বাংলা টাউনে এই চরম শীতে টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সিনেমা দেখা বা স্বানামধন্য মানুষের সঙ্গে তাদের ‘আড্ডা’ অনুষ্ঠানে আমি যাই শুধু ফোরামের মনিস রফিকের আমন্ত্রণের জন্যে। এমন ভদ্রচিত এমন আন্তরিক ভাবে মনিস ডাকেন যে যেতেই হয়। গতকাল শুক্রবার ২৪শে জানুয়ারী প্রদর্শন ছিলো তরুণ পরিচালক যুবরাজ শামীমের ‘আদিম’সিনেমার।
সিনেমা শেষে বিজ্ঞ জনেরা নিজেদের মতামত বলেন ফোরামের একজনের উপস্থাপনায়। কাল উপস্থাপক ছিলেন গৌতম। প্রথমে শাকিল হান্নান ও তারপর ইকবাল করিম হাসনু বল্লেন ‘আদিম’ নিয়ে তাদের মতামত। হাসনুর যখনি বলেন গুছিয়ে বলেন ভালো লাগে।মাঝে মধ্যে সাওগাত আলী সাগর ও ভালো বলেন শুনতে ইচ্ছে করে। এবার ফোরামের ফেসবুক প্রতিবেদনে অন্যান্য মতামত বক্তার সঙ্গে আমার ছবিটি ও দিয়েছেন। কারণ উপস্থাপক আচমকা আমাকেও ডাকলেন মতামত বলতে,ধন্যবাদ গৌতম । ‘ আদিম’ সম্পর্কে দেশের পত্র পত্রিকার অন লাইনে দেখেছি। বিশেষ করে পোস্টার ডিজাইন দৃষ্টি আকর্ষণ করে ছিলো যেহেতু সিনেমা ঢঙের না হয়ে মঞ্চ নাটক টাইপের ।
পোস্টার গ্রাফিকের বেশ বোল্ড কাজ,ভালো লেগে ছিলো। যুবরাজ শামীম আরেকটি চরম বোল্ড কাজ করেছেন যা আগে দুই বাংলার সিনেমায় সম্ভবত হয়নি। তাহলো প্রায় ৭মাস টঙ্গী বস্তীতে নিজে থেকে তৈরী করেছেন তার আদিমের আদম আদমীদের। প্রত্যেকটি চরিত্র লোকেশান সেই বস্তীরই বাসিন্দা। আর অভিনয় তা দুই বাংলার নামী দামী ঝুনা অভিনেতা অভিনেত্রী গণ ও এত বাস্তব সম্মত অভিনয় করতে পারতেন কিনা সন্দেহ হয়। এটি হয়েছে এই জন্যে যে তারা কেউ অভিনয় করেনি! তারা বস্তীতে যেমন ছিলেন প্রতিদিন যেমন কাটে তেমনি থেকে তাদের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক হওয়া তরুণ পরিচালকের কথা মত কাজ করে গেছেন।
তাদের কাছ থেকে এই মানটা পাওয়া কারণ অভিনয়ের চেয়ে মূল বাস্তব চরিত্র তারাই। এডিটিং খুব না হলেও ভালো। ক্যামেরার কাজ এরকম লোকেশানে খুবই চেলেঞ্জিং এর মধ্যে যতটুকু হয়েছে ভালো বলা ছাড়া উপায় নেই। তবু মন চায় এই হার্ড রিয়ালিটির কর্মকান্ড ধারণে আরেকটু কাব্যময়তা। মনে করিয়ে দেয় সূর্য দীঘল বাড়ি সিনেমায় বাংলাদেশের আধুনিক ফটোগ্রাফীর জনক আনোয়ার হোসেনে কথা। এক একটি কবিতার মত তিনি সাজাতেন তার কাজ করা সিনেমার ফ্রেম টু ফ্রেম।
এবার পরিচালনার কথা বলি, গোটা বিশ্বে যত ভালো সিনেমা হয়েছে তা ফিল্মস্কুলে পাঠ নেয়া তাত্বিক লোকজন করেননি। করেছে অন্য পেশায় থাকা সিনেমা করার স্বপনে বিভোর মানুষেরা। যেমন ফেডেরিকো ফেলিনি,ভিত্তরিও ডি সিকা,ইঙ্গমার বার্গম্যান,সত্যজিৎ রায়,ঋত্বিক ঘটক,মৃণাল সেন,শেখ নিয়ামত আলী,মসিউদ্দিন শাকের,গৌতম ঘোষ,,অঞ্জন দত্ত,কিংবা হালের ইকবাল হোসেন চৌধুরী এরা সবাই ফিল্ম স্কুলে পাঠ দিয়ে মহা সিনেমা তাত্বিক হয়ে সিনেমা বানাতে আসেননি এসে ছিলেন অন্য পেশা থেকে সিনেমা বানানোর স্বপ্নবাজ মানুষ।
যুবরাজ শামীম পারবারিক চাপে ইঞ্জিনিয়ার হলেও তৈরীতো করলেন শেষ পর্যন্ত সিনেমাই! শামীমের সামনে অনেক সময় ভাগ্য ভালো যে তিনি প্রথম সিনেমাতেই পুরস্কৃত ও আন্তর্তাতিক কম বেশি আলোচিত। শামীমের মত আরো কিছু যুবা পরিচালক তৈরী করছেন তাদের বাস্তব ভিত্তিক সিনেমা । আশা করি এরা পারবেন সবাই মিলে একটার পর একটা কাজ শেষ করে বাংলাদেশের গলিত দুর্গন্ধময় টুকলিফাই সিনেমার কবর দিয়ে মনুষ্য জীবনের বাস্তব ভিত্তিক সিনেমার স্থায়ী গোড়াপত্তন করতে।
স্কারবোরো, কানাডা