
একাধারে তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী, অন্যদিকে তিনিই আবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি হলেন মমতা ব্যানার্জি। গোটা ভারত এই নামেই চেনে। যদিও নিজের এই নামকরণ (মমতা) নিয়ে মোটেই খুশি নয় মুখ্যমন্ত্রী নিজে। এমনকি নিজের জন্মদিন নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।
বুধবার জনসমক্ষেই নিজের মুখে সে সব কথা স্বীকারও করলেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেই ফেললেন’…এমনকি আমার নামটাও আমার পছন্দ নয়। কিন্তু হয়ে গেছে। এগুলো ছোট্টবেলার ঘটনা এবং ছোটদের সামনেই ছোট্ট ছোট্ট ঘটনাগুলো বলা উচিত।’
এদিন কলকাতার ধনধান্য অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় স্টুডেন্টস উইকের সমাপনী উদ্যাপন অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী, দলের সাংসদ, বিধায়ক, মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতা পুলিশ কমিশনারসহ বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা।
সেখানেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগঘন হয়ে পড়েন মমতা ব্যানার্জি। নিজের নাম ও বয়স নিয়ে একরাশ হতাশা, ভালো না লাগার কথা বলতে শোনা যায় তার গলায়। তিনি বলেন- ‘সবাই আমার জন্মদিন জন্মদিন করে (উইকিপিডিয়া অনুযায়ী জন্ম ৫ জানুয়ারি) কিন্তু আমি মনে করি আমি এখনও জন্ম গ্রহণই করিনি। আমার একটা কবিতা আছে যেখানে লেখা আছে ‘জন্ম হবে সেদিন, যেদিন এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেবো।’
এ প্রসঙ্গে তার অভিমত ‘আসলে আমরা সকলেই ‘হোম ডেলিভারি’ তো! আমি যখন ছোট ছিলাম আমার নামটাও নিজে দিইনি, বয়সও নিজে দিইনি, পদবীও নিজে দিইনি। অনেকে আমাকে হ্যাপি বার্থডে বলে। কিন্তু দিনটা আমার কাছে মোটেই পছন্দকর নয়। ওটা জন্মের সনদে উল্লেখিত বয়স। সেটা বাবা-মাই করে দিয়ে গেছেন। আমি জানতামও না, আমি যখন কলেজে পড়ি ততক্ষণ আমার নিজের দাদাই আমাকে একদিন বলল তুই কি জানিস বাবা কি করে তোর বয়স দিয়েছে? আমি বললাম কি করে? ও বলল, তোর আর আমার বয়সের পার্থক্য মাত্র ৬ মাস। বাবা স্কুলে গিয়ে তার এক পরিচিতকে বলল তুমি একটা ওদের বয়স বসিয়ে দাও। কিন্তু তার তো কোন দোষ নেই। আগেকার দিনে এই সমস্যাটা ছিল। যারা আমরা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছি অর্থাৎ ‘হোম ডেলিভারি’। কাজেই আসল বয়সটা কিন্তু লুকিয়ে থাকে। নকল বয়সটাই (জন্মের সনদে উল্লেখিত) মানুষ ধরে নেয়। আমি যখন এই বিষয়টা জানতে পেরেছিলাম তখন অনেকবার চেষ্টা করেছিলাম… আমার পাঁচ বছর বয়স বাড়ানো রয়েছে। আমার বইতেও এই বিষয়টি লেখা রয়েছে। এমনকি আমার নামটাও আমার পছন্দ নয়।’
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়কালীন কিছু কথা স্মৃতিচারণ করে মমতা বলেন, ‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় যাবার সুযোগ পেয়েছি কম। সেই সময়টা আমি রাজনীতি করতাম, তাই ভয়ে ভয়ে যেতাম। পা থেকে মাথা পর্যন্ত এমন কোন জায়গা নেই যে আমাকে মারা হয়নি, মৃত্যুর হাত থেকে আমি বেঁচে আছি। তাই সে সময়টা যেতে ভয় পেতাম। দুই বছরের স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রমের মধ্যে এক বছর কলেজ করেছিলাম লুকিয়ে লুকিয়ে। আমার পরিচয় তখন কেউ জানতে পারেনি।’ সেসময় অনেক কষ্ট করে, বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে পড়াশোনা করতে হয়েছে বলেও জানিয়েছে মমতা।
তার অভিমত ‘আমি যখন হাঁটি তখন আমার ব্রেন চলে। আমি যদি না হাঁটি তখন আমার ব্রেন চলে না। মনে হয় কিছু যেন একটা করতে পারছি না।’
পশ্চিমবঙ্গের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের প্রশাসনিক দায়িত্বভার তার কাঁধে। পাশাপাশি দলকেও পরিচালনা করতে হয়। সেই মুখ্যমন্ত্রীকে এদিন স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে খোশমেজাজে দেখা গেল।
মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানালেন ‘সব সময় শক্ত কথা ভালো লাগে না। কখনো কখনো একটু আনন্দ, একটু উল্লাস, একটু উচ্ছ্বাস মানুষের প্রাণকে আনন্দময় করে তোলে।