আমার husband একজন বাঙালি ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টকে ওনার কর্মস্থলে হায়ার করেছিলেন বছরখানিক আগে হবে। ছেলেটা দুইবছরের মতো হবে এসেছে কানাডায় টরন্টোতে। সে কাজ খুঁজতে গিয়েছিল ওখানে তো আমার husband তাকে পছন্দ করেন ও হায়ার করেন। ছেলেটা সেই থেকে অটো সেকশনে কাজ করে যাচ্ছে। সে কিছুই জানত না প্রথমে। ধরতে গেলে আমার husband তাকে একেবারে হাতে ধরে ধরে শিখিয়েছেন। প্রত্যেকটা বিষয় বুঝিয়েছেন।
ছেলেটাও খুব ভালো, কর্মঠ ও অতীব ভদ্র। তার মধ্যে সম্ভাবনা আছে। অনেকেই কাজ পাওয়ার পর ধরে রাখতে পারে না। যাই হোক এই ছেলেটা এখন খুব দক্ষ হয়ে গেছে বলা যায়। মানে তার দায়িত্ব অনুযায়ী সে সবকিছু ঠিকঠাক মতো করতে পারছে আলহামদুলিল্লাহ।
এই ছেলেকে আমার husband যখন হায়ার করেন তখন কিন্তু তার কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। অটো সেকশনে কাজ করতে হলে গাড়ি চালানো শেখা থাকা ভালো। তো আমার husband ঐ ছেলেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার জন্য তাকে অনুপ্রাণিত করেন। তারপর সে জয়েন করার আগেই ড্রাইভিংয়ের প্রথম পরীক্ষা লিখিত যেটা ওটাকে G1 বলে সেটা দিয়ে পাশ করল।
তারপর সে বাঝে মাঝে লেসন নিয়েছে G2 পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। দুইদিন আগে G2 পরীক্ষা দিয়ে এক চান্সে সে পাশ করেছে। গিয়েছিল সে শহর থেকে একটু দূরে। পাশ করার সঙ্গে -সঙ্গে সে আমার husband কে মেসেজ দেয়। বলে “স্যার আমি পরীক্ষায় পাশ করেছি। আপনি বলেছিলেন আমি পাশ করলে মিষ্টি খাওয়াবেন। কবে খাওয়াবেন স্যার?
উনি তো বাসায় এসে বললেন, “আমাকে মিষ্টি কিনতে যেতে হবে ছেলেটা G2 পরীক্ষায় পাশ করেছে”
আমি মনে করলাম মিষ্টি তো খাওয়া যাবেই। তারজন্য কিছু রান্না করি লাইসেন্স পাওয়া উপলক্ষে।
সেইজন্য কিছু রান্না করেছি গতকাল। কারোর জন্য রান্না করতে গেলে তো খুব একটা ভালো হয় না। কিন্তু ভাগ্যচক্রে সবগুলো রান্নার স্বাদ ও ঠিকঠাক হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। ঢেঁরস কুচি করে আলু কুচি দিয়ে ভাজি করেছি। সাদা ভাত রান্না করেছি যেন সব কিছু দিয়ে খাওয়া যায়। সঙ্গে আছে মাছের ঝোল, দুই পদের চিকেন, সালাদ, ডিজার্ট ইত্যাদি।
আমার husband কাজ থেকে আসা মাত্র সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে তাকে দিতে গেলাম। সে অনেক ধন্যবাদ জানালো খুব করে। আমি বললাম, তুমি লাইসেন্স পেয়েছ বলে আমি অল্প কিছু রান্না করে নিয়ে এসেছি। সে খুব খুশি হলো। তখন সে বলল, “একমাত্র স্যারের কারণে আমার এই লাইসেন্স পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে। উনিই আমাকে অনেক করে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। সেইজন্য পরীক্ষাটা দেওয়া হয়েছে। তা নাহলে আমি এখনো তিন বছর পরে দিতাম।”
আমি জানতে চাইলাম তোমার লেখাপড়া কেমন হচ্ছে। সে বলল ভালো। আমি বললাম তুমি তো জান অনেকেই ওয়ার্ক পারমিট পাবে না। তুমি পাবা তো? সে বলল, “জি আন্টি আমি পাব ইনশাআল্লাহ। কারণ আমি যে বিষয়ে প্রথমে পড়তে এসেছিলাম সেটা আমি চেঞ্জ করে অটোমোটিভে পড়ব।” সে যে কলেজে পড়ে সেখানে অটোমোটিভ টেকনিশিয়ান কোর্স আছে।
কিছুদিন আগে নিয়ম করেছে সরকার কোনো প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ করা যাবে না। বদল করলে ফের ওয়ার্ক পারমিট নেওয়া লাগবে।সে যেহেতু কলেজ চেঞ্জ করছে না শুধু বিষয়টা চেঞ্জ করতেছে তাই কোনো সমস্যা হবে না।
এখন যখন সে অটোমোটিভ পড়বে এই বিষয়টা study of field এর মধ্যে আছে। আর যখন পড়া শেষ হবে তখন সে ওয়ার্ক পারমিট পেয়ে যাবে। তারপর সে তো এখন পার্ট টাইম কাজ করছে। ওয়ার্ক পারমিট পেলে সে ফুলটাইম কাজ করতে পারবে। তারপর এক বছর কাজ করার পর express entry পুলে ফাইল সাবমিট করবে। যেহেতু সে skilled trade এ কাজ করবে সেহেতু তার PR এর জন্য ইনভাইটেশন আসবে ধারণা করা যায়।
আমি কিন্তু সেই শুরু থেকেই সবাইকে বলে যাচ্ছি যারা এখনো পড়তেছে তাদের কোর্স যদি study of field এর মধ্যে না পড়ে তাহলে চেঞ্জ করে ফেলা দরকার।
যাই হোক সব স্টুডেন্টরা PR পেয়ে যাক এটাই কাম্য।
এদিকে তাকে খাবার দিয়ে বাড়িতে আসলে সে মেসেজ পাঠিয়েছে। বলেছে সব খাবারই খুব ভালো হয়েছে। মাছটা তার আরো ভালো লেগেছে। আমি জেনে খুশি হলাম।
আল্লাহ আপনাদের সুস্থ রাখুন।
টরন্টো, কানাডা