-0 C
Toronto
বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫

আমাদের নেইবারহুড

আমাদের নেইবারহুড
আমাদের নেইবারহুড

ছবিটা তুলেছি ঘণ্টাখানিক আগে আমাদের নেইবারহুড থেকে। তখন টরন্টোর কারেন্ট temperature কতো ছিল জানেন? ফিল লাইক -17° Celsius. যদিও কিছুক্ষণ পরপর তাপমাত্রা ওঠানামা হয়। যাই হোক, কানাডার অন্যান্য প্রভিন্স থেকে টরন্টোর আবহাওয়া অনেকটাই সভ্য। তরপরেও এই যে ফিল লাইক -17° Celsius এর শীতের তীব্রতা, সেটা যে কতোটা গভীর তা কেবল বাইরে বের হলেই বোঝা যাবে।

আমি এক সপ্তাহের পেইড ভ্যাকেশনে আছি। মানে এই এক সপ্তাহ আমাকে কাজে যেতে হবে না। কিন্তু বেতন পাব। আমার মোট তিন সপ্তাহ প্লাস এক দিন পেইড ভ্যাকেশন। আর সিক লিভ বাবদ আছে আরো তিন সপ্তাহের পেইড ছুটি। আগামী বছর থেকে আমি চার সপ্তাহের পেইড ভ্যাকেশন পাব ইনশাআল্লাহ। কারণ এই কোম্পানিতে চাকরি আট বছর হলে চার সপ্তাহের পেইড ভ্যাকেশন পাওয়া যায়।

- Advertisement -

তো ভ্যাকেশনের পুরো সময়টা ডোনেট করেছি বাসাতেই। এই যে ধরেন, বড়ো মেয়েকে ড্রাইভ করে সকালে স্কুলে দিয়ে আসা, আবার নিয়ে আসা। তার স্কুল একটু দূরে তো তাই। বাকিগুলো মাশাআল্লাহ নিজেরাই একা স্কুলে যাওয়া-আসা করতে পারে। আবার ধরেন, রান্না-বান্নাসহ ছেলেমেয়েদের সেবা তো আছেই, সেই সঙ্গে সেবা করছি আমার husbandকেও। আমার যখন কাজ থাকে অনেকটা কাজ ওনাকেই করতে হয়। যেমন ধরেন, উনি সবার স্কুলের লাঞ্চ তৈরি করে দেন সকালে। তারপর বড়ো মেয়েকে ড্রপ-অফ করে তারপর নিজের কাজে চলে যান। আমি চলে যাই তো সকাল সাতটার আগে। ফিরি বিকেল পাঁচটা নাগাদ।

তো এখন আমার ভ্যাকেশন। আমার husbandএর কাজগুলোও আমি করছি। সেই সাত-সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে তাদের লাঞ্চ বানানো থেকে শুরু করে, আমিমার ড্রেস-আপে সাহায্য করে বড়ো মেয়েকে ড্রপ-অফ করতে চলে যাই। ফিরে এসে এটা-সেটা গোছানো, রান্না ইত্যাদি করতে হয়। এই ফাঁকে সময়টা প্লেনের গতিতে চলে যায়। তারপর আবার বড়ো মেয়েকে আনতে যাই পৌনে তিনটার দিকে। স্কুল থেকে আসার পর সবাইকে বসিয়ে একটা ভালো মতো লাঞ্চ দিয়ে দিই।

সেগুলো আবার পরিস্কার করে উঠতেই আমার husband বাড়ি ফেরেন কাজ থেকে। তিনি ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ার আগেই তাঁকে একটা healthy smoothie বানিয়ে দিই। তারপর উনি একটু নিউজ দেখেন। হিসেব-নিকেশ দেখেন। ছোট দুটো বাচ্চার আরবি, অংক এগুলো পড়ান। তারপর ওনাকে এক মগ স্পেশাল চা বা কফি বিনিয়ে দিই যত রকম কাজ থাকুক তার ফাঁকে। এটাই নাকি ওনার কাছে সারাদিনের একটা নেশা থাকে। এই চায়ের স্বাদ নেওয়ার জন্য কখনো তিনি বাইরে চা-কফি কিনে খান না। ওসব নাকি ভালো লাগে না।

তো চা-কফি খেয়ে উনি বাড়ি পরিস্কারের কাজ করেন, বাইরে শীতের মধ্যে গারবেজ ফেলতে যান। কখনো কখনো কাজ থেকে এসেই বাচ্চাদের নিয়ে চলে যান ice skating এ। একটু দূরে সরকারি ice skating ফিল্ড আছে। টাকা লাগে না। মাশাআল্লাহ আমার সব কয়জন ছেলেমেলে ভালো skating করতে পারে। আমিও পারি তবে ওদের মতো না।

যাই হোক, রাত আটটার মধ্যে বাচ্চাদের সবাইকে আবার ডিনার দিয়ে দিই। তারপর তো ধরেন তোড়জোড় শুরু হয়। পরের দিন স্কুল। তাদের রেডি করিয়ে বেডে দেওয়া। ঘুমাতে হবে নয়টা-দশটার মধ্যে। তাদের সঙ্গে আমার আবার ঘুমাতে হয় তারা না ঘুমানো পর্যন্ত। তারপর পড়ে থাকা কাজ সব গুছাতে হয় রান্না ঘরকে গুড নাইট জানানোর আগে।

বড়ো দুইজন ছেলেমেয়ে ঘুমাতে যায় দেরি করে। আমার বড়ো মেয়ে নিজেই একা একা সারাক্ষণ স্কুলের পড়াশোনা, assignment, test এসব করে। আবার কীভাবে যেন সব কিছুতে 100% পাচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ। সে নিজেই চেষ্টা করে করতেছে। আমরা তো কিছু হেল্প করি না, পারলে তো করব! আমার অতো ধৈর্য নেই teaching করানোর। তবে তাদের বাবা অংকে হেল্প করেন।

সে গ্রেড টেনে পড়ে। ইলেভেনে যাবে এই সেপ্টেম্বরে। তখন আসল পড়া শুরু হবে। ইলেভেন-টুয়েলভে সে যদি সব কিছুতেই 100% পায়, তবে সে যেকোনো ইউনিভার্সিটিতে যেকোনো বিষয়ে ফুল scholarship নিয়ে পড়তে পারবে। যেটা খুব জরুরি। এদেশে ইউনিভার্সিটির পড়া তো খুব ব্যায়বহুল, স্কুল যতই ফ্রি থাকুক। তো সে যদি scholarship পায়, তাহলে ধরেন তাকে আর লোন নেওয়া লাগবে না। যদিও scholarship না পেলেও সমস্যা নেই, তারজন্য RESP মানে একুকেশন সেভিং প্ল্যান করা আছে। সব বাচ্চার জন্যই করা আছে আলহামদুলিল্লাহ। এটা করলে নিশ্চিন্তে থাকা যায়।

সে আবার Extracurricular activities ভালো maintain করে যেটাও ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পার্পোজ লাগে।

আমি যখন বড়ো মেয়েকে তার স্কুলে ড্রপ-অফ করে বাসায় ফিরছিলাম তখন গাড়িটা থামিয়ে উইন্ডশিলের মধ্য থেকে ছবিটা তুলেছি। কারণ দৃশ্যটা আমার কাছে চমৎকার লেগেছে।

ছবিটা দেখেন। একদিকে আলো, অন্যদিকে ছায়া। যদিও ছায়াটা পড়েছে গাছপালার প্রতিবিম্বের জন্য।

পৃথিবীতে সব মানুষের জীবনেই কিন্তু আছে আলো-আঁধারের খেলা। কারোর জীবেনেই পূর্ণাঙ্গ আলো থাকে না, বা থাকে না আঁধারে ঢাকা।

বলতে পারেন সবার জীবনেই গোপনে বা প্রকাশ্যে এই ছায়া আচ্ছাদিত করে জীবনের একাংশ। সঙ্গে যতটুকু আলো থাকে সেটুকুই ভর করে সামনের পথ খুঁজতে হয়। বেঁচে থাকতে হয় আল্লাহর রহমত নিয়ে। জীবনটা খুবই ক্ষণস্থায়ী। কোনো কিছুর মূল্য নেই জানটা না থাকলে।

আল্লাহ আপনাদের সুস্থ রাখুন।

 

টরন্টো, কানাডা।

জানুয়ারি ৭, ২০২৫

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles