-5.5 C
Toronto
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫

বছর শেষের গুঞ্জন

বছর শেষের গুঞ্জন
ছবি Partha Sarathi Das

অনেকদিন পর আবার বেলার ফোন।  অঞ্জন ফোন ধরতেই বেলার রাজ্যের অভিযোগ , কেন এতদিন খোঁজ নাও নি , কি করছো , একেবারে ডুব দিয়ে আছো ?  বেলার অভিযোগ ফুরোতেই চায় না।  বেলার কথাবৃষ্টির এক ফাঁকে অঞ্জন কোনোরকমে বলতে চাইলো , কিছু কাজে খুব ব্যস্ত ছিলাম , এইজন্য তোমার আর খোঁজ নেয়া হয় নি।  বেলা মানতে নারাজ , তর তর করে একগাদা প্রশ্ন ছুড়ে বসলো।  বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে।  বেলা খুব আবেগী , অঞ্জন জানে , তাই ওর সাথে আর তর্ক না করে মৃদু স্বরে জানতে চাইলো , বোলো , কি করতে পারি।  বেলা এবার মউকা পেয়ে গেলো। আচ্ছা , কি করতে পারো মানে ? দেখা করতে চাও না ? আমার এতো কথা জমা হয়ে আছে , তুমি ছাড়া আর কে বলবে এসব আমাকে , আমার আগ্রহ রাজনীতি নিয়ে, তোমার অবজারভেশন না শুনলে আমার পেটের ভাত হজম হয় না।  অঞ্জন টিপ্পনি কাটলো , সেই বাংলাদেশের কচকচানি আবার।  বেলা এবার রেগে গেলো।  দেশে কেমন নৈরাজ্য চলছে , আর তুমি কিনা বলছো কচকচানি।  আরে , আমি কি তাই মিন করেছি।  আমি বলতে চাইলাম , বাংলাদেশ গুজবের দেশ হয়ে আছে , বহুমুখী আর বহুমাত্রিক গুজব নিয়ে লোকজন দিন শুরু করে আর রাতে ঘুমুতে যায়। তবে আমি তোমাকে বছর শেষের কিছু গুঞ্জন শোনাতে পারি , কিন্তু সেসব মূলত এখানকার ।  বেলা এবার কৌতূহলী হয়ে উঠলো।  অঞ্জন তার স্বভাবসিদ্ধ গলা নামিয়ে বলতে শুরু করতেই বেলার যথারীতি অনুযোগ , এতো আস্তে কথা বলছো কেন , কিছুই তো শুনতে পাচ্ছি না। নাছোড়বান্দা বেলা।

আচ্ছা , বেশি কথা না বলে শোনো , আখেরে লাভ হবে , অঞ্জন রসিকতা করতে ছাড়লো না।  অঞ্জন এবার বেলাকে প্রশ্ন করলো , জানতে চাইলে না কি গুঞ্জন শোনাবো? বেলা বললো , আমাকে প্রশ্ন না করে বলতে থাকো , অনেকদিন তোমার বকবকানি শুনি নি।

- Advertisement -

আচ্ছা , একেবারে টাটকা একটা গুঞ্জন দিয়ে শুরু করি।  সেটা হচ্ছে , আমাদের সুদর্শন জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগ করছেন। বেলা এবার না রেগে পারলো না।  বানিয়ে বানিয়ে আর কত বলবে? অঞ্জন বললো, শুনবে তো আগে।  এটা আমার কথা নয়।  ওর বেস্ট বাডি জেরি বাটস লিখেছে একটা কলামে।  এটিই বক্সিং ডের রমরমা খবর।  বলেছে, অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রীল্যান্ড পদত্যাগ করে ওর শেষ সম্ভাবনাটুকুর কফিনে পেরেক ঠুকে দিলো। অঞ্জন মুচকি হেসে বললো – আরে ট্রুডো যাবে তো কি হয়েছে , আরেক সুদর্শন অপেক্ষা করছে গ্রীন রুমে পর্দার পেছনে।  ও জানে , ট্রুডোর প্রতি বেলার একটু ক্র্যাশ বরাবরই আছে। বেলা বললো , হেয়ালি না করে বোলো , কার কথা বলছো।  কে আবার , পিয়ের পলিয়েভ। কি সুন্দর গুছিয়ে কথা বলে।  কঠিন সব কথা , কিন্তু একেবারে রসিয়ে রসিয়ে , হাসতে হাসতে।  ওর কথা শুনে দল মত নির্বিশেষে পুরো হাউস অফ কমন্স একেবারে হেসে ভেঙে পড়ে।

বছর শেষের গুঞ্জন

এই তাহলে তোমার গুঞ্জন , বেলা ফোড়ন কাটতে ছাড়লো না।  অঞ্জনের উত্তর – আছে আছে, আরো আছে।  এখনই ফোন ছেড়ে দিও না।  বোলো তাহলে , বেলা অঞ্জনকে একটু উস্কে দিলো।

এইচ ওয়ান বি ভিসা বলে একটা জিনিস আছে আমেরিকায়, জানো ? বেলার তর সয় না।  আমাকে প্রশ্ন না করে বলতে থাকো।  অঞ্জনের গলায় কিছুটা কৃত্তিম বিরক্তি – আচ্ছা , বিষয়টা জানলে তবেই তো তোমার সাথে আলাপ করা যাবে , না জানলে তো শুরু থেকে শুরু করতে হয় ।  বেলা ওদিক থেকে বলতে লাগলো , এতো প্রশ্ন না করে গুঞ্জনটা একটু বোলো।  এইচ ওয়ান বি ভিসা নিয়ে তো ডোনাল্ড ট্রাম্প এর সমর্থকদের মধ্যে দুটো শিবিরে ভাগ হয়ে গেছে।  বেলা এবার সত্যিই বিরক্ত মনে হলো।  এখনো শপথ নেয় নি , এর মধ্যেই ঝগড়া শুরু হয়ে গেলো? অঞ্জন ব্যাপারটি একটু বুঝিয়ে বলতে চেষ্টা করলো , আসলে এই ভিসার মূল বেনিফিশিয়ারি হচ্ছে একদিকে ইন্ডিয়া , আর একদিকে টেক কোম্পানিগুলো।  শ্রীরাম কৃষাণ নামে এক ইন্ডিয়ান আমেরিকান টেক ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট কে ট্রাম্প এ আই এর তদারকিতে সিনিয়র এডভাইজার  নিয়োগের পর থেকে এই ভিসার অপব্যবহার নিয়ে বিতর্ক উঠে।  এই ভদ্রলোক এক টুইটে এই ভিসার কোটা তুলে দিতে সুপারিশ করবার পর থেকে আমেরিকানরা এই ভিসা নিয়ে কোম্পানিগুলোর জালিয়াতির বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসে ।  ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত নাকি এই ভিসায় আমেরিকায় প্রায় পাঁচ লক্ষ লোক বাইরে থেকে চলে এসেছে।  অভিযোগ উঠেছে, যারা এসেছে , তারা সবাই যে  উচ্চ মার্গের টেক ওয়ার্কার , তা কিন্তু নয়।  এই ভিসায় কোম্পানিগুলো লোক নিয়ে আসে মূলত নিম্ন মজুরিতে খাটিয়ে নেয়ার জন্য।  এমন ও দেখা গেছে , আমেরিকান  ওয়ার্কার দিয়ে বাইরের স্বল্প শিক্ষিত লোকজনকে ট্রেনিং দিয়ে সে দেশের ওয়ার্কারদের  বিদায় করে দেয়া হয়।  বেলার এবার মনে পরে গেলো কানাডার আরবিসি ব্যাংকের কথা।  ও ব্যাংকে কিছুদিন কাজ করেছিল।  তাই এ ব্যাপারটা ও শুনেছে সেই সময় যখন এটা নিয়ে কানাডার মিডিয়ায় তোলপাড় চলছিল।  অঞ্জন বেলাকে একটু পরীক্ষা করতে চাইলো।  না জানার ভঙ্গি করে জানতে চাইলো , বল তো কি হয়েছিল আসলে।  বেলা এবার সুযোগ পেয়ে গেলো।  দেখেছো , দেশের হাল হকিকত শুধু তুমিই রাখো , তাই নয়।  আমরা ও রাখি।  বেলা বলে চললো , ২০১৩ সালের কথা। রয়েল ব্যাঙ্ক অফ কানাডা মানে আরবিসি ইন্ডিয়ার আইগেট নামে এক কোম্পানিকে তাদের লোক নিয়োগের ব্যাপারটা আউটসোর্স করে দেয়।  সেই কোম্পানি একসাথে প্রায়  পঁয়তাল্লিশ জন লোক নিয়ে আসে ইন্ডিয়া থেকে , আর আরবিসি তাদের রেগুলেটরি বিভাগ থেকে সমপরিমাণ কানাডিয়ানকে ছাঁটাই করে।  ছাঁটাই হওয়াদের একজন এটা মিডিয়াকে জানিয়ে দেয়।  আর যায় কোথায়।  বিক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয়রা।  অঞ্জন মনোযোগ দিয়ে শোনায় বেলা বেশ স্বস্তি পেলো।  কথার একফাকে অঞ্জন শুধু বললো , তার মানে , এই কারবার শুধু আমেরিকাতে নয় , কানাডায় ও দেদারসে চলে।  বেলা অঞ্জনকে ফোড়ন কাটতে ছাড়লো না – তুমি তো ইমিগ্রেশন নিয়ে কাজ করো , তোমার তো এটা ভালো জানার কথা।  অঞ্জন ও পাল্টা রসিকতা করে ছাড়লো না  , নিজের কাজের ফাক ফোকর কে বলতে চায়। বেলা ও নাছোড়বানদা   – ইমিগ্রেশন এখানে পুরো ভেঙে পড়েছে।  অঞ্জন কোনোমতে বলতে পারলো – পুরো দেশটার তো এই হাল।  ইমিগ্রেশন একা কিভাবে টিকে থাকবে।  ঘরে ডাকাত পড়লে দেবালয় কি রক্ষা পায় ?

আচ্ছা , ইমিগ্রেশন নিয়ে যখন কথা বলছো, আরেকটা টাটকা গুঞ্জন শেয়ার করি তোমার সাথে।  বেলা এবার বেশ কৌতূহলী হয়ে উঠে।  বোলো , বোলো। একেবারে টাটকা গুঞ্জন হচ্ছে , এবার ইন্ডিয়া অভিযোগ করেছে , কানাডায় ইন্ডিয়ান ছাত্রদেরকে নিয়ে মানব পাচার হচ্ছে। ইন্ডিয়ার অভিযোগ , ইন্ডিয়া থেকে স্টুডেন্ট নিয়ে এসে কানাডা সীমান্ত দিয়ে পাচার করে দিচ্ছে আমেরিকায়। এর সাথে কানাডার অনেকগুলো কলেজ জড়িত এবং তারা কাজ করছে মুম্বাই এর দুটো গোপন সংগঠনের সাথে। বেলা এবার কিছুটা উৎকণ্ঠিত  , এসব কিভাবে সম্ভব।  অঞ্জন কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন মানে সিবিসি নিউজ থেকে একটু পড়ে শোনালো – ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তীব্র শীতে  ইন্ডিয়ার এক পরিবার কানাডা থেকে হেটে মানিটোবার বর্ডার ক্রস করতে গিয়ে চরম আবহাওয়ার শিকার হয় ।    এই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসে। কানাডার কলেজগুলোর যোগসাজশে ইন্ডিয়াতে বসে লোভী এজেন্টরা ছাত্রদের পশ্চিমা দুনিয়ার রঙিন স্বপ্ন দেখায় আর তাতে প্রলোভিত হয়ে লক্ষ লক্ষ ডলারের বিনিময়ে এখানে পাড়ি জমায়। কানাডা পর্যন্ত এসে ও যাদের পোষায় না , তারা এজেন্টগুলোকে ধরে আবার আমেরিকার দুর্গম পথে  পা বাড়ায়। সেই রকম এক ঘটনার শিকার প্যাটেল পরিবার।  ছোট দু সন্তানকে নিয়ে হেটে সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে হিমশীতল দুর্যোগে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।  অঞ্জন বললো, লজ্জার কথা কি জানো , এই স্ক্যাম কানাডার পুলিশ ধরতে পারে নি , এটার কৃতিত্ব ইন্ডিয়ার সংস্থাগুলোর।  তার মানে, বাইরের দেশগুলো কানাডার অভ্যন্তরের জালিয়াতি গুলো হাতে নাতে ধরিয়ে দিচ্ছে।  এই জন্য ট্রাম্প উঠে পড়ে লেগেছে , যতক্ষণ পর্যন্ত মানবপাচার আর মাদক পাচার বন্ধ করতে না পারবে , ততদিন পঁচিশ পার্সেন্ট ট্যারিফ দাও।  কানাডার বেহাল অর্থনীতির চূড়ান্ত ধ্বস নামাতে আর কিছুর দরকার হবে না।   বেলার মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেলো , বিশেষ করে বাচ্চা দুটোর কথা শুনে।

অঞ্জন এবার বললো , চলো , তোমাকে একটা ভালো গুঞ্জনের কথা বলে মন ভালো করে দেই।  বেলা এবার খোঁচা না দিয়ে পারলো না।  ভালো গুঞ্জন আবার কি।  দেশের যা পরিস্থিতি।  বাংলাদেশের কথা বলছো ? তা নয় তো কি।  আচ্ছা , দেশের গুঞ্জন না হয় শোনো। একটা নিউজে দেখলাম , নতুন  একজনকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ আমলা নিয়োগ করা হয়েছে।  অনেকেই বলাবলি করছে, তিনি বাংলাদেশে হিজবুত তাহরির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।  বেলা অঞ্জনের এসব হেয়ালি আর নিতে পারছে না, না বলে আর পারলো না  , এটাতে ভালোর কি দেখলে ? ভালো নয় তো কি ,গত কয়েক মাস ধরে নব্য এমন নেতারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলছে , যাদের  সেরকম কোনো ক্রেডেনশিয়াল নাই ।  এবার একেবারে খোদ একজনকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে আসা হলো , যার ক্রেডেনশিয়াল নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ থাকবার কথা নয়।  আমি প্রফেশনালিজম এর পক্ষে।  যার যেই কাজ , তাকে সেই কাজে লাগাতে হবে , নইলে কাজের কাজ কিছুই হয় না।  দেখছো না , উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে পিনাকী ইলিয়াস এর কত অভিযোগ কারণ ওরা মনের মতো করে বিপ্লব বাস্তবায়ন করতে পারছে না।  উপদেষ্টাদের কেউ কেউ নাকি খোদ ইন্ডিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা র এর ও  এজেন্ট।  ভাবা যায় , ঘরের শত্রু বিভীষণ ?

বেলার ইচ্ছে করছে , অঞ্জনকে ধাক্কা দিয়ে অন্টারিওর ঠান্ডা লেকে ফেলে দিতে।  কিন্তু ও তো টেলিফোনের অপর প্রান্তে , চাইলে ও  তো সম্ভব নয়। অঞ্জন বুঝতে পারলো , বেলার মানসিক অবস্থা ঠিক সুবিধের নয়।  ভাবলো , আরেকবার চেষ্টা করে দেখা যাক।  অঞ্জন এবার বললো , আচ্ছা , এবার সত্যিই একটা ভালো গুঞ্জন দিয়ে শেষ করি।  বেলা চুপ করে আছে , কিছুই বলছে না।  অঞ্জন বলতে শুরু করলো , আচ্ছা , ধরো তোমাকে যদি বলা হয়  , তুমি কাল থেকে আমেরিকার নাগরিক , ব্যাপারটা কেমন লাগবে।  অঞ্জনের এই ট্রিক কাজে লাগলো।  এই গুঞ্জনটি  বেলা নিশ্চয়ই শোনে নি এখনো।  বেলা বেশ চনমনিয়ে উঠলো , এবার আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলো , কিভাবে?  অঞ্জন বললো , ট্রাম্প এর নজর পড়েছে কানাডার উপর। কানাডাকে একান্নতম রাজ্য করে নিতে চায় ভদ্রলোক।  রিয়েল এস্টেটের লোক তো , তাই মনে হয় , এই সুবিশাল রিয়েল এস্টেটের দিকে ঝোক পড়েছে। বেলা বললো, কিছুই বুঝতে পারলাম না।  অঞ্জন বললো, ট্রাম্প এর ইচ্ছে  ,  কানাডা আমেরিকার একান্নতম রাজ্য হউক। তাই তো শপথ ও নেয় নি এখনো অথচ বলতে শুরু করেছে , ট্রুডো এই একান্নতম রাজ্যের গভর্নর হতে পারে।    বেলা না বলে পারলো না , ব্যাপারটা এতো সহজ, চাইলো আর নিয়ে নিলো ? এদিকে এই ডামাঢোলে কেভিন ও লেয়ারী মার্ এ লাগোর দিকে এক পা বাড়িয়ে রেখেছেন মনে হচ্ছে। মিঃ ওয়ান্ডারফুল নামে পরিচিত এই ভদ্রলোক কানাডা আমেরিকা দু দেশেরই নাগরিক , আমেরিকাতেই থাকেন।  শার্ক ট্যাংক নামে টিভিতে একটা প্রোগ্রাম হয় , ওখানে খুব জনপ্রিয় তিনি। মূলত ক্যাপিটালিস্ট ইনভেস্টর। ইদানিং কানাডার আমেরিকার সাথে একীভূত হওয়া নিয়ে খুব ইন্টারভিউ দিয়ে বেড়াচ্ছেন।  উনার ফর্মুলা হচ্ছে , কানাডা আমেরিকা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর মতো অর্থনৈতিকভাবে একটা বন্দোবস্তে যেতে পারে , সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়ে মানুষ এবং ব্যবসা চলাচলকে অবাধ করে দিতে পারে , সেই সাথে একটা কমন মুদ্রা এবং ট্যাক্স সিস্টেম চালু করতে পারে। তার কথা হলো , আমেরিকা তাহলে তাদের উত্তর সীমান্তে বেশি করে নজর দিতে পারে কারণ এই সীমান্তে চীন এবং রাশিয়া ইতিমধ্যে কড়া নাড়ছে। বেলা ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না , বললো, কি আবোল তাবোল বলছে কেভিন। অঞ্জন বিষয়টা আরেকটু খোলাসা করতে চেষ্টা করলো – আসলে কেভিন বোঝাতে চায় , কানাডার আর্কটিক অঞ্চলে চীন এবং রাশিয়া ভাগ বসাতে চায়।  আমেরিকার সাহায্য ছাড়া এই অঞ্চলকে পাহারা দেয়া কানাডার একার পক্ষে সম্ভব নয়। কেভিন সে ব্যাপারটিই বোঝাতে চেয়েছিলেন। বেলা না বলে পারলো না – তুমি বলতে চাও , কানাডিয়ানরা আমেরিকার হস্তক্ষেপ সহজে মেনে নেবে ? মোটেই না , অঞ্জন বেলার সাথে পুরোপুরিই একমত। ইতিমধ্যে কানাডায় কেভিন এর এই বক্তব্য নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।  নেটিজেনরা থেকে শুরু করে সব দলের রাজনীতিকরা বলছেন , কানাডার হয়ে আমেরিকার সাথে বোঝাপড়া করবার জন্য কেভিন কে?  তাকে কে দায়িত্ত্ব দিয়েছে ?  আর পিয়ের পলিয়েভ তো অনেক আগেই বলেছেন , কানাডা কখনো আমেরিকার অঙ্গরাজ্য হবে না। বেলা বললো , ঠিকই তো বলেছে।  লিবারেল পার্টি থেকে কোনো বক্তব্য এসেছে ? অঞ্জনের  ঠিক চোখে পড়ে নি আদৌ লিবারেল কিছু বলেছে কিনা , তবে কিছু মিনিস্টার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছে , এটা তারা ট্রাম্প এর রসিকতা হিসেবে নিয়েছে।  ট্রাম্প তো কত কিছুই বলে , এটাও কানাডাকে নিয়ে তার একটা নির্দয় রসিকতা।  আসলে কথায় আছে না , যাকে  দেখতে না রি  , তার চলন বাঁকা।  তো ট্রুডোর সাথে তার তো বনিবনা হয় না সেই প্রথম জমানা থেকে , তাই সুযোগ পেয়ে ট্রুডোকে খোঁচানো।

অঞ্জনের হোয়াটসআপ থেকে আরেকটা কল বেজে উঠলো। এক নাগাড়ে যে অনেকক্ষণ একজনের সাথে কথা বলবে, তার উপায় হয় না প্রায়ই।  বিশেষ করে দেশ থেকে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে ফোন করা যায় আর সেটির সুযোগ নিয়ে অনেকেই  কল করে বসে ,  কানাডার ইমিগ্রেশন নিয়ে অনেকের কৌতূহল বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর যারা আগে কখনো ভাবে নি বিদেশে পাড়ি জমাবে , তাদের মধ্যে অনেকেই দেশ নিয়ে আগের মতো আশাবাদী নয় , অন্তত ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দেশ থেকে বেরিয়ে আসতে চায়।  এসব ভাবতে গিয়ে অঞ্জন কিছুটা আনমনা হয়ে গেছিলো।  বেলা অপর প্রান্ত থেকে বলে উঠলো , কি কথা বলছো না যে।  স্যরি , আরেকটা ফোন আসছে দেখতে পাচ্ছি।  কেউ একজন দেশ থেকে কথা বলতে চাইছে , এর মধ্যে দুবার মিসকল হয়ে গেলো।  এবার রাখতে হবে।  এবার বেলার পালা।  বুঝতে পেরেছি , মশাই , আপনি অনেক ব্যস্ত মানুষ।  এর পর এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখবো , তাহলে যদি একটু কথা বলবার ফুরসত মেলে।  আর বাজে বোকো না , অঞ্জন  এটুকু বলেই বেলার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলো , বললো,  আবার কথা হবে নতুন বছরে , নতুন বছরের গুঞ্জন নিয়ে।  রাখি তাহলে।  এই বলে অঞ্জন ফোন কেটে দিলো। অঞ্জনের হঠাৎ মনে হলো  , কাজটা ঠিক হয় নি , নতুন বছরের শুভেচ্ছা না জানিয়ে এভাবে ফোনটা রেখে দেয়া , বেলা কি ভাববে , এই ভাবনায় বেশিক্ষন ডুবে থাকবার অবকাশ হয় নি। বাংলাদেশের মিসকল এর কথা মনে পড়তেই অঞ্জন দেখতে পায় ফোনের বোতামে এবার তার নিজের তর্জনী ।

 

টরন্টো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles