
আমাদের কানাডার ১৮ বছরের বসবাসের জীবনে হাতে গুণে বলে দিতে পারব চার-পাঁচবারের বেশি হবে না কারোর বাসায় ঘুরতে বা দাওয়াতে গেছি।এ বিষয়টা এড়িয়ে চলি। কারণ আমরাই সময় করতে পারি না। বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। আর সমালোচনার ফাঁদে পড়া লাগে।
গতকাল একটা বাঙালি ভাইয়ের বাসায় গিয়েছিলাম। আপা আমাদের আশেপাশের এলাকার। যশোরের মেয়ে। অবশ্য একটা কাজে গিয়েছিলাম ওনাদের বাসায়। তো আপা মানে ঐ ভাইয়ের বউ উনি খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেক রকম খাবার রেডি করে সামনে দিলেন পরম আন্তরিকতায়।
যদিও কানাডিয়ান স্টাইলে কাউকে এভাবে আপ্যয়ন করা রীতি নেই। এখানে আবার বাঙালিরা বহু সংখ্যক গেস্ট দাওয়াত দেন, পর্যায়ক্রমে সকলের বাড়িতে সকলের দাওয়াত চলতে থাকে। এটা বেশিরভাগ বাঙালির রেওয়াজও বলা যায়। তবে আমরা এই চক্রের বাইরের মানুষ। আমাদের মতো আছেন কেউ কেউ খুঁজলে পাওয়া যাবে।
জগতে সবাই তো এক রকম হবে না। যে যার মতো বা যে কাজে আনন্দ পান আর কি।
একদিন আগে বাচ্চাদের জন্য চিকেন-এগ-ভেজিটেবল দিয়ে ফ্রাইড রাইস রান্না করেছিলাম। আমি জানি আমার বাচ্চারা বেশি খাবে না, husband একেবারেই খাবেন না। আর আমি ডায়েট করার জন্য একবার এক কাপের কম রাইস খাই। কিন্তু রান্না যখন করি দশজন খেতে পারে।
আমি আবার একটু ভিন্ন চিন্তায় আবিষ্ট। বাসায় বেশি করে রান্না করি। তারপর হোমলেস হোক, নিচের বেসমেন্টের ট্যানেন্ট হোক বা ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের সঙ্গে শেয়ার করি। অবশ্য বাঙালি কমিউনিটির মানুষ , অন্য কমিউনিটি কখনো কখনো কলিগের জন্য রান্না করে তাদের দিয়ে আসি।
ফ্রাইড রাইসটা রান্না করার পর একজন ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টের জন্য সবার আগে প্যাকেট ভরে রাখলাম। সঙ্গে সালাদ। আরো একজন চাইনিজ কলিগের জন্য রাখলাম। কলিগের জন্য রেখেছি এ কারণে বেশি যে, সে আমার রান্না খাবার পছন্দ করে। আর সে কগনো কখনো আমি না বললেও আমাকে সাহায্যে করতে চেষ্টা করেন।
যাই হোক, আমার husband সেদিন বাসায় আসলে ওনাকে দিয়ে ঐ স্টুডেন্টকে খাবারটা দিয়ে আসতে বললাম। উনি দিতে গেলেন। ঐ স্টুডেন্ট খুব খুশি হলো। সে বলল, “আমার আগামীকাল পরীক্ষা আছে। কিন্তু আমার রান্না করার সময় ছিল না। ”
দেখুন, কাকতলীয়ভাবে কীভাবে ব্যাপারটা মিলে গেল। আমি তো তার জন্য রান্না করি নি। আমি রান্না করেছিলাম তাই তাকে দিয়েছি। আর সে ঐদিকে কীভাবে একটা খারাপ সময় পার করতেছিল। স্টুডেন্টদের অনেক কষ্ট করতে হয়। তারা চাকরি করে। বসায় রান্না করে। কলেজে যায়। পরীক্ষা থাকে ইত্যাদি।
এমন না যে ইচ্ছে করলেই বাইরের খাবার অর্ডার দিয়ে খেতে পারবে বিশেষ করে যারা এখনো পড়ছে। আমি যদি ঐ সময় খাবারটা পৌঁছে না দিতাম হয়তো না খেয়েই থাকতে হতো বা কষ্ট তো কিছু হতো। তার উপকার হয়েছে শুনে কী যে ভালো লেগেছে কী আর বলব।
সে খাবারটা খেয়ে জানিয়েছে তার কাছে নাকি অনেক টেস্ট লেগেছে।
আমি কানেক্ট করার চেষ্টা করি যে আমার রান্না পছন্দ করে তাকে দিতে। আমার চেয়ে ভালো যারা রান্না করতে পারেন তাদের সঙ্গে শেয়ার করলে অবশ্যই তাদের অতটা ভালো লাগবে না। এটা হয় নি, ওটা হলে ভালো হতো ইত্যাদি কমেন্ট থাকবেই।
তো যাই হোক, কারোর বাড়িতে গেলে আপনাকে কীভাবে আপ্যয়ন করবে সেটাই বলে দেয় সেই ব্যক্তির উদারতা।
যদিও আমি কারোর বাড়িতে যাওয়া-আসার মধ্যে নেই, দাওয়াতের মধ্যে আপাতত নেই, সুতরাং আমার কোনো উদারতাও নেই। অনেকেই গালমন্দ করে বলেন, এসব করার জন্য বড়ো একটা মন থাকার দরকার। সবার তো আর সবকিছু থাকে না এটাই হলো কথা।
আল্লাহ আপনাদের সুস্থ রাখুন।
টরন্টো, কানাডা