[ ঠিক-বেঠিক জানি না, শুনেছিলাম অপারেশনে ফুল এনেস্থেশিয়া দেয়া হলে অর্থাৎ অজ্ঞান করে সার্জারি করা হলে জ্ঞান আর না ফেরার সম্ভাবনাও থাকে কিঞ্চিৎ। যে কারণে কিছু ডকুমেন্টে সিগনেচার করিয়ে নেয়া হয়। অর্থাৎ–চিকিৎসক দায়ি নয়। আবার, জ্ঞান ফিরলেও শারীরিক কোনো কোনো যোগ্যতা কিছুটা হ্রাস পেতেও পারে। আমি টেনশনে ছিলাম–আমার লেখার ক্ষমতা না ক্ষতিগ্রস্ত হয়! আগের ক্ষিপ্রতায় আমি আবার ছড়া লিখতে পারবো তো! আগের দ্রুততায় আমি আবার গদ্য লিখতে পারবো তো! ব্যাপারটা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিলো বলেই, সার্জারির পরের দিন ভোরেই উপুর্যুপরি ঘুমের অষুধের সঙ্গে ব্যথা নাশক মরফিনের ঘোরের মধ্যেই আমি লিখতে বসেছিলাম আমার অপারেশন বিত্তান্ত–‘এভ্রিথিং ইজ রিলেটেড টু এভ্রিথং এলস্’। ফেসবুকে অনেকেই সেটা পড়েছেন।
দেখলাম আমার স্মৃতিশক্তি পুরোপুরি কাজ করছে এবং কাজ করছে দ্রুত লিখবার ক্ষমতাও। দু’দিন পরেই লিখতে বসেছিলাম ছড়া–পরীক্ষামূলক। সেটাও সার্জারির ওপর। ছড়াটা অর্থেক লিখেই নিজেকে বলেছিলাম–বেটা ঘাবড়াইস না। সব ঠিক আছে! সেই লেখাটার বাকি অর্ধেক আর লিখিনি।
এরপর পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়েই আমার লেখালেখির ঘোড়াটা দৌড়ে ছুটেছে টগবগিয়ে।
আজকের ছড়াটা সেই সময়েরই একটি প্রচেষ্টা ছিলো। রচনাকাল লক্ষ্য করলেই সেটা বোঝা যাবে।
ছড়াটা উৎসর্গ করছি তিন দৈনিকের তিন ছোটদের পাতার তিন সম্পাদক, প্রীতিভাজন লেখকবন্ধু Mukul Shahriar Mahhfuz Rahmaan Ashique Mustafa মুকুল শাহরিয়ার, মাহফুজ রহমান এবং আশিক মুস্তাফাকে।]
এই যে ছড়াটা এখানে–
বড়লোক আর পরলোক
লুৎফর রহমান রিটন
বড়লোক দামি জামা-প্যান্ট-টাই-সু-পরে।
ঈশ্বর নির্দয় গরিবের উপরে।
বড়লোক তিনবেলা ভরপেট খানা খায়
সন্ধ্যায় হুইস্কি ও বরফের দানা খায়।
স্বর্গীয় প্রাসাদেই থাকে ওরা, মিছা না।
গরিবের বস্তিতে থাকে না তো বিছানা।
এক বেলা খাওয়া জোটে তিনবেলা খায় না
ঈশ্বর গরিবকে কিছু দিতে চায় না।
ঈশ্বর প্রাসাদেই থাকে, এটা সত্যি।
গরিবের সংসারে অভাবের দত্যি।
বস্তিতে ঈশ্বর কোনোদিন আসে না
গরিবকে ঈশ্বর মোটে ভালোবাসে না।
গরিবেরা কালো কালো বড়লোক ফর্সা
ঈশ্বর করে শুধু বড়লোকে ভর্সা।
গরিবের চেহারায় নাই চাকচিক্য
বড়লোক চিরকাল বটের বিরিক্ষ।
ঈশ্বর তুমি খালি অগো পিছে ঘুরবা?
গরিবেরা ঘাস মানে ছোটোমোটো দুর্বা?
তাগো তুমি খালি খালি পদতলে পিষবা?
আর খালি বড়লোক সনে তুমি মিশবা?
গরিবের ছেলেমেয়ে মোটে সুন্দর না
ওদের জীবনে শুধু অভাবের ঝর্ণা।
অন্ন-বস্ত্র ভালো চিকিৎসা পায় না
কোনোদিন সমুদ্র-কুয়াকাটা যায় না।
শরীরটা লিকলিকে। হাভাতের দিষ্টি!
বড়লোক ছেলেমেয়ে ফুটফুটে মিষ্টি।
ঝকঝকে চকচকে জামা-জুতা পরনে
সুঠাম ও তরতাজা শারীরিক গড়নে।
বড়লোকদের বউ ঝলমলে সেক্সি
ঠিক য্যান হিরুইন! আজীবন দেখছি!
দামি শাড়ি। শরীরটা হুরিদের অংশ
গরিবের বউগুলো পেত্নির বংশ!
রূপ-যৌবন নাই আছে শুধু হাড্ডি
ঈশ্বর খেলিতেছে হাডুডু-কাবাড্ডি…
দুনিয়ার সবকিছু পায় শুধু বড়লোকে
গরিবেরা কবে পাবে? আশাবাদ–পরলোকে…
অটোয়া ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১
[আলোকচিত্র/ ইয়ার মোহাম্মদ পিয়ারু, বাংলা একাডেমি একুশের বইমেলা প্রাঙ্গণ ২০১৪]