রবিবার..ছুটির দিন কানাডায়। দুপুরে বিরিয়ানী-টিরিয়ানী খেয়ে ঢেঁকুর তুলতে তুলতে কিছুক্ষন বিছানায় গড়াগড়ি দিলাম। বাংলাদেশ-আল জাজিরা-কোরোনা-ভ্যাকসিন এই সব নিয়া জ্ঞানগর্ভ ভাবলাম কিছুক্ষন। দেশকে সঠিক পথে আনার জন্য…মানুষকে চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া মূলক গোটা পাঁচেক স্ট্যাটাস পরিকল্পনা করলাম। তারপর তাকিয়ে দেখলাম জানালার বাইরের শহর আজ ঝকঝকে রোদে ভেসে যাচ্ছে। আহা..এমন দিনে কি আর ঘরে বসে থাকা যায়? তরংগকে গুতিয়ে তৈরী করলাম। বাইরে তখন feels like মাইনাস 17 ডিগ্রী সেলসিয়াস! হিম শীতল বাতাস। কাঁচের মতো চোখে মুখে ঝাপটা দিচ্ছে! নিজেদের আপাদমস্তক আবৃত করে বাপ-ব্যাটা কানাডিয়ান রোদ্র (??) স্নানে বের হলাম!!
কিছুদূর গিয়ে বললাম, “দুই জনে একটা সেলফি তোলো”।
তরংগ বিরক্ত হলো, “এই ঠান্ডায় আমাকে গ্লোভ্স থেকে হাত বের করতে হবে। তুমিতো টাচ সেনসেটিভ গ্লোভ্স কিনে দাও নাই। আর সবচেয়ে বড় কথা কিসের ছবি তুলবা তুমি? আমাদের সব কিছু ঢাকা। মানুষ মুখ দেখতেই পাবে না। এইটা কি সেলফি হবে?!”
আমি কন্ঠ স্বর যতোটা সম্ভব গম্ভীর করে বললাম, “আজকে তোমাকে আরেকটা লাইফ লেসন শেখাবো। মনোযোগ দিয়ে শোনো…মনে রাখবা…ছবি শুধু কি কি আছে তা দেখানোর জন্য তোলা হয় না। কি কি নাই তাও দেখানোর জন্য তোলা হয়।”
ছেলে আমার দিকে বিরাট কনফিউশন নিয়ে তাকিয়ে বললো, “এই কথার মানে কি?”
আমি একটু কেশে কথা বলা শুরু করলাম। ঠিক সাড়ে দশ মিনিট টানা কথা বলে যখন থামলাম তখন তরংগের চেহারায় আগের চেয়েও বেশি কনফিউশন!! সংগে একটু আতংকও যুক্ত হয়েছে মনে হলো…কেন!!
আমি তাড়াতাড়ি বললাম, “কোন সমস্যা বাবা? Any problem?”
ছেলে ক্লান্ত গলায় বললো, “তোমাকে একটা সত্য কথা বলি। তুমি যখন একটানা এই সব কঠিন কঠিন লাইফ লেসন বলতে থাকো তখন আমার কান অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায় আর মাথা ঘুরতে থাকে। তোমাকে প্রশ্ন করার চেয়ে ঠান্ডায় হাত বের করে সেলফি তোলা অনেক সহজ ছিল। আসো এখন ছবি তুলি।”
মন খারাপ করে ছবি তুললাম। ছেলেকে বিরাট ঝাড়ি দেয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ঠিক সাহস পেলাম না!
টরন্টো, কানাডা