
গতকাল আমি রাত নয়টার দিকে মসজিদে যাচ্ছিলাম নতুন বছরের আলোকে ইসলামিক আলোচনায় অংশ নিতে। ড্রাইভ করেই যাচ্ছিলাম। তখন বেশ ঝুরঝুর করে বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। গা ভেছে জবজবে হবে তো বটেই।
রাত তো হেডলাইট জ্বালানো থাকলেও খুব একটা বোঝা যায় না হঠাৎ যদি কেউ পাশ দিয়ে ক্রসিং করে। তো হয়েছিল কি, আমি যেই না গাড়িটা লেফট টার্ন করেছিলাম হঠাৎ দেখি আমার গাড়ির একেবারে গা ঘেঁষে একটা ইলেকট্রিক বাইক বিদ্যুত গতিতে চলে গেল। আমি তো একেবারে কিংকর্তব্যবিমূঢ়, হতভম্ভ হয়ে পড়েছিলাম। কোনোভাবে যদি ঐ বাইকটায় আমার গাড়ির ধাক্কা লাগত তাহলে কী ঘটতে পারত জাস্ট কল্পনা করেন একটু!
যাই হোক, আমার নজরে পড়ল ঐ ইলেকট্রিক বাইকে করে একজন ঐ রাতে তাও আবার ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে ফুড ডেলিভারি দিতে যাচ্ছেন।
আমি তাৎক্ষণিকভাবে গাড়িটা একপাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রেখে পেছনে ফিরে তাকিয়ে থাকলাম ওনার চলে যাওয়ার গতির দিকে। বিশ্বাস করেন, একটা সেকেন্ডর মধ্যে আমার যে কতোশত অনুভূতির জন্ম নিয়েছিল তার সব লিখে পারা যাবে না।
আমি ভাবতেছিলাম, Life is not that easy here in Canada. যিনি বাইক চালিয়ে যাচ্ছেন, তার কাছে জীবনের চেয়ে সময় ও কাজের মূল্যটাই মনে হয়েছে বেশি। তা ছাড়া উপায়ও নেই। করতেই হবে কিছু। অন্য কোনো কিছু যখন ম্যানেজ করা যাচ্ছে না, অনেক মানুষ এখন এই পেশা বেছে নিচ্ছেন।
এটা যে কতোটা কষ্টের যারা করছেন তারাই জানেন। বিশেষ করে এভাবে রাতের আঁধারে, প্রচণ্ড শীতে কিংবা ঝরঝরে বৃষ্টিতে বা তুমুল তুষারপাতেও তাদের চলতে হয় বাইক নিয়ে। ফুড ডেলিভারি দিতে। থামা যাবে না। তাহলে জীবন যে আরো কষ্টের মোকাবেলায় পড়বে।
যারা বিভিন্ন স্ট্যাটাসে এসেছেন কানাডায়, জব পাচ্ছেন না তাদের জন্য এই কাজটা সহজে মিলছে। সহজে মিললেও অতটা সহজের কাজ মোটেও না এটা, আবার খুব যে আয় করা যায় তাও না।
আপনারা যারা ভাবছেন, যেকোনোভাবে কানাডায় পৌঁছালেই সবকিছু হয়ে যাবে। পিআর হয়ে যাবে, সব। এতোটা কিন্তু সহজ না। এখানে তো সীমাহীন কষ্ট করতেই হবে, সেটাও মানা যায়। শেষে তো কোনো কিছু মিলবে এমন ভরসা পাওয়া মুশকিল। তাই জীবন থেকে কতোটা সময় চলে যাচ্ছে সেটা তো ফিরে পাওয়া যাবে না।
যারা এসব মানতে পারবেন না, নানারকম চিন্তায় পড়বেন তারা মানসিক ভারসাম্য হারাতে পারেন। কারণ কম টাকা খরচ করে কিন্তু কানাডায় আসা হচ্ছে না। আমি বলছি যারা ইমিগ্রেশন বাদে অন্যভাবে এসে থেকে যাচ্ছেন তাদের কথা।
আরেকটা উদাহরণ দিচ্ছি। আমার পেইজের একজন সম্মানিত ফলোয়ার জানালেন তার বিপদের কথা।
ওনার husbandকে দেশ থেকে কোনো এক ভুয়া কোম্পানি জব অফার দিয়ে কানাডায় এনেছেন। তারপর যে কোম্পানিতে জব হওয়ার কথা ছিল সেখানে জবে নিচ্ছে না। LMIA ছিল ভুয়া।
এখন ওনার husband পড়েছেন মহা বিপদে। আমার কাছে জানতে চেয়েছেন কী করা যায়। ঐ আপা ও ওনার husband এর জন্য আমার অত্যন্ত দুঃখ লাগতেছে। কারণ ওনারা সম্পূর্ণ ফেক সিচুয়েশনে পড়েছেন। এখন যা কিছু করা হবে টাকা খরচ ছাড়া কিছুই হবে না। asylum seek করাটাও কোনো বুদ্ধিমানের কাজ না। আবারো বলছি জীবনে সময়ের মূল্য অনেক, কানাডা না। অল্প আয়ে, একবার খেয়েও থাকা যায়। কিন্তু মানসিক stress, জীবন থেকে প্রিয়জনদের দূরে সরিয়ে রাখতে বাধ্য হওয়া এসবের মূল্য কোনো কিছু দিয়ে হবে না।
আমার কাছে অনেকেই দেখাচ্ছেন কাগজ যেটা তারা অফার পেয়েছেন। এটা 100% ভুয়া। এই ফাঁদে পা দিলে আপনাদের দুটো কাজ হবে। এক, টাকা নষ্ট। দুই, জীবন নষ্ট।
আল্লাহ আপনাদের সুস্থ রাখুন।
টরন্টো, কানাডা