ভাইয়া ফোন রেখে দিল। আমি কল ব্যাক করে বললাম –
– ভাবী কে নিয়ে আমার এখানে চলে আসো। ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট রেখেছি।
– দেখি আসে কি না? আর শোন সন্ধ্যার আগে চলে আসিস গিয়াসউদ্দিনের ওখানে একসাথে চলে যাবো সবাই। এটা বলার জন্য তখন কল দিয়েছেলাম,ভুলে বলা হয়নি। আর শোন গিফট কিনতে হবে না আমি নিয়ে নিয়েছি।
বাসায় ফেরার পথে কয়েক পদের মিষ্টি, সন্দেশ নিলাম। বসায় এসে শুনলাম ভাবীর ভালো কোন শাড়ি নেই। যে গুলো আছে অন্যান্য প্রোগ্রামে পরা হয়ে গেছে, দ্বিতীয় বার পরলে তার সম্মান থাকবে না।
তাই সে যাবে না।
আম্মা ভাইয়া কে ডেকে বললো-
– জানিস তো এমন গো ধরে কি করবি। একটা শাড়ি কিনে দিয়ে পরিবেশ ঠান্ডা কর।
ভাবী শাড়ি কিনতে যাবে না,কি কালার,কিরকম কিচ্ছু বলছে না।
মুটামুটি বিরক্তি নিয়ে শাড়ি কিনতে ভাইয়া চলে গেল।
ভাইয়া দ্রুত একটা হাফ সিল্কের শাড়ি কিনে নিয়ে আসলো।
এবার শুরু হলো কালার পছন্দ হয়নি। আকিকা তে কেউ এমন গোলাপি রংয়ের শাড়ি পরে যায়?
ভাবী যাবেন না,তার মন এখনো খারাপ। তার কোন না কোন অশান্তি থাকা লাগবে-ই।
আমি কোন কথা বলছি না। তার ব্যাপার টা আব্বা-আম্মা আন্দাজ করেছে। শোনতে পাচ্ছি আব্বা বলছেন –
– সবার সাথে গেলে তুমি গিয়াস উদ্দিনের বাসাতেই যাবে আবার তুমি আর পাভেল একা একা গেলে ও গিয়াস উদ্দিনের বাসাতেই যাবে। একা গেলে নিশ্চই পাভেল তোমাকে নিয়ে আইসল্যান্ড যাবে না। বরং সবার সাথে গেলে আনন্দ করে যেতে পারবে, তোমার ভালো লাগবে। কিছু ভালো স্মৃতি থাকবে মনের মধ্যে। রেডি হও,আনন্দের সময় আনন্দ কর।
পাতা কে নিয়ে তোমার কোন সমস্যা হবার কথা না।
তুমি যেমন তোমার অধিকার নিয়ে আছ,সে ও তার অধিকার নিয়ে-ই আছে। তাছাড়া পাতা ঝগড়া -ঝামেলার মানুষ না। আমার মেয়ে বলে বলছি না,তুমি নিজের মনকে প্রশ্ন করে দেখো।
মানছি তার ভুলের বয়সে একটা ভুল করে ফেলেছে। আমরা বিয়ে দেয়ার পরে ও কোন সমস্যা হতে পারতো। সমস্যা তো বলে কয়ে আসে না বউ মা। যাও রেডি হও,কেউ যখন মূল্যায়ন করে তাকে ও মূল্য দিতে শিখো।
গিয়াস উদ্দিন ভাই আমাদের দেখে যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখালে ও আমার সাথে কোন কথা বলছেন না।
এমন কি তাকিয়ে দেখছে না। হয়তো তার মনে এখনো আমার উপর অভিমান,অভিযোগ আছে।
গিয়াস উদ্দিন ভাই গণিত খুব ভালো বুঝতেন এবং বুঝাতেন। তিনি ভাইয়ার বন্ধু আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন পারিবারিক ভাবে। সবাই রাজি তার গার্মেন্টস আছে, নিজের বাড়ি-গাড়ি।
আমি তখন অর্ণবের প্রেমে অন্ধ। বয়স কম তাই ভয়ে বলতে পারিনি এই বিয়েতে আমার আপত্তি আছে।
দিকবিদিকশুন্য হয়ে অর্ণব কে বিয়ে করে ফেলি।
উপযুক্ত পাত্রের হাত ছেড়ে অপাত্রে মাল্যদান করা টা কেউ মেনে নিতে পারে না।
আম্মা এখন সেই রিয়্যাক্ট টা ই দিচ্ছেন। বেশ কয়েক বার বলে ফেলছেন-
– আজকে কই থাকার কথা ছিল আর কি হলো।
গিয়াস ভাইয়ের বউয়ের আশেপাশে যাওয়ার ইচ্ছে না থাকা সত্বেও যেতে হলো।
গিয়াস ভাই আমাকে উপেক্ষা করে চলছে ঠিক তার বউ খুব আগ্রহ দেখাচ্ছে আমার উপর ।
এটা সেটা জিজ্ঞেস করছে। খেয়েছি কি না,কোন অসুবিধা হচ্ছে কি না।
তার কাছাকাছি আমাকে রাখতে চাচ্ছেন যতটা সময় ছিলাম। আমার মুখের দিকে কেমন আকুলতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে একটু পর পর।
তার এই আকুলতার কারন কি বুঝতে পারছি না।
বাসায় ফেরার সময় আমার কন্টাক্ট নাম্বার টা রাখলেন।
গিয়স ভাই আমাদের বিদায় জানাতে তার বাড়ির মূল গেইট পর্যন্ত আসলেন।
সবাই গাড়িতে উঠে যাবার পর আমাকে বললেন-
– পাতা, একটু নেমে আসবে কথা ছিল।
আমি সবার মুখর দিকে তাকিয়ে নিরব সম্মতি নিয়ে নেমে আসলাম।
– আমি তোমার সাথে অভিমান করে কথা বলিনি। আমার উপর তো তোমার কোন রাগ নেই। আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা নাই তাই অভিমান থাকার কথা না। তুমি ও তো কথা বলতে পারতে।
– গিয়াস ভাই আসলে কি বলবো। আমি ও তো অপরাধ করেছি। এখনের বয়স তখন হলে সাহস করে সত্য বলতে পারতাম,আসলে আমার সাহস ছিল না। তাই নিজেকে অপরাধীর কাতারে- ই রাখি।
গিয়াস ভাই আর কোন কথা বললেন না। মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলেন বড় বড় কদম ফেলে।
এক প্রান্তে জমেছে অভিমান,আরেক প্রান্তে প্রেমহীন হৃদয়। তার জন্য কেন জানি আমার মনে কখনো প্রেম জাগেনি। যতটুকু যা ছিল শ্রদ্ধা।
বাসায় ফিরে যে যার রুমে চলে গেলাম। আম্মা থমথমে মুখে একবার আমার রুমে আসলেন, পরাগের দিকে কিছুক্ষন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে চলে গেলেন।
আম্মার মনে কি চলছে আমি জানি।
আম্মার সাথে কথা বলার সাহস পেলাম না।
রাত দুইটার দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেছে। একলাফে উঠে বসলাম,আমার চারপাশ টা কেমন জানি এলোমেলো লাগছে। হঠাৎ করে আমার সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে।
এই অখাদ্য কেন যে খেতে ইচ্ছে করছে? মনেহচ্ছে এতো রাতে বাহিরে গিয়ে কিনে নিয়ে আসি।
আব্বার রুমের দিকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখলাম কাজ হলো না। ভাবী ডায়নিং রুমে পানি নিতে এসেছে।
– পাতা, এখনো ঘুমাওনি।
– ঘুমে ছিলাম হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল।
– গিয়াস উদ্দিনের কথা মনে হইছে?
খুব বিরক্ত লাগছে ভাবী কে। মানুষ কে সারাক্ষণ এতো ছোট করে কথা বলে কি আনন্দ পায়?
উত্তর না দিয়ে চলে গেলাম,আবার ফিরে আসলাম। সে যেহেতু ছোট করে কথা বলে আমি তার সাথে মজা নিতে এসেছি। সবসময় সহ্য করতে নেই। অন্যায় হলে প্রতিবাদ করা লাগে।
– ভাবী একটা সিগারেট এনে দিতে পারবে,ভাইয়ার কাছ থেকে।
চোখ গুলো বড় বড় করে তকিয়ে বললো-
– কেন? কার জন্য? ঘটনা কি?
– দুইটা আনতে পারলে ভালো হয়। একটা তুমি একটা আমি।
আমাদের ব্যার্থ প্রেমিকদের জন্য নিজে কে পুড়িয়ে শেষ করে দিব আজ রাতে।
ভাবী আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে চলে যাচ্ছে।
পেছন থেকে ডেকে বললাম,উপটান আনতে গিয়ে তো সেদিন নিজেই উপটান হয়ে গিয়েছিলে। আজ অনন্তত ফিরে এসো।
নিজের রুমে এসে মোবাইল হাতে নিলাম। দেখলাম গিয়াস উদ্দিন ভাইয়ের বউ মানে সুমি ভাবি মেসেজ দিয়েছে।
এতো রাতে মেসেজ কেন দিয়েছে,তারা ও কি আমার মতো ঘুমাতে পারছে না।