![কক্সবাজার থেকে টরন্টো কক্সবাজার থেকে টরন্টো](https://www.thebengalitimes.com/wp-content/uploads/2024/12/Picture13-3.jpg)
২০০৪ সালের জুলাই/আগষ্ট মাসে কক্সবাজার গিয়েছিলাম ছেলে রক্তিম কে নিয়ে। রক্তিম ১৫দিন টাইফয়েড রোগে ভুগেছে তাই একটু চেন্জ এর উদ্দেশ্যে বাপবেটার সমুদ্র দেখার জন্য ভ্রমন। তখন ঢাকার সীমিত সামর্থের জীবনে ভ্রমন কি সেটাই ভুলেই গিয়েছিলাম। নাইট কোচে এসে সকালে পৌছুলাম। হোটেল সাইমনে উঠলাম। সে সময় রোজা ছিলো ছেলেটাকে হোটেলে নিয়ে ঠিক ঠাক মতো খাইয়ে নিতাম যেন ও দ্রুত Recovery করতে পারে অসুস্থ্যতা থেকে।
কক্সবাজারে একজন খ্যাতিমান ডেন্টিস্ট আছেন ডা: কুতুবী ভাই। তার সাথে সাক্ষাৎ করলাম একদিন। গল্প করলাম। তিনি আমাদেরকে নিয়ে ঘুরলেন আপ্যায়ন করলেন একদিন সন্ধায়। প্রতিদিন সকালে আমি ও রক্তিম সমুদ্র পাড়ে গিয়ে দাড়াতাম। আমার কষ্ট হতো তার জন্য কারন ব্যস্ততার কারনে তার মা সাথে আসতে পারেনি।
আমাদের সফর ছিলো ২ রাত ৩ দিনের। দেখতে দেখতে দুইরাত পেরিয়ে গেল। ৩য়দিন সকালে বাপ বেটা শেষবারের মতো সাগর দর্শনে গেলাম। আজ এখানে অনেক ভীড় লোকেলোকারন্য। ভীড় ঠেলে কাছে যেতেই দেখি সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ। দুএকজন তাঁর পাশে দাড়িয়ে ফটো নিচ্ছেন। এবার আমি গেলাম, পরিচয় দিয়ে বললাম।
-স্যার আমি একজন ডাক্তার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাকুরী করি।
আমি ছেলেকে দেখিয়ে বলে চলেছি
-এ আমার ছেলে ধানমন্ডি গভ:বয়েজ স্কুলে পড়ে। আপনার লেখার ভক্ত সে। প্রতি বছর বইমেলায় আপনার যত বই পাই তার সবই তাকে কিনে দেই।
তিনি হাহু করে শুনলেন। এবার বললাম
-স্যার আপনার সাথে একটা ছবি নিতে চায় সে।
-আমার সময় নেই।
তিনি ঝটপট বল্লেন।
-স্যার ছেলেটা অসুস্থ্য। ওকে বেড়াতে নিয়ে এসেছি।
আমি দেখছি তাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে। কি যেন ভেবে নিলেন তারপর আমাকে বললেন
-আপনার ছেলেকে নিয়ে আসেন আমার দুপাশে দুজন দাঁড়ান।
আমরা দাঁড়ালাম ছবি উঠলো। অবাক করে দিয়ে আমাকে বললেন
-ওর চকরা পকরা কোন জামা আছে। বললাম
-সাথে নেই হোটেলে আছে।
-তুমি ঘোড়ার পিঠে উঠতে পারবে?
কি বলবে? রক্তিম চুপ করে দাড়িয়ে আছে। বুঝলাম স্যার তার নাটকে এখনই একটি শর্ট নিবেন রক্তিমকে দিয়ে। বললাম
-পারবে স্যার, ছেলেকে বললাম
-তুমি বল উঠতে পারবে।
স্যার একজনকে ঘোড়া আনতে বললেন, একজনকে একটা চেয়ার আনতে বললেন।
পাশে দাঁড়িয়ে দুজন বলছে
-দ্যাখ, মানুষের কপাল খুলতে সময় লাগেনা।
রক্তিম ঘোড়ার পিঠে উঠেছে, শর্ট নেয়া শুরু হয়েছে। আমি দেখছি। হঠাৎ স্যার বললেন
-আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন? এখান থেকে হেটে যান, আপনার ছবিও আসবে নাটকে।
যাবার সময় নাটকের নামটি বললেন এবং কবে টেলিকাষ্ট হবে তাও জানালেন। এ সেটে নাটকের অন্যান্য কলাকুশলীরাও ছিলেন।
একটা মধুর স্মৃতি নিয়ে সমুদ্র পাড় থেকে সে দিন ফিরলাম।
আজও তা মনে পড়ে। জানতাম লেখক, কবি, সাহিত্যিকদের মন নরম সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের সেদিনের অভিব্যক্তি সারা জীবন সেটি আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে।
ইয়েলোনাইফ, কানাডা