-5.5 C
Toronto
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫

সমবেদনা

সমবেদনা
সমবেদনা

অপরের বেদনা নিজের ভেতর অনুধাবন করা সহজ কাজ নয়।

সমবেদনা আর সহানুভূতির মাঝে ফারাক থাকলেও দুটোই খুব জরুরী। প্রায় সবাই সহানুভূতি জানাতে পারলেও ক’জন পারে সঠিক সমবেদনা জানাতে?

- Advertisement -

কারও হয়তো মন বা শরীর খারাপ; সেটার কারন না জেনেও আপনি তাকে সহানুভূতি জানাতে পারেন। কিন্তু সমবেদনা জানাতে হলে তার কষ্টের কারন সম্পর্কে জানতে হবে এবং সেই কষ্টটাকে নিজের মধ্যে অনুভব করে বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে।

তবে সবক্ষেত্রে আপনার সেই কষ্টের অভিজ্ঞতা নাও থাকতে পারে। যেমন, একজন ক্যান্সারের রুগীকে আপনি সুস্থ মানুষ হয়ে সমবেদনা জানাতে পারবেন, তবে ঘাটতি থাকবে। কারণ আপনার ধারণাতেও নাই তাকে কতটা শারীরিক, মানসিক, সামাজিক চাপ সহ্য করতে হয়; কতটা ভয়াবহ চিকিৎসার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। আবার কারো সন্তান মারা গেলে হয়তো আপনি তার কষ্ট কিছুটা উপলব্ধি করতে পারবেন একজন মা কিংবা বাবা হিসেবে; এই ভেবে যে, আপনার নিজ সন্তান মারা গেলে কি ঘটতো?

মৃত্যু, এক্সিডেন্ট, অসুখ, ডিভোর্স, চাকরি হারানো ইত্যাদি কারণে না হয় আপনি অপরের কষ্ট অনুধাবন করতে পারবেন। এগুলোর বাহ্যিক প্রতিফলন আছে। কিন্তু কেও যদি কারও দ্বারা মারাত্মকভাবে অপমানিত হয় বা ছোট হয়; তখন তাকে কীভাবে সমবেদনা জানাবেন?

এর সঠিক উত্তর দেয়াটা খুব মুশকিল। কারণ ঘটনাটা আপনি দেখতে পাচ্ছেন না। আর আপনি হয়তো কখনও জানতে পারবেন না প্রকৃত ঘটনা কি। সেখানেই প্রকাশ ঘটবে আপনার মানবতার স্কিলের।

.

অপমানিত বা অসম্মানিত হবার অভিজ্ঞতা কম বেশি সবারই আছে। ধরুন আপনি নিজে কারো দ্বারা চরমভাবে অপমানিত হলেন, আপনার দোষ না থাকা সত্ত্বেও। ব্যাপারটা জানাজানি হলে এর মাধ্যমে আপনি আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধবদের মূল্যায়ন করতে পারবেন। তারা আসলেই আপনার কতটা আপন বা আপনাকে কেয়ার করে, সম্মান করে; সেটার ধারণা পাবেন।

তখন বেশ ইন্টারেষ্টিং একটা ব্যাপার ঘটবে!

দেখবেন, যে আপনাকে অপমান করেছে, সে-ই উল্টা আগভাগে অন্যদের জানিয়ে তার নিজের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করছে থার্ড পারসন্সদের মাধ্যমে। অর্থাৎ আপনাকে আরও ছোট করবে কৌশলে। তখন আশপাশের বেশিরভাগ মানুষ বলা শুরু করবে যে ভুলটা আসলে আপনার, আপনিই হতে দিয়েছেন। এর কারণটা হলো, তারা এসব বলে তারা নিজেদেরকে আপনার চাইতে আরেকটু বুদ্ধিমান বা স্মার্ট দেখাতে চাইবে। অথবা অতীতের কোনো কারণের জন্য আপনার ওপর ঝাল মিটাতে চাইবে। অনেকেই ভেতরে ভেতরে মজা পাবে। আপনার পাশে খুব কম মানুষই পাবেন। কিংবা দেখবেন আপনার পাশে আসলে কেউ নেই, খা খা তেপান্তরের মাঠ! অনেকটা শারীরিকভাবে নির্যাতিত মেয়ের তদন্তের আসা পুরুষ ডাক্তারের সামনে আবার কাপড় খোলার মতো সেকেন্ড টাইম নির্যাতন।

এ ধরনের বন্ধু, প্রতিবেশী বা আত্মীয়দের থেকে যতটা দূরে থাকবেন, ততই মঙ্গল। তবে সমস্যা হলো আপনি ইচ্ছে করলেই তাদের সঙ্গ ত্যাগ করতে পারবেন না, সামাজিকভাবে আপনার অনেক দায়বদ্ধতা আছে।

.

মানুষের সবচাইতে দুঃসময়ের ব্যাপার হলো সবার মাঝে চরমভাবে ছোট হওয়া। তখন আবিষ্কার করবেন আপনার কাছের মানুষদের বেশিরভাগকেই একশোতে বিশ-ত্রিশ এর বেশি মার্কস দিতে পারছেন না। অর্থাৎ তারা পরীক্ষায় ফেল। সমবেদনা তো  দূরে থাক, নুন্যতম সহানুভূতিও পাবেন না।

জাতি হিসেবে জাপানিজরা নিজ জীবনের চাইতেও আত্মসম্মানবোধ কে বড়ো করে দেখে। বিশেষ করে দেশপ্রেমিক সৈন্যরা। তারা প্রয়োজনে সুইসাইড করবে, তবুও চাইবে না শত্রুর হাতে ধরা পড়ে অপমানের মৃত্যুবরণ করতে।

যে সন্তান হারিয়েছে, তাকে অপর সন্তান হারানো মা/বাবা-ই দিতে পারবে প্রকৃত সমবেদনা। আমরা পুরোপুরি সমবেদনা জানাতে না পারলেও ক্ষতি নেই। এটা অত্যাবশ্যকীয় কিছু নয়, তবে পারলে ভালো। আপনার ডিভোর্সের কারণে বেশিরভাগ মানুষই মজা পাবে, বাকি কিছু মানুষ অনুধাবন করতে পারবে আপনাকে কতটা মানসিক যন্ত্রণার মাঝ দিয়ে যেতে হচ্ছে।

.

কীভাবে সমবেদনা জানাবেন?

১. মানুষের কষ্টের কথা ভালোমতো, মনোযোগ দিয়ে সময় নিয়ে শুনুন।

২. অপরের কষ্ট শুনবার সময় কখনো বাধা দিয়ে নিজের কষ্টের কথা বলতে যাবেন না।

৩. আপনি পুরোপুরি অনুধাবন করতে না পারলে তাকে বুঝিয়ে দিন অনেকটা আন্দাজ করতে পারছেন। সত্যটাই বলবেন।

৪. আপনার একই ধরণের কষ্ট থাকলে পরে সময় হলে সংক্ষেপে তাকে বলতে পারেন।

৫. কখনো- “আরে কিচ্ছু না, সব ঠিক হয়ে যাবে, ব্যাপার না” এসব সস্তা কথা বলতে যাবেন না।

৬. তাকে ধন্যবাদ দিন যে সে আপনাকে আপন মনে করে শেয়ার করেছে।

৭. অপরের কষ্টের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন, অপরের গোপনীয়তাকে সম্মান দিন।

৮. মানসিকভাবে নির্যাতনের স্বীকার হলে সমবেদনা জানানো খুব কঠিন, অন্তত গায়ে হাত রেখে, নি:শব্দে আলিঙ্গন করলেও কারও কষ্ট লাঘব হতে পারে।

৯. ছোট বাচ্চাদের ইমোশনকে গুরুত্ব দিয়ে আপনার ভুলগুলোকে শেয়ার করে তাদেরকে সমবেদনা জানাতে পারেন, কনফিডেন্স বাড়াতে পারেন। আপনি হয়ে উঠবেন প্রিয়পাত্র।

দুনিয়ার সব মানুষকেই জীবনের কোনো একটা সময়ে চরম খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এর কোনে ব্যাতিক্রম নেই। কখনো অপরের কষ্ট কে তুচ্ছ/ তাচ্ছিল্য করবেন না। যতটা পারা যায় সময় দিন। আপনার কষ্টেও তখন অপরকে পাশে পাবেন। মানুষের বিপদে যদি আপনি কারও পাশে দাঁড়াতে না পারেন, তবে আপনি আসলে তার কাছের কেউ নন।

 

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles