জেঁকে বসলো। সাবধান হয়ে যাই। দুই কিলোমিটারও হাঁটা হলো না, বাসার দিকে ফিরতে থাকি।

পকেটে ফোন বাজা শুরু হয়েছে।

এখন ফোন ধরবো না; ঠান্ডার মধ্যে পকেট থেকে হাত বের করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তিন মিনিটের মাথায় বাসায় ঢুকবো। শীত, তুষার, বরফ এসব আর একটুও ভালো লাগে না। যাদের এসব নাই, তাদের কাছে খুব আকর্ষণীয়। আর যাদের আছে, তারা চায় না। প্রকৃতি এই এক অদ্ভুত খেলা চালায় মানবজাতির সাথে।

আমি আবারো হুডির নিচে মিটিমিটি হাসতে থাকি।

আমার বুড়িটা!

কানে বারবার বাজতে থাকে- “বাবা, স্টে সেইফ, ওকে?”

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles