-5 C
Toronto
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫

হাতে কলমে আমাদের পড়াশোনা

হাতে কলমে আমাদের পড়াশোনা
হাতে কলমে আমাদের পড়াশোনা

তখন আমি ৫ম বর্ষ এম বি বি এস এর  ছাত্র। এ সময় আমাদেরকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ক্লাস করতে হতো স্যারদের কাছে। হাতে কলমে আমাদেরকে রোগ এবং তার চিকিৎসার বিষয়গুলি বুঝিয়ে দিতেন স্যাররা। কি শীত, কি বর্ষা, কি বৈশাখী কোন কিছুই আমাদেরকে রুখতে পারতোনা আমরা প্রতিদিন সন্ধায় ওয়ার্ডে হাজির হতাম। একদিন কোন এক ওয়ার্ডে আমরা ক্লাস শেষ করে রাত ৮৩০/৯টার দিকে যখন ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছি ৪/৫ জন বন্ধু মিলে তখন দেখি একজন নার্স একজন রোগীকে আই ভি (Intravenous) ইনজেকশন দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা ৫ জনই সে রোগীর বেডের পাশে গেলাম উদ্দেশ্য আই ভি নিজে হাতে দেব। আমরা পাঁচ জন যে কোন একজন চেষ্টা করে সফল হলেই হলো। পাঁচ জনের মধ্যে অনেকটা প্রতিযোগিতার মতো শুরু হলো। আমি সব সময় ধৈর্য ধরে যে কোন বিষয়ের জন্য অপেক্ষা করি তাই এখানেও সবার পিছনে থাকলাম।

এক এক কারে চার বন্ধু রোগীর ডান হাতের শিরা যেখানে আই ভি দেয়া হবে তা পেতে ব্যর্থ হলো। আসলে চামড়ার উপর থেকেতো এটা বোঝা কঠিন অনুভুতি বা আন্দাজ আর প্রাকটিসের উপর ভর আর দক্ষতা করেই এই আইভি দেয়া হয়। সব শেষে আমি সুই (সম্ভবত বাটার ফ্লাই নিডল) হাতে নিলাম। রোগীকে চার বার ফোটানো হয়েছে তারপরও রোগীর অপেক্ষা। আমার চার বন্ধু আমাকে রেখেই উধাও।

- Advertisement -

আমি মাত্র একবার চেষ্টা করলাম। কি আশ্চর্য একবারেই সফল। আইভি ষ্টার্ট করে রোগীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে একাকী পথে হোষ্টেলে ফিরে এলাম।

প্রেক্ষিত-২

আমি সে সময় ইর্ন্টান, শিশু ওয়ার্ডে ডিউটি করছি। একদিন রাত ১১টার সময় দেখলাম আমাদের  পরের ব্যাচের একজন ইন্টার্ন আর নার্স একটি নবজাতকের পায়ের শিরা খুঁজছে আই ভি দেয়ার জন্য। আমি কাছে গেলাম। ছোট ভাই আমার রুম মেট ইন্টার্ন। এই বাচ্চার পায়ের শিরায় আইভি দেয়া খুব জরুরী তাই তার চেষ্টা করছে। বলা বাহুল্য বাচ্চাদের হাতের শিরা অনেক সময় খুঁজে পাওয়া যায়না সেক্ষেত্রে পায়ের পাতার বা আশে পাশের শিরাই ভরসা আমি ওদের পাশে দাঁড়িয়ে দেখছি। এক সময় আমি চাইলাম। ওরা আমার হাতে সুইটি দিল। বিসমিল্লাহ বলে চেষ্টা করতেই একবাবেরই পেয়ে গেলাম। সুই আর সিরিন্জের মধ্যের সংযোগ সরু টিউবের মধ্য রক্ত আসতে দেখে নার্স আগেভাগে টেপ দিয়ে বাচ্চার পায়ের শিরার স্থান সু রক্ষিত করলো আর ইন্টার্ন  ডাক্তার ঝপ করে বসে দুহাত আমার পায়ে ছোয়ালো (দুষ্টুমী) কদমবুসীর ছলে।

প্রেক্ষিত-৩

২০০২ সালের এক রাতে ২/৩ টার দিকে আমার ছেলের মা অসুস্থ্য হয়ে পড়লো। ঐ রাতে স্যালাইন জোগাড় করে আনলাম কাছের ঔষধ দোকানীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে। বাসায় আমার শ্যালক আছে আমাদের সাথে। সেও ডাক্তার। স্যালাইন যখন রেডি করলাম তখন আমার স্ত্রী তার ভাইকে বললো-তুই দে। এ ঠিক ঐ অনুভুতির মতো যখন ডাক্তার নিজে তার পরিবারের চিকিৎসা করা থেকে বিরত থাকে।

আমরা দুজন বাসায় আমি আর তার ডাক্তার ছোটভাই। বললাম- ঠিক আছে, তুমিই দাও আইভি। সে ৪ থেকে ৫ বার সুই ফোটালো কিন্তু ব্যর্থ হলো। এবার তার বোনকে বললো-আপা আমি পারলাম না।

ভাই বোন দুজনাই চুপ। আমি বললাম কি করবো? এবার সে বললো -তুমি দাও।-আমি ফোটালেতো ব্যথা পাবে, আমি বললাম। সে এবারও চুপ। বাটার ফ্লাই সুই হাতে নিয়ে একবার ট্রাই করতেই সফল। টেপ দিয়ে সব ফিক্স করলাম। সে রাতে সে ঘুমিয়েছিলো পরম শান্তিতে। পুরা রাতটা স্যালাইনের দিকে খেয়াল করে কেটেছে আমার।

আজ অনেক দিন পর এগুলি মনে পড়ে। ভাবি কি এমন রহস্য যে এগুলি সম্ভব হতো। মনে হয় চেষ্টা করলে আমরা অন্তর দৃষ্টিতে সব দেখতে পাই। যখন আইভি দিতাম তখন রোগীর শিরা দেহের উপরে চামড়া থেকেই নিশানা করতাম তবে যখন সুই ফোটাতাম তখন মনে হতো চামড়ার নিচে আম সব দেখতে পাচ্ছি সুই একটু বায়ে কি ডানে ঘোরাবো এটি মন বলে দিতো। চমৎকার এ অনুভুতি। মানুষকে ভালোবাসা, দায়িত্ব আর নিষ্ঠা থেকে জন্ম নেয় এ সব অনুভুতি। এ সব আপনার মধ্যে থাকলে আপনিও বর্থ হবেন না কোন কাজে।

ইয়েলোনাইফ, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles