-5 C
Toronto
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫

মা-খালার কারণেই ডুবলেন টিউলিপ

মা-খালার কারণেই ডুবলেন টিউলিপ
টিউলিপ সিদ্দিক

বাংলাদেশে শেখ পরিবারে টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে গর্ব ও গৌরবের শেষ ছিল না। ৫ আগস্টের আগে পর্যন্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে টিউলিপ সিদ্দিক ছিলেন বড় বিজ্ঞাপন। ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের জন্যও তিনি ছিলেন জাতিগত মর্যাদার প্রতীক। সেই টিউলিপ সিদ্দিক দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ মাথায় নিয়ে মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি)-এর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। মন্ত্রী হিসেবে দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি দমনের দায়িত্বে ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন টিউলিপ। প্রধানমন্ত্রী স্টারমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। দেশে রাষ্ট্রক্ষমতার পালাবদলে মা ও খালার দুর্নীতির অভিযোগের উত্তাপ বাংলাদেশি বংশো™ভূত এই ব্রিটিশ মন্ত্রীকে স্পর্শ করেছে। মূলত মা ও খালার কারণেই ডুবতে হলো বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপকে। টিউলিপ সিদ্দিক হলেন বাংলাদেশে গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত দীর্ঘপ্রলম্বিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে। শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানার বিরুদ্ধে আর্র্থিক দুর্নীতির একাধিক মামলা এখন তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শেখ হাসিনা পরিবারের প্রায় সব সদস্যই এখন দুর্নীতির তদন্তজালে পরিবেষ্টিত। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট উপহার নেন টিউলিপ। লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড এলাকায় একটি অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা ফ্ল্যাটে কয়েক বছর বসবাস করেন টিউলিপ। ওই সময় নিজের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ওই ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করেছিলেন তিনি। টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগ অনুমিত ও অপ্রমাণিত।

পদত্যাগপত্রে টিউলিপ উল্লেখ করেন, তিনি ভুল কিছুই করেননি। পদত্যাগের কারণ হিসেবে টিউলিপ বলেন, এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইকোনমিক সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেলে সেটা সরকারের কাজ থেকে মনোযোগ ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে পারত। যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে ২০১৫ সালে লন্ডনের একটি আসন থেকে প্রথমবার টিউলিপ এমপি হন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর গত জুলাইয়ে তিনি ইকোনমিক সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাঁরও নাম আসার বিষয়টি নিয়ে টিউলিপ পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, ‘পরিবারের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততার বিষয়টি সবাই জানে। যখন আমি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিই, সে সময় আমি আমার পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছি।’ পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের জন্য টিউলিপকে চিঠি দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর এ নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিধিবিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা লাউরি ম্যাগনাস তদন্ত করেছেন। সেই তদন্তের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার টিউলিপকে জানান, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা কোনো অভিযোগের প্রমাণ পাননি ম্যাগনাস। স্টারমার বলেন, ‘আপনার (টিউলিপ) জন্য দরজা খোলা রইল।’ মঙ্গলবারই প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের কাছে লেখা এক চিঠিতে ম্যাগনাস বলেন, তদন্তে টিউলিপের বিরুদ্ধে কোনো অন্যায়ের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

- Advertisement -

তবে দুঃখজনক বিষয় হলো, বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সুনাম ক্ষুণœ হওয়ার সম্ভাব্য ঝুঁকির ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন না। এদিকে বুধবার রাতে বাংলাদেশে টিউলিপের পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘চুরি যাওয়া বাংলাদেশি তহবিলের সঙ্গে সম্পর্কিত সম্পত্তি এবং সম্পদ, যার মধ্যে পূর্ববর্তী সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্কিত সম্পত্তিও রয়েছে সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা উচিত। যদি প্রমাণিত হয়, আত্মসাৎ করা অর্থ থেকে তাঁরা সুবিধা নিয়েছেন, তাহলে আমরা আশা করি, ওই সম্পদ বাংলাদেশকে ফেরত দেওয়া হবে।’ লন্ডনের সানডে টাইমসকে অধ্যাপক ইউনূস সম্প্রতি বলেছেন, ‘টিউলিপ সিদ্দিক হয়তো লন্ডনে যে অর্থ ও সম্পত্তি উপভোগ করছিলেন তার উৎস পুরোপুরি বুঝতে পারেননি। কিন্তু তিনি এখন তা জানেন এবং বাংলাদেশের জনগণের কাছে তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত।’ গত আগস্টে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ৯টি অবকাঠামো প্রকল্প থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। তাতে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যের সঙ্গে টিউলিপেরও নাম আসে। গত মাসে এ ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। আদালতে দাখিল অভিযোগের নথির বরাতে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বাড়তি ব্যয় দেখিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। রাশিয়ার সঙ্গে সেই চুক্তি করতে টিউলিপ সিদ্দিক সহযোগিতা করেন। চুক্তিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ব্যয় ১০০ কোটি ডলার বেশি দেখানো হয়।

দুদকের অনুসন্ধান শুরুর পর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাজ্যের দ্য সানডে টাইমসকে বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের লন্ডনের সম্পত্তিতে টিউলিপের বসবাস করার খবর আসার পর তাঁর (টিউলিপ) ক্ষমা চাওয়া উচিত। টিউলিপের ব্যবহার করা সম্পত্তিগুলো নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত এবং ‘ডাহা ডাকাতির’ মাধ্যমে অর্জিত হয়ে থাকলে তা সরকারের কাছে ফেরত দেওয়া উচিত। এরই মধ্যে গত সোমবার দুদক জানায়, তথ্য গোপন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকার পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে টিউলিপের মা শেখ রেহানা, বোন আজমিনা সিদ্দিক ও ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। তিন মামলাতেই টিউলিপ সিদ্দিক ও শেখ হাসিনাকেও আসামি করা হয়েছে।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles