পদত্যাগ করলেন সম্প্রতি ক্লাসে ছাত্রকে বিয়ে করে সমালোচনার জন্ম দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকা। ওই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় তার সম্মানহানি হচ্ছে এবং এর পর থেকে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন বলেও পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন। গত শনিবার তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পার্থপ্রতিম লাহিড়ির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে কলেজ ছাড়ার কথা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, আলোচিত ঘটনাটি ভারতের নদীয়ার। সেখানকার হরিণঘাটার মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি বা ম্যাকাউট-এর ফলিত মনস্তত্ত্ববিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সেই অধ্যাপিকা।
পদত্যাগপত্র পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ম্যাকাউটের রেজিস্ট্রার। তার কথায়, “নিয়ম মেনে পদত্যাগপত্র উপাচার্যের কাছে পাঠানো হবে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার কেবলমাত্র উপাচার্যের।”
গত ২৮ জানুয়ারি থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই অধ্যাপিকা এবং এক ছাত্রের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, অধ্যাপিকার পরনে লাল বেনারসি। গলায় গোলাপ এবং রজনীগন্ধার মালা। তার সিঁথিতে সিঁদুর রাঙিয়ে দিতে দেখা যায় এক কলেজ ছাত্রকে। অধ্যাপিকা ও ছাত্রের মালাবদলের দৃশ্য মোবাইলে বন্দি করেন অন্যান্য শিক্ষার্থীরা। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে সিঁদুরদানের ছবিও। এ নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়।
ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসতেই বিতর্ক শুরু হয়। ক্লাসরুমে কীভাবে এমন আচরণ করলেন অধ্যাপিকা, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিতর্ক মাথাচাড়া দিতেই ম্যাকাউটের হরিণঘাটা ক্যাম্পাসের ‘অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজি’ (ফলিত মনস্তত্ত্ববিদ্যা) বিভাগের প্রধান ওই অধ্যাপিকাকে ছুটিতে পাঠিয়ে দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কী ঘটেছিল ক্লাসরুমে? কেন অধ্যাপিকা এমন কাণ্ড ঘটালেন? তা খতিয়ে দেখার জন্য ম্যাকাউট কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। সম্প্রতি সেই কমিটি রিপোর্ট দেয়। তাতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়, শ্রেণিকক্ষে অধ্যাপিকা যে ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা কোনও কারিকুলাম বা পাঠক্রমের অংশ ছিল না। যদিও ওই অধ্যাপিকা দাবি করেন, কলেজের ‘ফ্রেশার্স’ অনুষ্ঠানের জন্য একটি নাটকের পরিকল্পনা করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। বিয়ের দৃশ্যটি ওই নাটকেরই অংশ। কিন্তু ওই অংশটি ভিডিও করে ছড়িয়ে দেওয়ার নেপথ্যে চক্রান্ত রয়েছে বলেই দাবি করেন অধ্যাপিকা। তার অভিযোগ, এক সহকর্মী ইচ্ছাকৃতভাবে সম্মানহানি করার জন্য ওই ভিডিয়ো ছড়িয়ে দিয়েছেন। পরে তিনি সমাজমাধ্যমে সকলের উদ্দেশে অনুরোধ করেন, “অসভ্যতাকে প্রশ্রয় দেবেন না। এসব বন্ধ করুন। আমার পাশে দাঁড়ান। ভিডিওটি আপনারা রিপোর্ট করুন। আর শেয়ার করবেন না।” তবে তাতে কোনও ফল হয়নি। সেই কারণেই এবার কলেজ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন সেই অধ্যাপিকা। সূত্র: আনন্দবাজার