6 C
Toronto
শনিবার, মার্চ ১৫, ২০২৫

সম্পর্কের টানাপোড়েন আর বাড়াতে চায় না বাংলাদেশ-ভারত!

সম্পর্কের টানাপোড়েন আর বাড়াতে চায় না বাংলাদেশ-ভারত!
বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে বন্দি বিনিময় ছবি সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। গত পাঁচ মাসে দুই দেশ থেকেই পরস্পরের বিরুদ্ধে নানা কথা ছোড়া হয়েছে। তবে সম্পর্কের এই টানাপোড়েন আর বাড়াতে চাচ্ছে না কোনো দেশই। প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে উভয় দেশের সরকার।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন কমিয়ে আনার চেষ্টা দুই দেশই করছে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে। রোববার (৫ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক এই গণমাধ্যমটি জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের কোস্ট গার্ড আজ একে অপরের দেশে আটক মোট ১৮৫ জন মৎস্যজীবী বা জেলেকে নিজ দেশে ফেরত দিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে এত বড় সংখ্যায় আটক হওয়া মৎস্যজীবী বিনিময় এর আগে ঘটেনি। একে অপরের দেশে আটক হওয়া জেলে এবং অন্য বন্দি ফেরত দিয়েছে আগে ঠিকই, তবে একই দিনে দুই দেশে এভাবে বিনিময় হয়নি বলে নিশ্চিত করছেন ভারতের একাধিক কর্মকর্তা।

- Advertisement -

ভারত আর বাংলাদেশ– দুই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুই দেশে আটক মৎস্যজীবীদের তাদের ট্রলারগুলোসহ আন্তর্জাতিক জল-সীমানায় নিয়ে যায় দেশ দুটির কোস্ট গার্ড বাহিনী। সেখানেই আটক হওয়া মৎস্যজীবীদের বিনিময় চূড়ান্ত করা হয়।

খবরে বলা হয়, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে দুটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে এই পদক্ষেপকে পারস্পরিক আস্থা তৈরির ইঙ্গিত বলেই মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২ জানুয়ারি এক বিবৃতি দিয়ে সে দেশে আটক ভারতীয় মৎস্যজীবীদের ছেড়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। তার পরদিন, ৩ জানুয়ারি দিল্লিতে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল ঘোষণা করেন যে, ভারতে আটক বাংলাদেশি মৎস্যজীবীদের ছেড়ে দেওয়া হবে।

দুই দেশের বিবৃতিতেই এটা বলা ছিল যে, একে অপরের দেশে আটক মৎস্যজীবীদের নিজের দেশে ফেরত দিচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জয়সওয়াল বলেন, ‘বেশ কয়েকটি বিষয়ে অগ্রগতি হচ্ছে। প্রতিদিনই অগ্রগতি হচ্ছে।’

দুই দেশের মধ্যে ট্র্যাক টু ডিপ্লোমেসির কিছু কাজ করেন, এমন একটি ভারতীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সদস্য বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমি নিজে ঠিক এই মৎস্যজীবীদের নিয়ে মধ্যস্থতায় ছিলাম না। তবে এটুকুই জানি যে দিল্লি আর ঢাকার মধ্যে এ ব্যাপারে সরাসরি যোগাযোগ হয়েছে এবং মন্ত্রণালয়ের পর্যায়তেই আলোচনা করে মুক্তির দিনক্ষণ- পদ্ধতি নিয়ে সহমত হওয়ার পরেই বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে।’

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকেও উচ্চতম পর্যায় থেকেই জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশি মৎস্যজীবীদের মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে। সেই মতোই ডায়মন্ড হারবার জেল থেকে মুক্তি পান ১২ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবী।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিবিসি জানতে পেরেছে, ১ জানুয়ারি দুপুরে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অফিসারদের একটা বৈঠক হয়। সেখানে হাজির ছিলেন পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং সচিব মোহম্মদ জসিম উদ্দিন। ওই বৈঠক থেকেই এরকম একটা ইঙ্গিত পান অন্য কর্মকর্তারা যে, প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে টানাপোড়েন আর খুব বেশি এগোতে দেওয়া অনুচিত হবে। সম্পর্কের যাতে আরও অবনতি না হয়, সেই ইঙ্গিতও দেওয়া হয় বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রটি থেকে জানা যাচ্ছে।

ওই বৈঠকে যে ‘ভিন্ন সুর’ শোনা গিয়েছিল, তারপরে সেদিনই বিকেলে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন একটি মন্তব্য করেন যে, শেখ হাসিনাকে ফেরত না পাঠালেও দুদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নষ্ট হবে না।

তৌহিদ তৌহিদ হোসেনকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখা হয়েছিল, ‘শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা এবং ভারতের সঙ্গে স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্পর্ক একসঙ্গে চলতে থাকবে। এতে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হবে না।’

দুপুরের বৈঠক আর বিকেলে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে যে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, সেটিকেই পারস্পরিক আস্থা-বর্ধনের প্রয়াস বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।

আবার দিল্লিতেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, দিল্লি-ঢাকা নিয়মিত যোগাযোগ আছে এবং নানা বিষয়ে অগ্রগতি হচ্ছে।

নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র থেকে বিবিসি জানতে পেরেছে যে, মৎস্যজীবীদের ফেরত দেওয়া ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ একাধিক বিষয়ে ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে কিছু অগ্রগতি হয়েছে। এরমধ্যে আছে আগরতলায় সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া ভিসা কেন্দ্র ও সহকারী হাইকমিশনারের দফতর কয়েকদিনের মধ্যেই হয়তো ফের চালু করে দেওয়া হবে।

আবার ফারাক্কায় গঙ্গার পানির পরিমাপ নিতে একদল প্রকৌশলী বাংলাদেশ থেকে সেখানে গেছেন। ফারাক্কা নিয়ে যদি অদূর ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে আলাপ আলোচনা হয়, তাহলে সর্বশেষ তথ্য লাগবে। সেজন্যই প্রকৌশলীদের এই দলটি পানির পরিমাপের তথ্য সংগ্রহ করছে বলে জানা যাচ্ছে। – বিবিসি বাংলা

 

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles