
জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া ও সামনে থেকে নিজ নিজ এলাকায় আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া অন্তত পাঁচজন শিক্ষার্থীর সম্প্রতি অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। কাছাকাছি সময়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলপর্যায়ের এসব শিক্ষার্থী ‘গুপ্ত হত্যার’ শিকার হয়েছেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নাগরিক কমিটি ও ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। এ ধরনের মৃত্যুগুলোকে চিহ্নিত করে ‘হত্যাকারীদের’ বিচারের আওতায় আনার দাবিতে এরই মধ্যে রাজপথে নেমেছে বেশ কিছু সংঠন। তবে নিহত ওই পাঁচজনেরই মৃত্যুরহস্য উন্মোচনের দাবি করে পুলিশ বলেছে, এর মধ্যে তিনটি হত্যার ঘটনা এবং দুটি দুর্ঘটনা।
গত ১৭ ডিসেম্বর সকালে পূর্বাচল উপশহরের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ অংশের একটি লেকের পানিতে ভেসে ওঠে কলেজছাত্রী সুজানার লাশ। কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোডের বউরারটেক এলাকায় পূর্বাচল উপশহরের ২ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর সেতুর নিচ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সঙ্গে পাওয়া যায় একটি হেলমেট। যার সূত্র ধরে মেলে সুজানার সঙ্গেই লেকের পানিতে প্রাণ যাওয়া এক কিশোরের মরদেহ। নাম তার কাব্য। এ দুজনই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিল।
জানা যায়, সুজানা রাজধানীর ভাসানটেক সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির এবং কাব্য আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। স্বজনরা বলছেন, তারা দুজন ভালো বন্ধু ছিল। বিজয় দিবসের রাতে ঘুরতে বের হয়ে নিখোঁজ হয় সুজানা ও কাব্য। নিখোঁজের পরদিন উদ্ধার হয় সুজানার মরদেহ আর এক দিন পর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা একই লেক থেকে কাব্যর লাশ উদ্ধার করেন মোটরসাইকেলসহ।
শুরুর দিকে দুজনের পরিবারই এটিকে পরিকল্পিত ও পূর্বশত্রুতার জেরে হত্যা বলে অভিযোগ তুলেছিল। ঘটনাস্থল এবং নিহত দুজনের মোবাইল ফোনের কথোপকথন বিশ্লেষণ করে এটিকে নিছক সড়ক দুর্ঘটনা বলছে পুলিশ। ঘটনার শুরু থেকেই সংশ্লিষ্ট রূপগঞ্জ থানা পুলিশ রহস্য উন্মোচনে কাজ করছিল।
এ বিষয় গতকাল বৃহস্পতিবার কথা হয় থানাটির ওসি লিয়াকত আলীর সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটি নিছকই সড়ক দুর্ঘটনা। ঘটনার রাতে তারা দুজন (সুজানা ও কাব্য) এক বাইকে করে ঘুরতে বেরিয়েছিল। তারা মূল সড়ক দিয়ে না গিয়ে পাশের পুরনো সড়ক ধরে বাইক নিয়ে যাচ্ছিল। পথে তারা যখন জলসিঁড়ি গেট ও নীলা মার্কেটের মাঝামাঝি এসে পৌঁছায়, তখন তারা দুর্ঘটনার শিকার হয়। রাতের বেলা এ সড়কে প্রচ- কুয়াশা থাকে। এতে সামনে কোনো কিছুই দেখা যায় না। এ কারণে তারা বাইক নিয়ে পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলসহ লেকে পড়ে যায়। পাশের রাস্তায় লেক পারাপারের জন্য কালভার্ট না থাকাতেই এমনটি হয়েছে। পাশের রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় লেকের কাছে গিয়ে ইউটার্ন করে মূল সড়কে উঠে কালভার্ট বা ব্রিজ দিয়ে লেক পার হতে হয়। তারা সেটা করেনি।’
ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা জানিয়েছেন, পানির নিচে কাব্যের লাশের ওপর তার মোটরসাইকেল ছিল বলে তার লাশ ভেসে ওঠেনি।