-8.2 C
Toronto
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫

টর‌ন্টো‌তে বাংলা‌দেশী অভিবাসী‌দের সন্তান‌দের‌কে চ্যালেঞ্জ

টর‌ন্টো‌তে বাংলা‌দেশী অভিবাসী‌দের সন্তান‌দের‌কে চ্যালেঞ্জ
টর‌ন্টো‌তে বাংলা‌দেশী অভিবাসী‌দের সন্তান‌দের‌কে চ্যালেঞ্জ

কানাডার টর‌ন্টো‌তে বাংলা‌দেশী অভিবাসী‌দের জন‌্য তাঁ‌দের ছে‌লে সন্তান‌দের‌কে লালনপালন ক‌রে স্বাভা‌বিক মানুষ ক‌রে তোলা খুব চ্যালেঞ্জিং হ‌য়ে প‌ড়ে‌ছে।

ইদা‌নিং দেখা যা‌চ্ছে, ছে‌লেবাচ্চাদের বে‌শিরভাগই অনলাইন গে‌মে আসক্ত অথবা  নানা ধর‌নের মাদকে আসক্ত। অথবা উভ‌য়‌তেই।

- Advertisement -

ফলাফল হি‌সে‌বে এদের অ‌নে‌কেই হাইস্কুল থে‌কে  ঝ‌রে পর‌ছে অথবা ক‌লেজ বিশ্ব‌বিদ্যালয় থে‌কে।

অ‌নে‌কেই আবার অবসাদগ্রস্থ, অ‌স্থিরতা, ট্রমা, এডিএস‌ডিসহ নানা মান‌সিক রোগে ভূগ‌ছে। অ‌নেক বাবামা‌য়েরা হয়ত তা টেরই পা‌চ্ছেনা।

কেউ কেউ মান‌সিক রোগ থে‌কে নিষ্কৃ‌তি পেতে ড্রাগ নি‌চ্ছে। যে ড্রা‌গের নাম বা কথা বাবামা‌য়েরা হয়ত কখ‌নো শো‌নেই নাই।

আবার কেউ কেউ ড্রাগ নি‌তে নি‌তে আগে থে‌কেই চলমান মান‌সিক সমস্যাকে আরো প্রকট ক‌রে তুল‌ছে।

কানাডার টর‌ন্টোতে বসবাসরত ‌বাংলা‌দেশী অ‌ভিবাসী বাচ্চাতের গে‌মে (অনলাইনসহ) ও মাদ‌কে আস‌ক্তিকে  নীরব মহামা‌রিই বলা যায় এখন।

নীরব মহামা‌রি বল‌ছি এ কার‌নে যে, আমা‌দের সন্তান‌দের এ সমস্যাকে অ‌নে‌ক বাবামাই সমস্যা হি‌সে‌বে উপল‌ব্ধিই কর‌তে পার‌ছেনা  অথবা উপল‌ব্ধি কর‌তে পার‌লেও অ‌নেকে তা স্বীকার কর‌ছেনা।  লোকলজ্জার ভ‌য়ে। ‌যে‌হেতু স্বীকার করেনা, সে‌হেতু সমাধা‌নের জন্য  অন্যকারো কা‌ছে সাহায্যও চায়না এবং পায়না। সমস্যা আরো গভীর থে‌কে গভীরতর হ‌তে থা‌কে।

টর‌ন্টোর বাংলা‌দেশী অ‌ভিবাসী প‌রিবা‌রের মে‌য়ে বাচ্চাগু‌লোও যে এ সমস্যাগুলোর মধ্য দি‌য়ে যা‌চ্ছেনা, তা কিন্তুু নয়। ত‌বে মে‌য়ে বাচ্চাগু‌লোর আক্রা‌ন্তের সংখ্যা বা হার ছে‌লে‌ বাচ্চা‌দের চে‌য়ে তুলনামুলকভাবে একটু কমই বল‌বো।

উল্লেখ্য এ কথাগু‌লো আমি আমার কা‌জের অ‌ভিজ্ঞতা ও  গ‌বেষণার আলো‌কে লিখ‌ছি।

এখন প্রশ্ন হল কেন এমন হ‌চ্ছে?

আমা‌দের ছে‌লে বাচ্চাগু‌লো কী বাবামা‌য়ের কথা শুন‌ছেনা?

না‌কি তা‌দেরকে বাবামা‌য়েরা য‌থেষ্ঠ প‌রিমান আদর যত্ন  কর‌ছে না বা তা‌দের প্রতি যথাযথ ম‌নো‌যোগ দি‌চ্ছে না?

য‌দি তাই হয়, তাহ‌লে দায়টা আস‌লে কার?  বাবামা দায়ী না‌কি বাচ্চারাই দায়ী?

আমি ব‌লি, বাচ্চা‌দের এ সমস্যার  পিছ‌নে তাঁরা নি‌জেরা দায়ী নয়।

আমরা বাবামা‌য়েরা দায়ী।

আমার এ কথা বাবামায়েরা যে মান‌বেন না– তাও জা‌নি।

টর‌ন্টো‌তে যাঁ‌দের সন্তা‌নেরা ঠিকঠাক মত বড় হ‌চ্ছে তাঁ‌দের কথা আলাদা।

তা‌দের হয়ত দু‌শ্চিন্তা তেমন একটা নেই। সে রকম যে কেস সংখ্যায় খুব বে‌শি তা বলার সু‌যোগ বোধ হয় নেই।

যাঁরা আমার কথা মানতে চা‌ইবেন না, তাদের যু‌ক্তি হতে পা‌রে এ রকমঃ

আমরা কী আমা‌দের বাচ্চা‌দের খারাপ চাই?

আমরা আমা‌দের বাচ্চা‌দের সুন্দর ভ‌বিষ্যত নির্মান করার জন্যই তো কানাডা এসেছি।

চাকুরীর বড় বড় পদপদবী, বড় বড় ব্যবসা-বা‌নিজ্য, বড় বড় গা‌ড়ি-বা‌ড়ি আর আরামদায়ক জীবন–সব ছে‌ড়েছু‌ড়েই তো এসেছি সন্তান‌দের মানু‌ষের মত মানুষ কর‌তে।

প্রথম কথা হল, আমা‌দের বাচ্চারা কখ‌নোই আমা‌দের ব‌লে নাই যে, চ‌লো বাংলা‌দেশ ছে‌ড়ে কানাডা পাড়ি জ‌মাই। আস‌লে আমরা আমা‌দের নি‌জে‌দের সুখশা‌ন্তি আরাম আয়েশের জন্য কানাডা  এসে‌ছি। বাচ্চা‌দের জন্য এসে‌ছি-এটা এক‌টা অজুহাত।

অবশ্য কোন কোন বাচ্চা এইচএস‌সি  বা এ লে‌ভেল পাশ করার পর কানাডা অথবা অন্যান্য দে‌শে উচ্চ শিক্ষার জন্য যে‌তে চায়। সে সমস্ত বাচ্চা‌দের নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা কমই থা‌কে। কারন তারা অল‌রে‌ডি ম্যাচিউরড হ‌য়ে যায়।

যাক, যে কথা বল‌ছিলাম। ছে‌লে সন্তান স্বাভা‌বিকভা‌বে বে‌ড়ে না ওঠার জন্য বাবামা দায়ী।

এখা‌নে অবশ্য আমি বল‌বো বাবারাই বে‌শি দায়ী। কারন বাবারা ছে‌লে বাচ্চা‌দের‌কে পর্যাপ্ত “কোয়া‌লি‌টি” সময় দেয়না অথবা দি‌তে পা‌রেনা। কারন তাঁরা অ‌নেক ব‌্যস্ত থা‌কে। সংসা‌রে কর্তা ব‌লে কথা!  ‌

“কোয়া‌লি‌টি” সময় কী। সেটা আরেক লম্বা আলোচনা। সে‌দি‌কে এখন না যাই। ত‌বে সেটা সম্প‌র্কে আমরা সবাই কিছুটা হ‌লেও জানি। বাচ্চা‌দের কথা ম‌নোযোগ দি‌য়ে শোনা, তাদের যু‌ক্তিপূর্ন  মতামতকে সম্মান করা, তা‌দের শারী‌রিক, মান‌সিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্ত্বা  ভা‌লো রাখা, পড়া‌লেখায় খোঁজখবর রাখা, তা‌দের সু‌খে উল্লে‌সিত হওয়া, ক‌ষ্টে ব্যাথিত হওয়া, তা‌দের পা‌শে থাকা  যাতে তারা নিরাপদ বোধ ক‌রে-এগু‌লোর জন্য যে সময় দেয়া হয় সেগু‌লো‌কেই মোটাদা‌গে “কোয়া‌লি‌টি” সময় দেয়া বলা যায়।

ব‌লিউড মু‌ভি “এনিম্যাল” যারা দে‌খে‌ছেন তা বল‌তে পার‌বেন বাবা তাঁর ছে‌লে সন্তান‌কে সময় না দেয়ায় কীভা‌বে ছে‌লে সন্তান‌টি এনি‌মেল হ‌য়ে গেল?

ছে‌লে বাচ্চাদের প্রথম ও কা‌ছের গুরুত্বপূর্ন বন্ধু এবং রোলম‌ডেল হল তার বাবা।

বাবার সা‌থেই একজন ছে‌লে বাচ্চার সব‌চে‌য়ে ভা‌লো সময় কা‌টে। একবা‌রে ছোটবেলা থে‌কেই।

একটা ছে‌লে বাচ্চার জন্য বাবার অনুপস্থি‌তি অথবা বাবার বন্ধুত্বহীন অ‌তি‌রিক্ত কড়া শাসন বা নিয়ন্ত্রন ছে‌লে বাচ্চাটি‌কে  মান‌সিকভা‌বে দুর্বল ক‌রে দেয়। তার ম‌নে ভয় এমনভা‌বে বাসা বা‌ধে ‌যে, কোন সিদ্ধান্ত সে নি‌জে নি‌তে পা‌রেনা। বাবার মাত্রা‌তি‌রিক্ত নিয়ন্ত্রন তার কন‌ফি‌ডেন্স বাড়ানোর পথ‌কে চরমভা‌বে বাধাগ্রস্থ ক‌রে। মান‌সিক সমস‌্যার শুরু তখন থে‌কেই। সেটা থে‌কে বাচ‌তে অন্য বিষ‌য়ে আসক্ত হওয়া শুরু হয়। হ‌তে পারে তা গে‌মিং অথবা মাদক।

বাচ্চার আন‌ন্দের  অথবা ক‌ষ্টের মুহূর্তগু‌লো বাবা ছাড়া অনন্য কা‌রো সা‌থে শেয়ার কর‌তে ভয় পা‌য়। কারন সেফ‌টি ইস্যু। কারন বাবামার দা‌য়িত্ব  শুধু সন্তান‌কে ভা‌লোবাসা ও শাসন ক‌রাই না, সন্তা‌নকে শারী‌রিক ও মান‌সিকভা‌বে নিরাপদে রাখাও গুরুত্বপূর্ন দা‌য়িত্ব। ‌

“সন্তান য‌দি বাবামার সা‌থে ছোটছোট আনন্দ ও বেদনার কথা শেয়ার কর‌তে ভয় পায়, তাহ‌লে এক সময় সে অ‌নেক বড় বিপ‌দের কথাও বাবাাম‌ায়ের সা‌থে শেয়ার করেনা।” ফ‌লে তার জীব‌নে বড় কোন দুর্ঘটনা ঘ‌টে‌ গে‌লেও বাবামা তা টের পায়না। যখন টের পায় তখন আর‌ কিছু করার থাকেনা।

ছে‌লেবাচ্চারা সাধারনত বাবাকে অনুসরন করে।

বাবা হ‌চ্ছে ছে‌লে বাচ্চা‌দের প্রা‌থমিক হি‌রো অথবা রোল ম‌ডেল।

বাবার যথাযথ সা‌ন্নিধ্য না পে‌লে সম্প‌র্কের ম‌ধ্যে দুরত্ব বাড়‌তে থা‌কে। সেটা এক সময় নিয়ন্ত্রনের বাইরে চ‌লে যায়। তখন  ছে‌লে বাচ্চারা মান‌সিক সম‌স্যায় ভুগ‌তে থা‌কে। তা থে‌কে প‌রিত্রা‌নের জন্য গে‌ম খে‌লে অথবা মাদ‌কের দি‌কে ঝু‌কে প‌রে যেটা আগেই ব‌লে‌ছি। চরম পর্যা‌য়ে গে‌লে কেউ কেউ আত্নহত্যার পথও বে‌ছে নেয়। এটা আমা‌দের কাম্য নয়। আমরা আমা‌দের সন্তান‌দের‌কে সুখী, স্বাস্থ্যবান, কর্মঠ ও সফল হি‌সে‌বে দেখ‌তে চাই। করণীয় কী তাহ‌লে?

করণীয় হল,

বাচ্চা‌দের কথা ম‌নো‌যোগ দি‌য়ে শুন‌তে হ‌বে নো ম্যাটার হোয়াট…। তাহ‌লে তা‌দের‌কে বুঝ‌তে পার‌বেন।

তা‌দের কথা বুঝ‌তে পার‌লে ভুল‌ বোঝাবু‌ঝি কম‌বে। সম্পর্ক মজবুত হ‌বে।

তা‌দের‌ মতামত‌কে গুরুত্ব দিতে হ‌বে। সব কথা মান‌তে হ‌বে বল‌ছিনা। কিছু কিছু যা যৌ‌ক্তিক তা তো পালন কর‌তেই হ‌বে।

ম‌নে রাখ‌তে হ‌বে, পিতামাতা হয়ে‌ছেন ব‌লেই আপ‌নি তা‌দের মা‌লিক। এটা ঠিকনা। “তারা আপনার মাধ্যমে এ পৃ‌থিবী এসেছে, আপ‌নি তা‌দের স‌ঠিকভা‌বে বড় ক‌রে তুল‌বেন। আপ‌নি তা‌দের প্যারেন্স, মা‌লিক না।”

এক সময় কৃতদা‌সের মা‌লিকানা দাবী করা যেত। সেটা অন্ধকার যু‌গে। এখন মানু‌ষের মা‌লিকানা দাবী করা যায়না। কর‌লে তা হ‌বে  বিশ্বমান‌বা‌ধিকার ও শিশু অ‌ধিকারের প‌রি‌পন্থি। তা বাংলা‌দেশ ও কানাডার আইনেরও প‌রিপ‌ন্থি।

আপ‌নিও এক‌দিন কা‌রোর মাধ্যমে এ পৃ‌থিবী‌তে  এসেছি‌লেন। তাঁরাও আপনার মা‌লিক ছিলনা।

আপনার বাবামা আপনার  ওপর অন্যায় অথবা অন্যায্য আচরন করে  থাক‌লেও সেটার প্রতি‌শোধ আপ‌নি আপনার সন্তা‌নের ওপর নি‌তে পা‌রেন না। য‌দিও বে‌শিরভাগ ক্ষে‌ত্রে সেটাই হয়। এটা‌কে ব‌লে ইন্টার জেনা‌রেশনাল ট্রমা। মা‌নে আপ‌নি আপনার বাবামা দ্বারা নির্যা‌তিত হ‌য়ে‌ছেন, আপনার সন্তানও আপনার দ্বারা নির্যা‌তিত হওয়ার চান্স খুব বে‌শি।

কানাডার সমাজ, কালচার, স্কুল সি‌স্টেম, রী‌তিনীতি, সন্তান লালনপাল‌নের ধরন ও কৌশল বুঝ‌তে হ‌বে।  বাংলা‌দে‌শের সন্তানলালন পাল‌নের  নিয়মকানুণ, অভ্যাস, রী‌তিনী‌তি এখা‌নে আপনার সন্তানের জন্য এপ্রো‌প্রিয়েট নাও হ‌তে পা‌রে। দু‌টোর ম‌ধ্যে কন‌ফ্লিক্ট দেখা দি‌লে কাস্টমাইজ অথবা বালেন্স করুন। নি‌জেরটা চা‌পি‌য়ে দেয়ার চেষ্টা কর‌ছেন তো সমস্যা বাড়‌বে।

দরকার হ‌লে ধী‌রে সু‌স্থ্যে বু‌ঝি‌য়ে শু‌ঝি‌য়ে মানা‌তে চেষ্টা কর‌তে পা‌রেন। জোর কর‌বেননা।

আর ইতোম‌ধ্যে আপনার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চ‌লে গে‌লে তা মে‌নে নেয়ার চেষ্টা করুন। প্রফেশনাল‌দের পরামর্শ নিন।

সমস্যা থাক‌লে তার সমাধান থা‌কে। বিপ‌দে পর‌লে সাহায্য চান। সাহায্য আপনার পা‌শেই আছে।

ব্রাম্পটন, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles