9 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

যুক্তরাজ্যে বিচারপতি মানিকের বিলাসবহুল বাড়ি

যুক্তরাজ্যে বিচারপতি মানিকের বিলাসবহুল বাড়ি
ছবি সংগৃহীত

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আলোচিত সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক তার অনেক সম্পদ বিক্রি করে বিদেশ বাড়ি-গাড়ি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যে তার বিলাসবহুল বাড়ি কেনার তথ্য দুদকের হাতে এসে পৌঁছেছে। কোন কোন দেশে তিনি স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদ কিনেছেন, তা জানতে ১০টি দেশে চিঠি পাঠিয়েছে সংস্থাটি।

এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি করে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া ও জোর করে অন্যের ৯০০ কোটি টাকা মূল্যের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। বিচারপতি মানিক কারাগারে যাওয়ার পর তার দখলে থাকা জমি স্থানীয়রা দখল করে নিয়েছেন। কারাগারে বিচারপতি মানিক সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন বলে জানিয়েছেন ডিআইজি প্রিজন মো. জাহাঙ্গীর কবির।

- Advertisement -

দুদকের তথ্যমতে, ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিকানা অর্জন, সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে অর্থ পাচার ও অন্যের জমি দখল করার একটি অভিযোগ জমা পড়ে সংস্থাটিতে। কমিশন অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংস্থাটির উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক পাপন কুমার সাহা ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের কর্মকর্তারা বলেছেন, অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে দুদকের টিম বিচারপতি মানিকের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য জানাতে ব্যাংক, বীমা, সিটি করপোরেশন, রাজউক, ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, রিহ্যাবসহ ২০০ প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দপ্তর থেকে তথ্য-উপাত্ত দুদকে জমা হচ্ছে, যা এখন পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

দুদক কর্মকর্তারা বলেছেন, বিচারপতি মানিক ও তার পরিবারের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। তাদের বারিধারার একটি জমিতে ডেভেলপার কোম্পানির মাধ্যমে তিনটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। একটি ভবন তাদের দেওয়া হয়েছে আর দুটি ভবন ডেভেলপার কোম্পানি নিয়েছে। বিচারপতি মানিক ওই ভবনে এক ডজন ফ্ল্যাট পেয়েছেন; কিছু ফ্ল্যাট বিক্রি করে দেওয়ার পর এখন তার চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে। বাকি ফ্ল্যাট ও অন্যান্য সম্পদ তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। বিক্রির টাকা তিনি কোথায় বিনিয়োগ করেছেন, কী পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন, তার অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।

দুদকের কর্তারা বলেছেন, দুদকের অনুসন্ধান টিম বিচারপতি মানিকের আয়কর নথিসহ বেশ কিছু রেকর্ড সংগ্রহ করেছে। আয়কর নথিতে তার যুক্তরাজ্যে একটি বাড়ি কেনার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বাড়িটি কত টাকায় কিনেছেন, বাড়িটির অবস্থান কোথায়, তা আয়কর নথিতে নেই। অনুসন্ধানের প্রয়োজনে ওই বাড়ির বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া দেশের সম্পদ বিক্রি করে কোন কোন দেশে তিনি বাড়ি-গাড়ি করেছেন, তা জানাতে সম্প্রতি কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাইসহ ১০টি দেশে বিএফআইইউয়ের মাধ্যমে চিঠি পাঠিয়েছে।

দুস্থ ও অসহায় সাংবাদিকদের পুনর্বাসনের জন্য ১৯৯৮ সালে জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার (জার) নামে একটি সংস্থাকে ঢাকার বারিধারায় ১০ একর জমি লিজ দেয় সরকার। অভিযোগ রয়েছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই ওই জমির পাঁচ একর অংশ দখলে নেন বিচারপতি মানিক।

অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর বারিধারার জে-ব্লকে সাউথপয়েন্ট স্কুলের পাশের ওই জমিতে সাতটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনের সামনে লেখা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী ভবন।

এ বিষয়ে দুদকের কর্মকর্তারা বলেন, বিচারপতি মানিকের বাড়ির লাগোয়া ১০ একর জমিতে যাতায়াত করতে হলে তার বাড়ির সামনের রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। রাস্তার দুই পাশে বিচারপতি মানিক ও তার পরিবারের সদস্যদের তিনটি বহুতল ভবন রয়েছে। বিচারপতি মানিক ওই রাস্তার প্রবেশ মুখে লোহার গেট ও গেটের ওপরে বিশাল সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন। তাদের ব্যক্তিগত গেট হওয়ায় ওই জমিতে কেউ প্রবেশ করতে পারত না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিচারপতি মানিক জোর করে জমিটি দখলে রেখেছেন। তবে এ জমি বিচারপতি মানিক দখল করেছেন কি না তার কোনো রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়নি। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্থানীয়রা তার বাড়ির সামনের গেট ভেঙে সেই জমি দখল করে নিয়েছেন এবং প্লট আকারে ভাগ করে নিজেদের সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছেন।

কারাগারে বিচারপতি মানিক মারা গেছেন বলে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় রটনা ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন) জাহাঙ্গীর কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিনি ডিভিশন বিল্ডিংয়ে আছেন। সুস্থ স্বাভাবিক আছেন। ফেসবুকে যে খবর ছড়িয়েছে, তা স্রেফ গুজব।’

জানা গেছে, বিচারপতি মানিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে বারবার সমালোচিত হয়েছেন। বিচারপতির আসনে বসে যখন যাকে খুশি আদালতে ডেকে অপমান-অপদস্থ করা, বিজনেস ক্লাসে বসতে না পেরে বিমানের ভেতর তুলকালাম সৃষ্টি করা, রাস্তায় সালাম না দেওয়ায় ট্রাফিক পুলিশকে আদালতে তলব করা, সরকারি বাড়িতে থেকে ভাড়া না দেওয়া, লন্ডনে বাড়ি কেনার আয়ের উৎস দেখাতে না পারা এবং টকশোতে গিয়ে উপস্থাপিকার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন।

শামসুদ্দিন মানিক ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে তাকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত করা হয়। পরে তাকে হাইকোর্টের অস্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সে নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বিচারপতি হিসেবে পুনর্বহাল হন। ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে পদোন্নতি পান তিনি। জ্যেষ্ঠ ২১ জন বিচারককে ডিঙিয়ে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিকের বাংলাদেশের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব রয়েছে। সেখানে তার একাধিক বাড়িও রয়েছে। ২০১২ সালে বিচারপতি থাকা অবস্থায় লন্ডনে তিনি হামলার শিকার হয়েছিলেন। ২০১৫ সালে অবসর গ্রহণের পর লন্ডনে ফের হামলার শিকার হন তিনি।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles