সমাজ এবং রাষ্ট্রের অদূরদর্শিতার অভাব।
১৫৪৩ সালে বিজ্ঞানী Copernicus তার “De revolutionibus orbium coelestium (“On the Revolutions of the Heavenly Spheres”): বইতে উল্লেখ করেন যে পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরে, যা কিনা তৎকালীন ধারণার উল্টো ছিল কারণ তখন মনে করা হতো পৃথিবীই কেন্দ্র এবং সে সময়ের চার্চের ধর্মগুরুরা বলেন এটি নাকি বাইবেলে আছে। যাহোক সেই বই ব্যান্ড করা হয়।
পরবর্তীতে Copernicus যে ঠিক বলেছেন সেটি বলার জন্য ১৬০০ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারী আরেকজন বিজ্ঞানী/দার্শনিক Giordano Bruno কে তৎকালীন ইতালিয়ান চার্চের তথাকথিত ধর্মযোদ্ধারা জীবন্ত পুড়িয়ে মারে। এর পর আবার বিজ্ঞানী গ্যালিলিওকে একই অপরাধে ১৬৩৩ সালে প্রথমে জেলে দেন, তারপর আমৃত্যু গৃহবন্দী করে রাখেন।
শোনা যায় ওই সব ধর্মগুরুদের বিচারের রায় ঘোষণাকালে গ্যালিলিওকে তার বলা কথাগুলিকে বিভ্রান্তকর বলতে বাধ্য করা হয়, কিন্তু রায়ে তার আজীবন বন্দি থাকতে হবে এটি শোনার পর তিনি তার মুখ থেকে ছোট একটি বিখ্যাত বাক্য বের করেন, “Eppur si muove” অর্থ্যাৎ “তারপরেও পৃথিবী ঘুরে”.
যাহোক, এর প্রায় ৩০০ শত বছর পরে সেই চার্চই ঘোষণা করেন যে গ্যালিলিও ঠিক ছিল এবং তিনি কোপার্নিকাসের যে তত্ত্বের কথা বলেছিলেন সেটি সঠিক ছিল।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো আজ প্রায় ৫০০ বছর হতে চললো কিন্তু এখনো সেই কোপার্নিকাস, ব্রুনো বা গ্যালেলিওর পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে পৃথিবীতে অনেক আবিষ্কার হয়েছে এবং তার সুবিধা অনেক বর্তমান ধর্মগুরুরা (তথাকথিত) ভোগ করেও ধর্মের দোহাই দিয়ে নিজেদের সুবিধা আদায়ের জন্য নিজেদের অনেক মত প্রকাশে ব্যস্ত !!
এটি কমবেশি সব ধর্মের তথাকথিত ধর্মযোদ্ধারা করছে।
এখনো পর্যন্ত পৃথিবীতে বহু সংখক মানুষ তাদের ধর্ম সমন্ধে নিজেরা খুব বেশি একটা জানেন না, তারা নির্ভর করে কিছু তথাকথিত গুরুর উপর এবং এই গুরুদের খুব কম সংখকই নিজেদে ধর্মকে ভালো করে জানেন, তাই মানুষকে তাদের মতো কর বুঝিয়ে নিজের ফায়দা লোটার চেষ্টা করেন। এর জন্য সমাজ বা রাষ্ট্র সকলেই দায়ী।
অন্তন্ত, আমার জন্ম দেশে যা দেখা যায়, টোটাল শিক্ষা বেবস্থাই ঘুনে ধরা এবং দেশ জন্মের পর থেকে কোনো সরকারই এর খুব বেশি উন্নতি করতে পারে নেই, আর যদি আসে ধর্মীয় শিক্ষার কথা সেখানে তো চরম অবহেলা !
আর এই অবহেলার কারণে আপনি আমাদের রাজনৈতিক জগতের মতো ধর্ম শিক্ষা বা চর্চায়ও আসছে অদক্ষ লোকের ছড়াছড়ি, তারা আগাচ্ছে ব্যাবসায়িক চিন্তাভাবনায়।
আপনি ২ টাকা ইনভেস্ট করে এবং অযোগ্য লোককে নিয়োগ দিয়ে নড়বড়ে একটা শিক্ষা পদ্ধতির দ্বারা কিভাবে ২০০০ টাকার সার্ভিস আশা করেন। একটি মাদ্রাসার পিছনে আপনি ব্যয় করবেন ১০০০ টাকা, আবার সেখান থেকে যখন একজন ইমাম বা হুজুর তৈরি হবে তাকে দিবেন ২ টাকা বেতন, তাহলে তার কাছ থেকে আপনি কি সার্ভিস আশা করবেন ! দেশে এখন রাজনীতিবিদ বা প্রশাসনের লোকের মতো আলেম-ওলামাদের মধ্যেও চরম কামড়াকামড়ি শুরু হয়ে গেছে।
আমি বেশ কবছর আগে আমাদের গ্রামের বাড়ির মসজিদ কমিটির একটি মিটিঙে ছিলাম। ওখানে মসজিদের নতুন ইমাম নিয়োগ নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছিলো, তার বেতনের কথায় সবাই গড়িমসি অর্থ্যাৎ কত কমে তাকে রাখা যায়, কিন্তু তার Job Description যখন আসলো তখন সবাই মাইল দুনিয়ার ফিরিস্তি তুলে ধরলেন !!!! অর্থ্যাৎ বেতন খুব বেশি দিবো না, তবে কাজ তোমাকে সব করতে হইব।
তাই, আমি খুব একটা অবাক হবো না, আবারো এই ২০২৫ এ দাঁড়িয়ে তথাকথিত গুরুরা যদি আবারো বলে উঠেন সূর্যই পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে!!!
কবি ফররুখ আহমেদের কবিতার মতো প্রশ্ন রেখেছি শেষ করি। “রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরী “!
স্কারবোরো, কানাডা