-5.5 C
Toronto
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫

বৃষ্টির রং হয়ে যাবে নীল

বৃষ্টির রং হয়ে যাবে নীল
বৃষ্টির রং হয়ে যাবে নীল

কালো রঙের গরাদ  ভেদ করে  তেরচা আলো এসে পড়েছে । আলো আঁধারিতে দেখল মেঝেতে চটচটে কালচে দাগ। চশমাটা কুড়িয়ে তুলতে যাবে এমন সময় ওর হাতে কয়েক ফোটা তাজা রক্ত এসে পরল। সে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? এটা কার ঘর?

সে  চেঁচিয়ে উঠল, ” কে ওখানে? কেউ শুনতে পাচ্ছ?”

- Advertisement -

তার মনে হচ্ছে ভয়ংকর একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। চেঁচাবার চেষ্টা করে লাভ হলো না। গলা দিয়ে শুধু গো গো শব্দ হচ্ছে। রীমা  বুঝতে পারছে একটা ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের মাঝে আটকে গেছে। ও প্রাণপণে চাইছে ঘুম ভাঙুক। দুঃস্বপ্নের ঘোর  থেকে বের হয়ে চোখ মেলে তাকালো। চারপাশে নিকষ কালো আঁধার।বিমূর্ত অন্ধকারে ও স্বপ্নের অর্থ খুঁজতে বসল। এখনো বুকের ধুকপুকানি শুনতে পাচ্ছে। স্বপ্নে যার ভাঙা চশমা দেখল সেই মানুষটা কে? যার শরীরের কয়েক ফোটা রক্ত ওর হাতে পরল।

খাটের পাশেই নাইট স্ট্যান্ডে রাখা আছে জলের বোতল। অন্ধকারে ঠাহর করে বোতলের মুখ খুলে জল ঢালল গলায়।মুখের ভেতর কাগজের মতো শুকনো হয়ে রয়েছে। এমন হয় এখানে। এখানে ভীষণ শুষ্ক আবহাওয়া। রাতের বেলায় হিটিং সিস্টেম চালু হলে বাতাস আরও শুষ্ক হয়। রীমা এখানে নিয়মিত দুঃস্বপ্ন দেখে।

ও আলতো পায়ে ঘরের সাথে লাগোয়া বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। বারান্দা থেকে পেছনের বাগানের একটা অংশ দেখা যায়।অন্ধকারে গল্প বুড়ো একটা গাছ বিষণ্ণ ভঙ্গিতে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। এক রাশ ঝুড়ি নেমেছে জটাধারী বৃদ্ধের মত।

অন্ধকার কিছুক্ষণ বাদেই চোখে সয়ে এলো। ও আকাশের দিকে তাকিয়ে লক্ষ করল সবুজ রঙের আলো;  গোলাকার একটা চাকতির মত। প্রথমে অস্পষ্ট হলেও ক্রমশ সবুজ আলো তার উপস্থিতিটি জানান দিলো।সেই বৃত্তের পাশে আরও তিনটে বৃত্ত ধীরে ধীরে প্রকট হল।  বৃত্তাকার সবুজ আলোর পেঁচিয়ে কেমন হেলিক্সের মত আকৃতি নিলো। রীমা  নিবিষ্ট হয়ে  দেখছে।

প্রকৃতির কাছে  অদ্ভুত কৃতজ্ঞতায় ভরে গেল মন। মনোযোগ দিয়ে দেখল একটা অদ্ভুত ধরণের কিছুটা পরীর অবয়বের মত আকাশে দৃশ্যমান হচ্ছে। যার পাখার কাছে ঈষৎ বেগুনি আর গোলাপি রঙের খেলা।

আজ চাঁদের তৃতীয়া তিথি ।  তৃতীয়া তিথির আলোতে দেখল অপার্থিব এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যার নাম মেরুজ্যোতি।মৃত্যুর আগে শেষ দশটি দৃশ্য দেখার তালিকা করেন অনেকে সেটাকে বলে বাকেট লিস্ট। অনেকে আইসল্যান্ডে গিয়েও দেখা পান না।তবে রীমা  ক্যালগেরি  ভ্রমণে এসে দেখল অরোরা বোরিয়ালিস।

অত্যন্ত সৌভাগ্যবান না হলে এমন বিরল দৃশ্য দেখার সুযোগ কারো হয় না।রীম এমন অনেকের অভিজ্ঞতা শুনেছে যারা সুদূর আইসল্যান্ডে গিয়েও মেরুজ্যোতির সাক্ষাৎ পায়নি। অথচ সে কানাডার একটি শহরে কাকতালীয় ভাবে দেখে ফেলল প্রকৃতির এই অপরূপ  লীলা। সূর্য পৃষ্ঠে যখন ঝড় ওঠে তখন ফোটনের কণা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে।

বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার পরে সেই ফোটনের বিচ্ছুরিত আলো মানুষের চোখে মেরুজ্যোতি হয়ে ধরা দেয়। উত্তর এবং দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি দেশগুলোতে সচরাচর দেখা যায়।বায়ুমণ্ডলের সাথে সৌর পৃষ্ঠের ফোটনের মিথস্ক্রিয়ায় হয় অপরূপ আলোর খেলা।

পাশের বাড়িতে থাকেন একজন আদিবাসী। তিনি করুণ সুরে গান করছেন। প্রতিবেশীর বাড়িতে রাখা আছে কোনো একটি প্রাণীর মাথার কঙ্কাল । কঙ্কালের ভেতরে মোমবাতি জ্বলছে। প্রতিবেশী ভদ্রমহিলার পরনে রঙিন আলখাল্লা ধরণের পোশাক।মাথায় পালকের মুকুট। এই মুহূর্তে ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে প্রকৃতির সন্তান। ওর মনে হল এই দৃশ্য এই সুর পৃথিবীর নয়। এই সৌন্দর্যের  উৎস যেমন মহাকাশে;  তেমনি সেই অপার্থিব সুর ভেসে আসছে অন্য কোনো ভুবন থেকে।

একটা অচেনা পাখির ডানা  ঝাপটানোর শব্দ হল।ভদ্রমহিলা সেই শব্দে যেন সম্বিৎ ফিরে পেলেন।এতক্ষণ যেন একটা ঘোরের মাঝেই ছিলেন।রীম অবাক হয়ে দেখল একটা দাঁড়কাক। ওদের দিকে তাকিয়ে কা কা করে ডেকে ডানা ঝাপটায়ে উড়ে গেল।

রীমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ” আমরা বিশ্বাস করি যখন মেরুজ্যোতি দেখা যায় আমাদের পূর্বপুরুষের আত্মারা আসেন আমাদের সাথে দেখা করতে। আমি তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদন করে গান গাইছিলাম।”

রীমা  বলল, ” গানের কোনো কথা আমি বুঝি নি। তবে সুর খুব মনোগ্রাহী।”

” তোমার সাথে কাল ভালো করে গল্প করব মাই চাইল্ড। আজকে তুমি ড্যান্সিঙ লেডির সৌন্দর্য উপভোগ কর।”

 

ক্যালগেরি, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles