তোর নতুন বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দে।
– ধ্যাত ফাজলামো করিস না। আবির চাচ্চু আসার পর থেকে এখনো দেখা করিনি। আয় দেখা করে আসি।
তারা কিচেনে গিয়ে বললো-
– মা চাচ্চু খাওয়া দাওয়া করবে?
-হুম।
– দাও খাবার ডাইনিংয়ে রেখে আসি।
ডাইনিং স্পেস আর ড্রইং রুম পাশাপাশি। আবির রিমোট হাতে নাড়াচাড়া করছিল কোন চ্যানেল চেইঞ্জ করছে না।
-আসসালামু আলাইকুম চাচ্চু কেমন আছেন? ও আমার বন্ধু প্রিয়ম।
প্রিয়ম সালাম দিয়ে কথা শুরু করলো-
এইটা, সেইটা অনেক কথা আবির আর তারা চুপচাপ শুনে যাচ্ছে।
প্রিয়ম চলে গেছে,তারা নিজের রুমে আছে।
আবির বললো-
– তরু তানভীর ভাই কে কল দিয়ে বলি রাতে বিয়ের আয়োজন টা করে ফেলতে।
তরু কিংকর্তব্য বিমূঢ় দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তারপর বললো-
– আজ রাতে বিয়ের আয়োজন! কি বলেন এইসব?
– আমাদের আর একে অপরের সম্পর্কে কি জানা প্রয়োজন বলোতো? তাছাড়া বিশাল আয়োজনের কি কোন প্রয়োজন আছে বলো?
– না,না আয়োজন করে বিয়ের বয়স কি আছে বলেন? জানেন আমার বিয়ে টা অনেক আড়ম্বরপূর্ণ ছিল। তারার বাবা হ্যালিকাপ্টারে করে আমাকে নিয়ে গেছে। আমার খুব হাস্যকর লেগেছিল কিন্তু চারপাশের মানুষ তাক লেগেছিল।
তাই এখন আর লোক দেখানো রংচঙয়ে জীবন ভালোলাগে না। ইচ্ছে করে মাটির মতো নিরব হয়ে থাকি। লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা টা-ই জেনো জীবনের সর্বোত্তম পর্যায়।
– তরু,তুমি রাজি আছো কি না বল৷ তুমি কি যে ভাবে চাইবে ঠিক সেই ভাবে আয়োজন হবে। আমি আর দেরি করতে পারছি না। তুমি বললে আগামীকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা বিয়ে।
– আমাকে আরেকটু সময় ভাবতে হবে।
– ঠিক আছে বেশি করে ভাবতে থাকো,আমি আসি।
আবির বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দরজা খুলে হনহন করে হেঁটে চলে গেলো। তরু বুঝ পারছে না এই লোক টা রাগ করে চলে গেলো কি না।
রাতের খাবার খেতে বসে ঢাকনা উল্টে উল্টে দেখছে রাতের ম্যান্যুতে কি কি আছে। এই রকম সে প্রতিদিন-ই করে। প্রথমে দেখলো ডিম ভুনা,ডিমে ভাঁপা,পেঁপে ভাজির সাথে ডিম ভেঙে দেয়া হয়েছে,পাকিস্তানি মুরগী আলু দিয়ে ঝাল ঝোলের উপরে ভেসে আছে ছোট ছোট অপরিপক্ক ডিম যা কুসুম অবস্থায়, একটা পরিপক্ব ডিম তরকারির লাল ঝোলে অর্ধেক ডুবে আছে।
-পারুল,এই পারুল এদিকে দেখে যাও।
-কি হয়েছে বলো।
-ডিমের হ্যান,ডিমের ত্যান মাংসের মাঝে ও ডিম এক কাজ করো আমার জ্বর আসছে। একটা ডিম আমাকে সাপোসিটার হিসেবে দিয়ে দাও।
– আবার ফাজলামো শুরু করেছো।
এমন সময় কলিং বেল ডিং ডং শব্দে বেজে উঠলো। আগের কলিং বেল টা বিকট শব্দে গানের মিউজিক বাজতো মিউজিক শেষ ও কি শেষ রক্ষা হতো,নারী কন্ঠে বলতো প্লিজ ওপেন দ্যা ডোর।
এই ছোট্ট শব্দের কলিং বেল টা তরু-ই এনে দিয়ে গিয়েছিল। তরুর বাবা দরজা খুলে দিল।
আবির এর সাথে ওর বাবা ও এসেছে। হাতে অনেক মিষ্টির প্যাকেটের পরিমাণ দেখে পারুল অনুভব করতে পেরেছে ঘটনা আজ কিছু একটা ঘটে যাবে।
তানভীর খাওয়া রেখে আবিরের কাছে এসে বসতে বসতে বললো-
– আপনারা চলেন ডিনার টা করে ফেলেন, আমার সাথে।
-আজ না অন্য দিন। তানভীর ভাই আপনি খাওয়া শেষ করে আসেন। বিয়ের বিষয়ে কথা বলতে এসেছি।
– সমস্যা নেই,কথা শেষ করেই যাই।
আবিরের বাবা বললো-
-আমরা তো সম্পূর্ণ বিষয় জানি এখানে আর জানা বোঝার মতো তেমন কিছু দেখছি না। বিয়ে টা বরং দ্রুত শেষ করে ফেলাই উত্তম দুই পক্ষের জন্য।
তরুর বাবা বললো –
– বন্ধু তোরা যেদিন বলিস সেদিন ই বিয়ে আমার কোন আপত্তি নাই।
তানভীর বললো-
– আগামীকাল শুক্রবার, কাজী সাহেব কে বলে বিয়ে টা শেষ করে ফেলি। কি বলেন আবির?
– হ্যা আমি ও তাই ভাবছিলাম। কেনাকাটার বিষয় টা সকালের দিকে শেষ করে ফেলতে পারব। কাবিন বিয়ের বাজার আপনারা যেমন নির্ধারণ করবেন তেমনই হবে।
তরুদের বাসায় খুব বেশি সময় থাকেনি আবির। রাত এগারোটার দিকে তরু একবার আবির কে কল দিয়ে ছিল কিন্তু রিসিভ করেনি। তরুর ইগোতে খুব লেগেছে তাই দ্বিতীয় বার কল দেয়নি। অফিসের কাজ করতে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পরেছে।
তারা প্রিয়মের সাথে কথা বলছিল খুব আস্তে আস্তে। কি বিষয়ে কথা হচ্ছে তরু বুঝতে পারছে না।
প্রিয়ম বলছিল-
– ইয়াদ তোকে রিকুয়েষ্ট পাঠিয়েছে,এক্সেপ্ট কর।
– দাঁড়া প্রোফাইল টা আগে দেখে নেই৷ ছ্যাঁচড়ার মতো রিকুয়েষ্ট দিলেই রিসিভ করে ফেলতে নেই।
মোবাইলে চার্জ যখন ১৫পারসেন্টে তখন কথা শেষ হলো তারার। মোবাইল বন্ধ করে চার্জে দিয়ে তরুকে গিয়ে বললো-
– মা আমি ঘুমিয়ে যাই,ভোরে প্রাইভেট আছে। তোমার হাতের কাজ শেষ হবে কখন?
-রাত হবে,তুমি শুয়ে পরো।
অফিসের কাজের শেষ করতে করতে তরু আবির কে নিয়ে চিন্তা করছিল। মানুষ টা হনহন করে চলে গেল,ফোন রিসিভ করলো না। সমস্যা কি জানার খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু ফোন দেয়ক সম্ভব না। লোক টা নিজে ও তো একটা কল দিতে পারতো।
তারা ঘুমিয়ে পরেছে। মেয়ে টা কে ঘুমের মধ্যে ছোট্ট একটা পরীর মতো লাগে। তারার চুলে হাত কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো বন্ধ।
ওপেন করার সাথে সাথেই টেক্সট আসলো-
-মোবাইল অফ কেন?
আবির কে টেক্সট ব্যাক করলো তরু-
-চার্জ ছিল না।
টেক্সট পেয়ে তৎক্ষনাৎ কল ব্যাক করলো আবির,কথা শুরু করলো তরু-
-কোথায় ছিলেন, কল দিলাম রিসিভ করলেন না। দ্রুত পায়ে চলে গেলেন,পেছনে ফিরে ও দেখলেন না।
-বিজি ছিলাম তাই রিসিভ করিনি। দ্রুত পায়ে চলে না গিয়ে উপায় কি ছিল বলোতো। তোমার সিদ্ধান্তের জন্য রুপকথার নায়কের মতো জন্ম-জন্মান্তর বসে থাকা কি সম্ভব ছিল বলো?
– হুম,তা ঠিক বলেছেন। কে করা জন্য জন্ম জন্মান্তর অপেক্ষা করে।
– কেন বিজি ছিলাম জিজ্ঞেস করবে না জানি। শোন কেন বিজি ছিলাম। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আগামীকাল বাদ জুম্মাহ বিয়ে।
– মানে কি বলছেন?
-কেন বিশ্বাস হচ্ছে না?
– হচ্ছে, অবিশ্বাস হওয়ার মতো কিছু না। আপনার নতুন জীবন সুন্দর হোক।
-তরু নিজে কে কি ভাবো মহা নারী। কোন জায়গায় মায়া নাই টান নাই। না কি নিজের কঠিন ব্যাক্তিত্ব ধরে রাখার জন্য নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ।
-আপনি কি কোন কারনে আমার সাথে রাগ করে আছেন আবির সাহেব?
– আমার কিংবা তোমার কারো-ই রাগ অভিমান করার বয়স নাই। তোমার কি লাল বেনারসি পছন্দ না কি ট্রেন্ডিংয়ে চলা কোন ড্রেস?
-লাল বেনারসি খুব পছন্দ।
– তাহলে বেনারসি নিয়ে নিও আর যা যা প্রয়োজন হয়। তারার জন্য ভালো একটা ড্রেস নিও। এখন মেয়েরা যে স্কার্টের মতো একটা ড্রেস পরে এমন নামটা জেনো কি?
– লেহেঙ্গা।
– হ্যা,লেহেঙ্গা। একদম অনারম্ব অনুষ্ঠান হবে। একটা সময় চেয়ে ছিলাম বিয়ে টা অনুষ্ঠান করেই করবো। কিন্তু তুমি যে বললে মাটির মতো নিরব থাকতে ইচ্ছে করে। লোক দেখানো কিছু ভালোলাগে না। তোমার এই কথা গুলো শুনার পর থেকে আমার ও মাটির মতো নিরব হতে ইচ্ছে করে। তরু তোমাকে যে এতো কঠিন করে কথা বলছি। তুমি তো কিছু বলছ না।
-আবির সাহেব,দীর্ঘদিন নিজেই নিজের অবিভাবক হয়ে আছি। কেউ শাসন করে না,বারণ করে না। আজ অনেক দিন পরে কেউ শাসনের স্বরে কথা বলছে। কেউ দিক নির্দেশনা দিচ্ছে। মাঝে মাঝে অবুঝ হতে খুব ইচ্ছে করে।
– আমার এক ফটোগ্রাফার বন্ধু কে বলে রেখেছি।
– আবার ফটোগ্রাফার কেন?
-তারার জন্য। মেকাপ-টেকাপ করে ফেইসবুক ইনস্টাগ্রামের প্রোফাইলে দিবে। ওর মন টা ভালো থাকবে।
– আবির সাহেব আপনি তারা কে নিয়ে এতো ভাবেন।
-তার কি আমাদের মেয়ে না তরু। বার বার আবির সাহেব শুনতে ভালোলাগছে না। আবির বলে একবার ডাকো।
-কি যে বলেন। বলে কয়ে কি ডাকা যায় না কি?
– অনেক দিন পর প্রেম প্রেম লাগছে তরু।
– তাই।
– হুম।
তরু নিচু গলায় ফিসফিস করে বললো-
-রাত কয়টা বাজিয়েছেন বলতে পারেন জনাব?
-হুম রাত প্রায় দেড় টা।
-বিয়ের বিষয়ে আমার বাসায় তো জানানো দরকার।
– তখন হনহনিয়ে তোমাদের বাসায় গিয়ে সবার সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছি। তোমার বাসার সবাইকে বলে রেখেছিলাম কেউ জেনো তোমাকে না জানায়। আগামীকাল আমাদের বিয়ে।
– তারা কি ভাববে বলেন তো?
– তরু, অনেক দিন পরে প্রেম প্রেম লাগছে। প্লিজ আর প্যাচাল করো না।
-আমরা কি প্রেম করছি,আবির?
– হুম, কলিজা আমরা প্রেম করছি।
-কলিজা কে?
-তুমি। তরু আমি তোমার কে?
-জানি না। এই বয়সে ন্যাকামো টা ঠিক আসে না।
– আই লাভ ইউ তরু। এবার তুমি বলো।
-সম্ভব না।
– আস্তে করে বলো একবার অস্পষ্ট উচ্চারণে হলে ও বলো,প্লিজ।
– কি বলবো?
– আমি তোমাকে ভালোবাসি বলো। তোমার মুখ থেকে না শুনে আর থাকতে পারছি না।
– আমি রাখলাম। বিয়ের রাতে সব বলবো,সাহেব।
-তরু,প্লিজ রেখো না।