![টরন্টো ফিল্ম ফোরামের অফিসে টরন্টো ফিল্ম ফোরামের অফিসে](https://www.thebengalitimes.com/wp-content/uploads/2024/12/Picture12.png)
মনিস রফিক ফোনে প্রায় আমন্ত্রণ জানান বলেই সুযোগটা পাই। টরন্টো বাংলা টাউনে ‘উনদাল’ নামের রেস্তরার সামনের কয়েক ধাপ সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে হেঁটে শেষ মাথায় গেলে চলচ্চিত্রকার এনায়েত করিম বাবুল,রফিক মনিস ও একদল চলচ্চিত্র প্রেমীদের গড়া টরন্টো ফিল্ম ফোরাম। শর্টে ‘টি এফ এফ’অফিস ও প্রদর্শন কক্ষ। বছরে একবার তারা পাঁচদিন ব্যাপী মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যল করেন। সারা বছর প্রায় চলচ্চিত্র জগতের গুণিজন নিয়ে আড্ডা মুডে কথোপকথনে বসেন তারা। মনিস রফিক আমার প্রিয় চলচ্চিত্র নিয়ে লেখার লেখক। মনিসের নেয়া বন্ধু তারেক মাসুদের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার এক নিঃশ্বাসে পড়র মত টান টান ও গুরত্বপূর্ণ। পরে টরন্টোর বাংলা বইয়ের দোকানে দোহা ভাই থেকে চেয়ে নিয়ে বইটি পড়েছি ‘তারেক মসুদ-চলচ্চিত্রের আদমসুরত’। মনিসের আরো ভালো কিছু বই আছে যেমন- ‘চলচ্চিত্রের বিশ্ব সারথি’ ‘তিতাস একটি নদীর নাম-চিত্রনাট্য’ ‘গৌতম ঘোষের চলচ্চিত্র’ ।
এই শুক্রবার সন্ধ্যায় ছিলো চিরসবুজ কানাডা ও বাংলাদেশে সুপরিচিত গুণি নির্মাতা বর্তমানে দেশের দীপ্ত টিভির সিইও ফুয়াদ চৌধুরীর সাথে আড্ডা এবং এই সেপ্টেম্বরে হয়ে যাওয়া টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল – টিফে মনোনিত হয়ে আসা ‘সাবা’ সিনেমার তরুণ পরিচালক মাকসুদ হোসাইনের সঙ্গে কথোপকথন। সাবা-তার ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী মাহজাবীনের প্রথম ফিচার ফিল্ম এটি। মাকসুদ হোসাইন এক বিরল বাংলাদেশী পরিচালক যিনি জন্মেছেন ও বড় হয়েছেন আবু ধাবতে। বিশ্ববিদ্যালের শিক্ষা জীবন শেষ করেছেন আমেরিকায় তারপর দেশে ফিরে পুরোদস্তুর বাঙালি হয়ে দারুণ সব এ্যাড ফ্লিম,ডকোমেন্টারী ফিল্ম শেষ করে এই প্রথম ফিচার ফিল্ম ‘সাবা’ নিয়ে টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে হাজির।
আমি ক্লান্ত ছিলাম টরন্টো বাংলা টাউনের কাছেই প্রায় পাঁচ বছর থাকার পর আমার বিশাল ছবি আঁকার স্টুডিও ছাড়তে হচ্ছে,ভেঙ্গেচুরে নতুন বিল্ডিং উঠবে। গত কয়েক দিন পেইন্টিং আর আঁকার সরঞ্জাম শহরে নানা জায়গায় প্রিয়জনদের বেসমেন্টে – গ্যারাজে নিয়ে তুলছি। দিন শেষে সন্ধ্যায় মনিসের আমন্ত্রণ সত্বে বাংলা টাউনে সুইস বেকারীতে গরম পিয়াজু ডালপুরি চা খেয়ে বাসায় যাবো ভাবছিলাম। পথে মুখোমুখি দেখা হওয়ায় থামিয়ে দিলো আবৃতিকার আহম্মদ হোসেন। ঠিক তখনি সামনে এসে দাঁড়ালেন ফুয়াদ ভাইয়ের স্ত্রী সুন্দরী সাব্রিনা লাকী সাথে ভাইও আছেন। আরকি বাড়ি যাওয়া যায়। টিএফএফ কক্ষভর্তি চলচ্চিত্র পছন্দ্ পরিচিতজন। ফুয়াদ ভাইয়ের জীবন কানাডা এবং বাংলাদেশ দুই ধারায় এক ব্নাঢ্য সৃজনশীল কর্মময় জীবন। কোনাটা ছেড়ে কোনটা বলবেন যেন দিশা পাচ্ছিলেন না তিনি। আসলেই ক’জন বাংলাদেশি মানুষ কানাডার প্রথম সারির টেলিভিশান সিটিভিতে দীর্ঘদিন দায়িত্বশীল কাজ করে আবার বাংলাদেশে গিয়ে বিবিসির প্রবাদ পুরুষ সায়মন ড্রিঙ্কের সাথে দেশের গতানুগতিক টিভির ধারাই দারুণ ভাবে বদলে দেন একুশের টিভি করে। কানাডিয় সফল শিক্ষক হিসেবে ভারতে মাস কমিনিউক্যাশান ও ফিল্ম পড়াতে যান বছরের পর বছর আবার নিজের চলচ্চিত্রর কাজ একের পর এক শেষ করেন। দশ দিন দশ সেশানেও ফুয়াদ ভাইয়ের জীবন কর্মযজ্ঞ কথা শুনে শেষ করা যাবেনা। এক সময় লাগাতার পরপর আট বছর টরন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল টিফে চোখ লাল করে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ডাউন টাউনে হল টু হল ছুটে প্রেস কার্ড গলায় ঝুলিয়ে সিনেমা দেখেছি। বিস্তার লিখেছিও টরন্টোর বাংলা কাগজে,বাংলা রিপোর্টারে এবং ঢাকার মাসিক কালি ও কলমে। তখন আফসোস হতো টিফে এতো দেশের এত ছবি আসে কেন বাংলাদেশের সিনেমা চান্স পায়না! তারপর যখন টিফ ৩২ বছরের যুবক মন আনন্দে ভরে উঠলো আমার। গোলাম রাব্বানী বিপ্লবের ‘স্বপ্নডানায়’ মনোনীত হয়ে আসলো টরন্টো। কে এই বীর! কে বিপ্লব যে ভাঙ্গলো ৩২ বছরের বন্ধ তালা। গোলাম রাব্বানী বিপ্লব টরন্টোতে দেখা হতে দৌড়ে এসে বুকে জড়িয়ে ধরলো ইকবাল ভাই বলে। আমার দেশ ছেড়ে আসার আগে বাংলাদেশ ফিল্ম সোসাইটির প্রবাদপরুষ খসরু ভাইয়ের কাছে আনাঘোনা করতে দেখেছি তারক মাসুদ,তানভীর মোকাম্মেল,শামীম আখতারদের।পরে মনে পড়লো বিপ্লব তখন অতি তরুণ,অনেক দেখেছি বিশেষ করে ভারতীয় কালচারাল সেন্টারে সোসাইটি যখন সিনেমা দেখাতো। টিফের তখনকার দ্বিতীয় প্রধান ক্যামারনের সাথে আমারও জানাশোনা ছিলো,ইন্টারভিও করেছি কয়েকবার। সে স্বপ্নডানায় খুব পছন্দ করে ছিলো।পরের বছর তাই গোলাম রাব্বানী বিপ্লবের সিনেমার রাস দেখেই মনোনয়ন করেছিলো টিফে। এরপর কেন জানি থেমে গেলো টিফে বাংলাদেশের সিনেমা আসা। কয়েক বছর থেমে আবার দুই এক বছর গ্যাপ পড়লেও আসছে টিফে বাংলাদেশর ফিল্ম। সকল টরন্টোবাসী বাংলাদেশীর বুকে আনন্দধ্বণি তুলে২০২৪শে মাকসুদ হোসাইনের ‘সাবা’ এলো। তুমুল ভাবে চল্লো তিনটি শো। দুর্ভাগ্য হচ্ছে শেষ শো ছাড়া টরন্টোর বাংদেশীরা তেমন টিকেট পায়নি ।তাতে কি দেখুক কানাডিয় ও বাইরে থেকে আসা টিফে গেস্ট দর্শক,সেটাই ভালো। আজ হোক,কাল হোক টরন্টোর বাংলাদেশী দর্শকদর জন্যে ‘সাবা’তো আসবেই। আমারই দেখা হয়নি,দেখবো তখন। পরিচালক মাকসুদের মুখে সাবা মূল বিষয়তো আমার দারুণ লাগলো। এতো বিশ্বময় সব দেশেরই মানবিক এক বিষয়। বাবা মা মেয়ে সহ চমৎকার এক পরিবার গাড়ি এক্সিডেন্টে চরমার হয়ে পড়ে।মা চিরকালের হুইল চেয়ার পঙ্গু হয়ে স্বামী ও মেয়ের নির্ভরশল হয়ে পড়েন। স্বামী মারা যেতে মেয়ের ওপর তিনি পুরোটা নির্ভর। মা ও তরুণ মেয়ের সমান্তরাল এই কঠিন জীবনের সুখ দুঃখ অভিমান হতাশা স্বপ্ন নিয়েই ‘সাবা’। মনিস রফিকের প্রশ্নের উত্তরে মাকসুদ বল্লেন তার পরের ফিল্মের নাম ‘বেবীমুন’ এটিও বিশ্বমানবিক বিষয় প্রেম ভালোবাসায় ভরপুর এক তরুণ দম্পতি তাদের প্রথম সন্তান নিয়ে কত রকমের কত স্বপ্নই না দেখে।অথচ সন্তান মৃত হলে স্বপ্ন গুলো দুঃস্বপ্নে রূপ নেয়।ভাঙ্গতে থাকে সব বাঁধন সব ভালোবাসা।শেষ পর্যন্ত কি হয় তাদের এনিয়েই প্রতীভাবান আরবী আমেরিকান বাংলাদেশী পরিচালক মাকসুদ হোসাইনের ‘বেবীমুন’।শুভ কামনা রইলো।
স্কারবোরো, কানাডা