-5.5 C
Toronto
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫

হঠাৎ কুশাহাটা কেন গেলাম?

হঠাৎ কুশাহাটা কেন গেলাম?
হঠাৎ কুশাহাটা কেন গেলাম

১৯৯০ সালে শতভাগ নিরপেক্ষ ও স্মরণকালের সুষ্ঠ একটি প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ নির্বাচনে জনগণের বিপুল ভোটে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর আমার মাথায় ছিল এলাকার সবচেয়ে রিমোর্ট অবহেলিত অন্চলগুলোর উন্নয়ন করার। সেই সময় দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ইউনিয়নের কুশাহাটা, রাখালগাছি, বেতকা এবং উজানচর ইউনিয়নের জামতলা হাট এলাকা ছিল উপজেলা সদর থেকে অনেক দুরে, অপ্রতুল যোগাযোগ ব্যবস্হার কারণে অনুন্নত, অবহেলিত। তবে কুশাহাটা ও জামতলায় দুটো হাট বসতো প্রতি সপ্তাহে। ফলে ঐসব এলাকা জনগণের একটা মিলন মেলার কেন্দ্রবিন্দুও ছিল ঐ দুটো বাজার বা ব্যবসাকে কেন্দ্র করে। এছাড়া বর্তমান যেটা গোয়ালন্দ সেটা শুনেছি আদতে কুশাহাটা এলাকায় অবস্হিত ছিল ফলে সেই এলাকার কিছু অংশের নাম এখনো ছোট গোয়ালন্দ, বড় গোয়ালন্দ নামে পরিচিত। এক সময় মুল ঘাট সেই এলাকায় ছিল এবং স্টিমার, ফেরী চলাচল করতো সেই ঘাট দিয়ে। বর্তমান গোয়ালন্দকে মুলত ৬ নং ঘাট বলা হতো বলে জেনেছি।

যাহোক ১৯৯০ সালে আমি নির্বাচিত হবার পর প্রথম সুযোগেই কুশাহাটা ও জামতলা হাট দুটোকে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার খাতায় ‘গ্রোথ সেন্টার’ এর তালিকায় লিপিবদ্ধ করে দিতে সক্ষম হই। ফলে কুশাহাটার ব্যপক উন্নয়ন শুরু হয় এবং তিন কোটি টাকা ব্যয়ে বাজারের শেড নির্মাণ সহ বেশকিছু দৃশ্যমান অবকাঠামো নির্মিত হয়। দৌলতদিয়া ঘাট থেকে বেরী বাঁধ ও বিদ্যুত লাইন নেবার পরিকল্পনাও করা হয়।

- Advertisement -

হঠাৎ কুশাহাটা কেন গেলাম?

কিন্তু দুঃখজনকভাবে বিগত সরকারগুলোর আমলে পরিকল্পিত নদী শাসনের অভাবে এবং জনপদ রক্ষার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার কারণে সেখানে নদী ভাঙনে বিগত তিন দশকে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের অনেক পরিচিত জনপদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় এবং আবার নুতন করে চর জেগে উঠে, শুরু হয় নুতন করে জনমানুষের নবতর সংগ্রাম, চাষবাস, বসতী ও স্কুল মসজিদ নির্মাণের প্রচেষ্টা।

কানাডা থেকে ফিরে ১৯৯৭ সালে নদী ভাঙনের খবর শুনে একবার কুশাহাটা ও বেতকা এলাকায় গিয়ে কিছু নগদ অর্থ সাহায্য করেছিলাম।

২০২২ সালে আমার বন্ধুদের সহযোগিতায় শীতের চাদর, টিউবওয়েল ইত্যাদি বন্টন করেছিলাম। দীর্ঘদিন সেখানকার জনসাধারণ অনুরোধ করছিলেন একবার সরেজমিন সেখানে নুতন জেগে উঠা দুর্গম চরান্চল পরিদর্শনে যেতে।

এছাড়া সেখানে আমার দাদার রেখে যাওয়া একশত বিঘা কৃষি জমির খবর নেয়াটাও জরুরী হয়ে পড়েছিল। মা বার বার বলছিলেন, সেখানে আমাদের জমি জমা কারা চষে, কে কি করছে সেগুলো জানা দরকার। আর সুযোগ পেলেই জনগণের খোঁজ নেয়া, অতি পন্ডিত আর আঁতেলদের অতি পাকনামি থেকে নিজেকে রিলাক্স করতে সাধারণ সহজ সরল গ্রামের মানুষদের সাথে মিশতে, কথা বলতে আমি সবসময়ই চেষ্টা করি, সাচ্ছন্দবোধ করি। সবকিছু মিলিয়েই এবার যেহেতু একটু বেশীদিন দেশে থাকার সুযোগ পেলাম, তাই ছুটে গেলাম আমার প্রিয় কুশাহাটা এলাকায়। অনেকেই বলেছেন তারা আগে জানলে আমার সফর সংগী হতেন। আসলে আমি কয়েকজন বন্ধু বান্ধবকেই শুধু বলেছিলাম তবে ঘাটে গিয়ে দেখি কিভাবে যেন খবর পেয়ে অনেক লোকজন চলে এসেছেন, যা আমি আসলেই জানতাম না। চেয়েছিলাম সরাসরি নদী থেকে জেলেদের কাছ থেকে ইলিশ সংগ্রহ করে নৌকার মধ্যে রান্নার ব্যবস্হা করতে। যেটা ১৯৯৭ সালে হারু মৃধা ও নাজিম উদ্দিন চেয়ারম্যান করেছিলেন, সেটা সম্ভব হয় নি এবার। তবে যারা কষ্ট করে এবারও নদীর মধ্যে খাবারের ব্যবস্হা করেছিলেন, সফর সংগী হয়েছিলেন সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

 

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles