-8.2 C
Toronto
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫

সমাপ্তি

সমাপ্তি
সমাপ্তি

জগতের ভয়ংকর সুন্দর ব্যাপারগুলোর মধ্যে একটি হলো জীবনের অনিশ্চয়তা। তিল তিল করে গড়ে তোলা পরম আদরের জীবন, গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে গলে পড়া সূর্যের সোনালি রশ্মি কিংবা নিখুঁত নকশা কাটা এক একটি তুষারকনা – সবই নশ্বর। যে কোনও সময় ফুরিয়ে যাবে তাই অসম্ভব সুন্দর। আর  ভোরবেলা থেকে শুরু করে গভীর রাত অব্দি আমাদের এই যে কত শত আয়োজন, প্রিয়জনদের ভালো রাখার সার্বক্ষনিক প্রচেস্টা, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা, এ সবই যে কোনও সময় পেছনে ফেলে আমার রওনা দেব সেই চরম অনিশ্চয়তার দিকে, সাথে যাবে না কিছুই।

তবে অজানার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার ব্যাপারটা যত হঠাৎ করে হয়, আমার মনে হয় ততই ভালো। ইহকালের সমাপ্তির ব্যাপারটা যদি খুব সিডিউল মেইনটেইন করে আসে তো বিপদ। মৃত্যু কিংবা মৃত্যুর সম্ভাবনা- এর কোনওটাই আমাদের বেশিরভাগের কাম‍্য নয়। তবু কখনও কখনও আসন্ন মৃত্যু কিংবা এর সম্ভাবনার ব্যাপারে আমরা জেনে যাই। এই সংবাদ সাধারনত মরনব‍্যধি রূপে আসে। সত‍্যাকারের আচানক মৃত্যুর চাইতেও বহুগুন বেশি পীড়াদায়ক এই সময় বেঁধে দেওয়া আসন্ন মৃত্যুর সম্ভাবনার দিনগুলো। যার হয় শুধু সেই বোঝে। ঐ যে স্কুলের ভাব সম্প্রসারণের চিরাচরিত বাক‍্যটি যা বলে আরকি….. কি যাতনা বিষে….. কভু আশীবিষে দংশেনি যারে…।

- Advertisement -

এই সময়ের আমাদের শহরকেন্দ্রিক মানুষগুলো বর্তমানে বাস করা ভুলতেই বসেছে।চারপাশের সবারই ভবিষ্যতের নেশা। ভবিষ্যৎ গড়ার জন‍্য যত আয়োজন। আর একসময় খুব দ্রুতগতিতে চলতে থাকা এমন একজন মানুষের যখন জীবনসীমা বেঁধে দেওয়া হয়, তখন হঠাৎ করেই তার সামনে থেকে মরীচিকার মতো শূন্যে মিলিয়ে যায় সেই ভবিষ্যৎ।তখন সে হঠাৎ করেই বর্তমানের দিকে তাকায়, হয়ত কিছুটা অতীতের হিসেবও করে। জীবনের হিসেবে নিজেকে বড় হেরে যাওয়া মানুষ বলে মনে হয়। ধীরে ধীরে বুঝতে পারে তার এই যুদ্ধে সে একা। হয়ত ভবিষ্যতের রাজপ্রাসাদ গড়তে গিয়ে সে হারিয়ে ফেলেছে সব প্রিয়জন, কিংবা ভাগ‍্যের নির্মম পরিহাসে একে একে ছেড়ে গেছে সবাই। ভালোবাসাহীন জীবনে নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। আসন্ন মৃত্যু তাকে মনে করিয়ে দেয় মহাকালের ক্ষুদ্রতম যেই অংশে তার বিচরন, সেখানে তার নিজস্বতা বলতে কিছুই নেই। তার জীবনের অস্তিত্ব একটি ছাড়পোকার অস্তিত্বের মতই মূল‍্যহীন।

এই মানুষটি বোঝে যে তার অহংকারের উঁচু সিঁড়ি বেয়ে চলতে থাকা পিঁপড়েরও একদিন পতন হবে। অসাড় হবে শরীর, প্রাণহীন দেহ লুটিয়ে পরবে মর্ত্যের নিছক ভূমির উপর। সর্বশেষ করুন পরিনতির আগে আগে ডুবন্ত এই মানুষ খড় কুটো আকড়ে ধরে বাঁচতে চায়। আর বাঁচার সেই সময়টুকু দীর্ঘস্থায়ী না করতে পারলেও অর্থবহ করে তোলার আকুতি কাজ করে তার মাঝে। সে অন্ধকারে হাঁতড়ে বেড়ায় একটুকু আলোর রেখা।

এটিই সেই মৃত্যুপথযাত্রী মানুষটির জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়। এই সময়ে বিধাতা তাঁর কাছে পাঠায় তাঁর নিজস্ব কিছু মানুষ। তারা ফেরেশতার মতো হয়ে এই অসহায় মানুষটির কাছে আসে। পৃথিবীর সমস্ত আবেগ এবং ভালোবাসা দিয়ে আঁকড়ে ধরে রাখে তাকে। জীবনের শেষ সময়টুকু যেন ভালোবাসাময় হয়। এই ভালোবাসা- নতুন ভালোবাসা। অন‍্যরকম স্বার্থহীন ভালোবাসা। এখানে চাওয়া পাওয়ার ব্যাপার থাকে না। এটি সেই মানুষটির জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। এই সময় বেশিরভাগ মানুষ ছেড়ে চলে যায়। শূন্যস্থান পূরণ করে খাঁটি মানুষেরা। তারা তাদের হৃদয়ের সোনা দিয়ে আগলে রাখে মানুষটিকে এবং শেষ পর্যন্ত এই মানুষগুলোর জন্যই অসুস্থ একলা তুচ্ছ সেই মানুষটির জীবন হয়ে ওঠে অর্থবহ এবং সার্থক।মানুষটি যদি দ্কিবি জীবন পায়, সে জানে জীবনের মূল‍্য। আর যদি এখানেই শেষ হয় তবে কি চমৎকার একটি সমাপ্তিই না হয়।

শেষ পর্যন্ত দেখা যায় যুগ যুগান্তরের মাঝে সেই মানুষটিই পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান মানুষ।

বি.দ্র. এটি বিগত এক বছরের টানাপোড়েনের অভিজ্ঞতা থেকে লেখা। আমি আমার জীবনে উপস্থিত সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।না জেনে অনুপস্থিত সকলের প্রতিও আছে অভিমানমাখা ভালোবাসা। মহান আল্লাহ পাক যেন আমাদের সকলকে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ করে রাখেন। আমিন।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles