ভাবি আয়না ধরে আছে জামান সাহেব আর পাতার মুখের সামনে।
– দুলাভাই কি দেখেন?
জামান সাহেব ভাবির মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো-
– আমার পাতা বউ।
পাতা লাল ঘোমটার আড়াল থেকে একবার জামান সাহেব কে দেখে নিল।
শ্যামলা রংয়ে শুকনা গড়নের লম্বা একটা মানুষ। রুপ,সৌন্দর্য, পুরুষত্ব বলতে খুব কিছু একটা নেই। যা আছে, তার কাছে টানে তা হলো জামান সাহেবের ব্যাক্তিত্ব।
অসাধারন ব্যাক্তিত্বের অধিকারী তিনি।
মানুষ যখন কারো ব্যাক্তিত্বের প্রেমে পরে তখন চাইলে ও আর ফিরতে পারে না। আসলে ফিরা যায় না। রুপের মোহ কাটানো যায় হয়তো একটা সময়, ব্যাক্ত্বিত্বের প্রেমে পরে গেলে উঠে আসা যায় না।
পাতা হয়তো উঠে আসতে পারেনি জামান সাহেবের ব্যাক্তেত্বের প্রেম থেকে।
মানুষ টা আগলে রাখতে জানে,সবাই আগলে রাখতে জানে না।
মেয়েরা হয়তো এজন্যই বাবার ছায়া খোঁজে তার পার্টনারের কাছ থেকে।
মেয়েরা
শূণ্য পকেটের পুরুষ কে মেনে নিতে পারে,হৃদয়হীন কে নয়।
এই হৃদয়বান পুরুষ টা কে আজীবন হৃদয়ে ধারন করা যায়।
জীবনের যে কোন অধ্যায়ে একটা ভুল মানুষ আসা প্রয়োজন, ভুল প্রেম পরা খুব প্রয়োজন।
সঠিক মানুষ টা কে চেনার জন্য কয়েক সেকেন্ডের জন্য হলে ও ভুল একটা মানুষ আসুক,ভুলে ভরা একটা প্রেম হোক।
সব আয়োজন শেষ হলো সন্ধ্যার আগে আগে।
যাবার সময় মা-বাবা কে জড়িয় ধরলে ও হৃদয় ভাঙা চিৎকার করতে একদম ইচ্ছে করছে না
পাতার।
বরং মনে শান্তি পাচ্ছে এই ভেবে অনেক গুলো মানুষ কে বাঁচিয়ে দিয়ে গেছে। অনেক ঝগড়াঝাটির অবসান আজ হবে।
চোখ দিয়ে বড় বড় কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরেছে তার ছেলে টা কে জড়িয়ে ধরে।
পরাগ পাতা কে জড়িয়ে ধরে বললো-
– আম্মু সাবধানে যেও,যাওয়ার সময় দোয়া পড়ে বুকে ফু দিও। আমার জন্য চিন্তা করো না। পৌঁছে ফোন দিও,না থাক আমি ফোন দিব।
তোমার ঔষধ গুলো নিয়মিত খেয়ে নিও। মামা কে নিয়ে আমি সকালে গিয়ে তোমাকে দেখে আসবো।
জামান সাহেব মুগ্ধ চোখে পরাগ কে দেখছেন।
কিছুক্ষণ পর পরাগের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন-
– তোমার আম্মুর অনেক কিছুই মনে থাকে না। তুমি থেকে গেলে কে মনে করিয়ে দিবে।
ড্রাইভার এসে পরাগের সাথে দুষ্টামি করতে করতে পাঁজা কোলে তুলে গাড়িতে বসিয়ে দিল।
পাতা ওর মাকে জড়িয়ে ধরলো আরেক বার।
– আম্মা এতো সুখ কি আমি সহ্য করতে পারবো?
– সুখ-দুঃখ ক্ষণস্থায়ী। তবে এই সুখ জেনো তৃপ্ত করে তোকে মা।
অল্প হোক,অল্প সময়ের জন্য হোক কিন্তু তৃপ্তির হোক।
জমান সাহেব পরাগের জন্য একটা রুম সাজিয়ে রেখেছেন,সাথে প্লে গ্রাউন্ড।
বাসর ঘর টা সাজানো হয়েছে, রজনীগন্ধার শুভ্রতায়।
জামান সাহেবের কয়েক জন আত্মীয় বিয়েতে আছেন। তার ছোট বোন ও এসেছে।
জামান সাহেবের ছোট বোন, জয়নব বেগম পাতা কে বাসর ঘরে বসিয়ে দিয়ে এসেছেন।
পরাগ এসে বলে গেছে মা তোমাকে পরীর মতো লাগছে।
ছেলের চোখের সামনে মা’য়ের বাসর ঘর বিষয় টা পাতার কাছে খারাপ লাগার মতো ব্যাপার ছিল কিন্তু জামান সাহেব তা হতে দেননি।
পরাগ কে কোলে করে নিয়ে এসে পাশে বসিয়েছেন। গল্প, দুষ্টামির শেষে পরাগ নিজে থেকেই নিজের রুমে চলে গেছে। তার রুম টা খুব পছন্দ হয়েছে।
রাত বারো’টার দিকে জামান সাহেব এসে রুমে ঢোকলেন। পাতা দাঁড়িয়ে পা’য়ে ধরে কদমবুসি করতে যাবে জামান সাহেব একটানে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিলেন।
পাতা ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হোঁ,হোঁ করে কান্না শুরু করছে-
-আমার এই জীবনে আর কিচ্ছু চাই না,সারাজীবনে আমি আর কোন দিন সুখি না হলে ও আফসোস হবে না। আমি আপনাকে মৃত্যুর পরে ও ধারণ করে রাখতে চাই।
– বোকা মেয়ে পায়ে ধরে কদমবুসি করতে হয় না,তুমি বুকে থাকবে।
পাতা তুমি ভালোবাসার মতোই একটা মানুষ। যে তোমার ভালোবাসা হারিয়েছে,সে তার জীবনের গুপ্তধন হারিয়ে ফেলেছে।
একটা মানুষ এতো ভালো হয় কি করে। এতো কেয়ারিং একটা মানুষ কে কোন ভালোবাসায় বাঁধা যায় পাতা বুঝতে পারছে না পাতা।
রাত তিনটার নাগাদ জামান সাহেবের বড় মেয়ে হিয়া ফোন দিয়েছে।
– হ্যালো আসসালামু আলাইকুম বাবা। কেমন আছো?
– ভালো আছি মা । তোমরা কেমন আছো?
– আমরা ভালো আছি। কিন্তু তুমি তো আমাদের ভালো থাকার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছ বাবা।
– কেন মা? তোমাদের ভালো থাকার জন্য আমি আমি যথা সাধ্য চেষ্টা করেছি এবং ভালো থাকার মতো হাজার পথ ও খুঁজে বের করে দিয়েছি। যতবার পথ ভ্রষ্ট হয়েছো তোমরা, ততোবারই সঠিক পথে এনেছি।
– বাবা উল্টো পাল্টা কথা বন্ধ করো। এতো দিন পর্যন্ত জানতাম তুমি আমার ভালো বাবা,পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। সেই ভালো বাবা টা এতো পরিবর্তন হলো কেমন করে?
– মা,তোমাদের ভালো বাবা, শ্রেষ্ঠ বাবা তার নিজের জায়গায় আছে। তুমি কি বলতে চাচ্ছো খুলে বলো মা। সরাসরি কথায় কোন ভুল বুঝাবুঝি থাকে না।