-5 C
Toronto
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫

সেই সময় : ইয়েলোনাইফ থেকে

সেই সময় : ইয়েলোনাইফ থেকে
সেই সময় ইয়েলোনাইফ থেকে

অনেক দিন ধরে লিখব মনে করছি এর মধ্যে একবার তার অনুমতিও নিয়ে রেখেছি কিন্তু আলস্য করেই লেখা হয়নি। আজ লিখতে বসেছি।  পড়ুন কি লিখছি, কার কথা লিখছি।

২০০০-২০০১ সালের কথা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পনা শাখায় কাজ করছি। এখানকার কাজটাই পরিকল্পনা বিষয়ক টেকনিক্যাল এবং সেগুলির বাস্তবায়ন সম্পর্কিত। যোগদানের শুরু থেকেই কয়েকজন পরিচালককে পেয়েছি যারা চমৎকার সমঝোতার সাথেই আমাদেরকে কাজ করিয়েছেন।

- Advertisement -

একটি ইউনিট ছিলো WHO ইউনিট। এখানে একজন বড়ভাই (ডা: হুমায়ুন কবির) Desk Officer । তিনি বরিশাল মেডিকেল কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট। সপ্তাহে একদিন দুদিন অফিসে আসেন, কোন কোন সপ্তাহে আসেন না। অত্যন্ত শুকনা একটু মেজাজীও। একদিন জানলাম  লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। দৃষ্টি ভঙ্গি পাল্টে গেল। মনের কষ্ট আরো বেড়ে গেল।

পরিচালক আদেশ দিলেন আমি যেন WHO desk কাভার করি তার সাথে। যেদিন তিনি আসতেন আমি তার সাথে কাজ করতাম। চমৎকার তার জ্ঞান, ধারনা, বাংলা, ইংরাজীর দক্ষতা। তিনি বলতেন আমরা লিখতাম কম্পুটারে। আমার মাঝে মাঝে মনে পড়তো কবি মাইকেল মধূসুদন দত্তের কথা । কলকাতার নাটকে শুনেছি একসাথে  চারটি নাটকের ডিকটেশন দিচ্ছেন। আর চারজন বসে তা লিখছেন। আমার এই সহকর্মী বড় ভাইকে তখন সে রকমই মনে হতো।

প্রধানমন্ত্রী বিদেশ যাবেন তার জন্য স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ভাষণ তৈরী করতে হবে। ভাই ডিক্টেশন দিচ্ছেন আর আমি লিখছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রী, সচিব,ডিজি যিনিই বিদেশ যান না কেন আমাদের লেখা ভাষণ পকেটে করে নিয়ে যেতে হবে। কথা বলতে বলতে হুমায়ুন ভাই মাঝে মাঝে চোখ বুজে অসাড় হয়ে চুপ করে থাকতেন। একটি ভংন্কর দু:সংবাদ শোনার জন্য প্রতিদিনিই আমাকে প্রস্ত্তত থাকতে হতো।

একবার থাইল্যান্ড গেলাম সফরে সাথে আমার সহকর্মী বড়ভাই। পুরা মাসটি তিনি ব্যাংককের বিভিন্ন হাসপাতালে খোজ খবর নিয়েছেন তার চিকিৎসার। এক সময় আমরা দেশে ফিরে এসেছি। তিনি কোন ভালো খবর নিয়ে আসতে পারেননি।

২০০৫ সালের জুনে আমি অনেকটা অগোচরে দেশ ছেড়ে চলে আসি কানাডায়। সবার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর ভেতর একদিন শুনি হুমায়ুন ভাই দিল্লী  গেছেন চিকিৎসার জন্য সাথে তারই ছোট ভাই। অনেকটা গোপনে তিনিও তার ভাইকে নিয়ে দিল্লী গেছেন।এর আগেই তার ভাইএর সাথে Tissue matching করা হয়েছে। ৮৫% matched এই ভরসা নিয়ে দুভায়ের দিল্লী যাত্রা। এর মধ্যে অনেক নাটক অনেক ত্যাজ্য পরিত্যাজ্য। আপন মা বাধা দিচ্ছেন ছোট ছেলেকে কারন একটা অসুস্থ্য ছেলের জন্য একটা সুস্থ্য ছেলের দেহে কাটা ছেড়া হবে কেন? এক পর্যায়ে ছোট ভাইএর বউ একমাত্র সন্তানকে রেখেই বাপের বাড়ী চলে গেল।

দিল্লীতে সফল Liver transplantation হলো। ধীরে ধীরে হুমায়ুন ভাই সুস্থ্য হতে লাগলেন। এক পর্যায়ে দেশে এসে কর্মস্থলে যোগ দিলেন। এক দিন টরন্টো থেকে ফোনে তার সাথে কথা হলো। কি খুশী! বলেন-আযম তুমি চলে গেলে কেন? আমি ভালো হয়ে গেছি। চলে এসো, এক সাথে আবার কাজ করবো।

২০১৫ সালে ঢাকার রামপুরায় তার বাসায় গিয়ে তার সাথে কিছু সময় কাটিয়ে এলাম। সাথে ভাবীও ছিলেন। যে মানুষটি এক সময় তাকে সেবা যত্ন করেছেন এখন তাকে(ভাবী)ই যত্ন করতে হচ্ছে। শুনলাম মেয়ে ডাক্তার, ছেলে প্রকৌশলী। ভালো লাগলো।

তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম ভাইবউটা এখন কোথায়? বললেন-আমি গিয়ে তাকে নিয়ে এসেছি। একটি মানুষের মনের জোরে আর দূরদৃষ্টির কারণে অসাধ্যকে জয় করেছেন। এখন অনেক ভালো আছেন, হাসিখুশী আছেন। আমার সাথে তাদের দুজনেরই কথা হয় মাঝে মাঝে। বাঁচামরার সংগ্রামে জয়ী এ দুজন মানুষের জন্য আসুন আমরা দোয়া করি , শুভকামনা তাদের ও তাদের সন্তানদ্বয়ের জন্য।

 

ইয়েলোনাইফ, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles