![টরন্টোর পথে পথে টরন্টোর পথে পথে](https://www.thebengalitimes.com/wp-content/uploads/2025/01/Picture17-3.jpg)
এক. শুভ জন্মদিন প্রিয় অজয় দাশগুপ্ত। টরন্টো আগমনে ধন্যবাদ স্বনামধন্য মঞ্চ অভিনেতা জন মার্টিন। গত সপ্তায় সম্ভবত অস্টেলিয়ার সিডনির সূর্য এই আমাদের ঠান্ডা শীতল টরন্টোর বাংলা টাউনের ‘উনদাল রেস্তরা’য়।বুক চিতিয়ে জড়িয়ে ধরায় বল্লো-অস্টেলিয়া থেকে আমাদের চট্টগ্রামের স্বনামধন্য কবি লেখক অজয় আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বড়ই আনন্দ লাগলো চট্টগ্রামের সেই সময়ের স্মৃতি জড়িত মানুষ মনে করে শুভেচ্ছা জানিয়েছে।
জন মার্টিন বাংলাদেশের শুরু থেকে মধ্যকালের যখন মঞ্চে নাটক শক্ত ভাবে উঠে দাঁড়াচ্ছে তখনকার দুর্দান্ত অভিনেতা। কেউ যদি শত মঞ্চায়িত তখন তোলপাড় করা ‘বিষাদ সিন্দু’ মঞ্চ নাটকে মূল চরিত্রে জন মার্টিনকে দেখে থাকেন তারা বুঝবেন তিনি কত বড় একজন মঞ্চ অভিনেতা এবং দেশে নাটকে তার অবদানের কথা। আজ টরন্টোতে জন মার্টিনের ভাগ্নি ফ্লোরা সূচি ডি’রোজারিও মঞ্চে মামার মত অভিনয়ে সুনাম করছে।
প্রবাসে গলাবাজ মানুষই বেশি তবে বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকে যাদের জন্মদিনের শুভেচ্ছা খবর ছাপা হয় সেই অল্পস্বল্প নামী প্রবাসধারীর মধ্যে একজন অজয় দাশগুপ্ত। বাংলাদেশের এখনতো টালমাটাল অবস্থা আপাতত তাই চট্টগ্রামের অজয় বলে গর্ববোধ করি।
দুই. একবার ভাবীর জন্মদিন ১২ জানুয়ারি টরন্টো থেকে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে সকাল বেলা ঢাকায় নামলাম। সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘর কবি সুফিয়া কামাল হলে ওনার জমজমাট জন্মদিন উৎসব অনুষ্ঠন হবে। জেটলেগে আমার চোখ ঘুমে ঢুলুঢুলু।ঘুমিয়ে না ঘুমিয়ে দিলাম দৌড় সন্ধ্যা হতে। গিয়ে দেখি হল ভর্তি সব মান্যগণ্য অতিথি। বক্তাগণ বকে যাচ্ছেন মঞ্চে। দেখে খুশিতে ধাক্কা দিয়ে কাঁপিয়ে দিলেন ভাবীর তখনকার প্রিয় একজন হাইপার নারী আইনজীবী।
উনি মঞ্চে হলে চরকীর মত ঘুরছেন অনুষ্ঠান সামলাতে। অথচ সামলানোর কিবা ছিলো অনুষ্ঠানতো গড়িয়ে যাচ্ছে নিজে-নিজেই। তখন আমার ভাড়া করা স্টুডিও ছিলো ভূতেরগলিতে। টেনশানে ঘুম আসেনি। হাতের কাছে পেলাম এক দুই বাই আড়াই ফুট ছোট পেইন্টিং। সেটিই হাতে করে নিলাম। ছবিটিতে ছিলো এক উদ্দীপ্ত নারী বাতাসে উড়ন্ত লম্বা এলোমেলো চুল। ঝড়তান্ডব পিছু ফেলে বীরচিত পদক্ষেপে সামনে এগুচ্ছে।যেন ভাব এমন নারীগণ আর পরাজিত হবেনা। মনে মনে ভেবে নিয়ে ছিলাম ভাবী নারী অগ্রগতির অন্তপ্রাণ মানুষ ছবিটি খুব পছন্দ করবেন। হলো উল্টো।।
মঞ্চে উঠে ছবিটি হাতে দিতে তিনি ধমকে উঠলেন – একি একটা পাগলীর ছবি নিয়ে এলে। ভালো কিছু ছবি গিফট তালিকায় কি নাই তোমার! আমি বুঝলাম ভুল হয়ে গেছে। টিপটিপ ভাবীদের বাড়িতে কালেকশানে দেশীবিদেশী কোন শিল্পীর ছবি নেই। বাড়ির উপর নিচ সব ঘরের সব দেয়ালে ধাক্কা ধাক্কি করছেন শিল্পাচার্য জয়নুল সুলতান কামরুল হাসান রশীদ চৌধুরী দেবদাস চর্কবর্তী মোর্তজা বশীর কালীদাস কর্মকার মনিরুল ইসলাম প্রাইম জায়গাটি দখলে রেখেছেন মকবুল ফিদা হোসেন। ভাবীর আমার ছবি ভালো লাগাতে আমার কি আরো কাজ করে যেতে হবে। হয়তো ! তাহলে বেঙ্গল গ্যালারীরতে দুইবার আরো সব অন্যান্য গ্যালারীতে আমার একক প্রদর্শনী হলে ভাবীতো কেনেন অন্যদের মত বড় ছবি গুলো।কেন! আসলে ভাবীর মুড কিংবা মেজাজ হাওয়ার মত! কখন যে কোনদিক নেবে তিনি হয়তো নিজেই জানেন না।শুভ জন্মদিনে দেশ থেকে দূরে মিস করছি ভাবী।
তিন. বিটিভির সেই সুন্দর সময়ের বাংলা সংবাদ পাঠিকা স্বনামধন্য আসমা আহমেদ ঢাকায় La Gallery, Allance Francaise de Dhaak চলমান যৌথ প্রদর্শনীতে আমার ‘Drea Face-3’ ছবিটির সামনে দাঁড়িয়ে একটি নিজের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। ধন্যবাদ আসমা।টরন্টোর বেশ কয়েকজন আমাকে কল করে তা জানাতে,হুশ হলো আরে প্রদর্শনীতো শুরু হয়ে গেছে। টরন্টোতে শীত মাইনেস ১০ থেকে ২০শে ওঠা নামা করছে। যদিও কিছু থেমে নেই সাদা স্নোর আস্তরে গোটা শহর বাংলা টাউন সবই জমজমাট চলছে। শুধু আমারই মনে হয় ঠান্ডায় মগজ থেকে কিছু কিছু জিনিস শ্লিপ করে যায়।
খেয়ালই ছিলোনা প্রদর্শনীটি শুরু হয়ে শেষ হতে চল্লো। প্রিয় শোভন ভাইয়ের কাছে উপস্তিত থাকার প্রমিস করেও পারলামনা। বাংলাদেশ সরকার যা করতে পারেনি তা করে দেখিয়েছেন রেইনবো ফিল্ম সোসাইটির কর্ণধার ও গত ২৩টি বছর ধরে প্রতি বছর স্বগর্বে আয়োজিত হওয়া ঢাকা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর আহমেদ মুজতবা জামাল (Ahmed Muztaba Zamal) ও তার টিম। এ এমনি ছোটখাটো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল নয়,গোটা ফিল্মী দুনিয়াতে বাংলাদেশের একমাত্র নাম জানা সিনেমা উৎসব। যাতে ইরান তুরস্ক জাপান ইটালি ফ্রান্স আমেরিকা আর্জন্টিনা ভারত কোরিয়া এমনকি আরবী দুনিয়ার ও ফিল্মের ব্যক্তিত্বগণ অতিথি হয়ে ঢাকায় আসেন।
প্রায় ২যুগ এই বিশাল আয়োজন সামাল দিয়ে আসছেন মুজতবা জামাল ওরফে আমাদের সবার প্রিয় শোভন ভাই।এবার যা ঘটালেন তিনি তার নজির পৃথিবীর সভ্য অসভ্য কোনো দেশের নামী বড় ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে নেই। শতের ওপরে বিদেশী অতিথির সন্মানে এবং বাংলাদেশের সন্মনেও ফিল্ম ফেস্টভ্যালের সাথে ঢাকার Alliance Francase এর লা গ্যালারীতে ডিরেক্ট Francois Grosjean এর সহযোগীতায় PERSPECTIVE- A Contemporary Group Art Exhibition 2025 প্রদর্শনীটি আয়োজন করলেন। কিউরেট করলেন তরুণ শিল্পী লুৎফা মাহমুদা আকতার। বরণ্য শিল্পী রফিকুন্নবী থেকে শুরু করে শিশির ভট্টাচার্য আনিসুজ্জামান,তাজউদ্দিন আহমেদ সহ বাংলাদেশের প্রধাণ সব শিল্পীর কাজ রয়েছে।স্বশরীরে শিল্পীবন্ধু তাজউদ্দিন আহমেদ প্রদর্শনীতে হাজির ছিলেন।ফোনে কথা হলে বিস্তারিত হয়তো জানতে পারবো।
স্কারবোরো, কানাডা