![তাপমাত্রা মাইনাস ২০ এর নীচে তাপমাত্রা মাইনাস ২০ এর নীচে](https://www.thebengalitimes.com/wp-content/uploads/2025/02/Picture1.jpg)
বৎসরের এ সময়টাতে উভয় দিকেই প্রচন্ড শীত থাকে যেমন আমার জন্মভূমি বাংলাদেশে এবং বর্তমান দেশ কানাডাতে।প্রতিদিনই খবরে পড়ছি প্রচন্ড ঠান্ডায় আক্রান্ত ঢাকা সহ উত্তরের জনপদ। সে তাপমাত্র কখনই ৩ সেলসিয়াসের নীচে নয় আর এখানে আমরা দৈনন্দিন জীবন কাটাই মাইনাস ৩০ সেলসিয়াসের নীচে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যই আপনার খোলা হাতের আঙ্গুলের রক্ত জমে কালো হয়ে যাবে এবং তারপর ইমারজেন্সি।
এ শহরের প্রায় প্রতিটি মানুষের একটি করে গাড়ী আছে যা এই ঠান্ডায় খুবই দরকারী। তবে গাড়ী ছাড়া মানুষও আছে যারা টেক্সি ক্যাব ডাকেন দরকারে। বাসা বাড়ীতে বাতাস ঢোকেনা আর সেন্ট্রাল হিটিং চলার কারনে সেখানে একটি টি শার্ট গায়ে ঘোরাফেরা করা চলে। এদেশের অফিস আদালত, দোকানপাটে প্লাস ২২ সেলসিয়াস তাপমাত্রা নিষ্চত করা আছে তাই যারা কাজ করেন তারা স্বাচ্ছন্দে করেন। এমনকি হাসপাতালে আমি যেখানে চাকরী করি সেখানেও একই তাপমাত্রা থাকে তবে গায়ে শার্টের উপরে একটি পাতলা সোয়েটার সব সময় রাখতে হয় কারন মাঝে মধ্যে এখনেই হালকা ঠান্ডা লাগে।
শীতে গাড়ীও সমস্যা করে তাই এটিকে সবাই যত্ন করে। তাপমাত্রা মাইনাস ২০ এর নীচে গেলেই গাড়ীতে Plug in করতে হয় বৈদ্যুতিক আউটলেট থেকে ফলে ষ্টার্ট নিতে গাড়ীর সমস্যা হয়না। তাই প্রতিদিন in and out এর কাজটি কেউই আমরা ভুলিনা। আর একটি সমস্যা হলো ধীরে ধীরে চাকার হাওয়া জমে সন্কুচিত হয়ে যায় ঠান্ডায় এবং ধীরে ধীরে তা বেরিয়ে যায়। দু একটি টায়ারে এমনটি হয় তখন গাড়ীতে থাকা মেশিন দিয়ে সেটি ঠিক করে গাড়ী চালাই।
নতুন উপসর্গ দেখি এ বছর সেটি হলো যে দরজাটি খুলি সেটি আর লাগতে চায়না সহজে তবে দুএকবার চেষ্টার পর লেগে যায়। এটি যেমন লাগতে চায়না তেমন আবার একবার লাগলে চাবি ছাড়া খুলতেও চায়না সাথে কিল চড়ও লাগে । সে দিন সকালে রিমোর্ট ষ্টার্ট দিয়ে গাড়ী গরম করে উঠতে যাওয়ার আগেই ১৫ মিনিট সময় পার হওয়াতে তা বন্ধ হয়ে গেল। দরজা খুলে চাবি দিয়ে ষ্টার্ট দিয়ে বাইরে এসে বরফ পরিস্কার করে ভিতরে ঢুকবো কিন্তু দরজা আর খোলে না।
মহা বিপদ! বাসার চাবিটি গাড়ীর ভিতর। বাসায় গাড়ীর একটি অতিরিক্ত চাবি আছে কিন্তু বাসায় যাওয়ার উপায় নেই। অফিসে একটি চাবি আছে সেটি আনতে পারলে গাড়ী খুলে নিয়ে যাওয়া যাবে। ট্যাক্সি ক্যাবে ফোন দিলাম। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। ভাবলাম হেটেই যাই ১৫ মিনিট তারপর চাবি নিয়ে কারো সাহায্য নিয়ে ফেরা যাবে। গাড়ীর ইন্জিন চালু রয়ে গেল।
কাছেই একজনকে দেখলাম গাড়ীর বরফ পরিস্কার করছে। কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম মাথা মুখ শরীর কঠিন আবরণে আমাদের দুজনেরই ঢাকা। চোখ দিয়ে আমরা উভয়কে দেখছি।
Excuse me তুমি কি এ দিকে যাবে? আমি হাসপাতালের দিক দেখালাম।
-কেন?
-আমি হাসপাতালে চাকুরী করি। আমার গাড়ীটি স্টার্ট দিয়ে বরফ পরিস্কার করে ভিতরে ঢুকতে যাবো দেখি লক হয়ে আছে কিন্তু সব চাবিতো ভিতরে আমি বাসায়ও যেতে পারছিনা তবে অফিসে একটা অতিরিক্ত চাবি আছে সেটা এনে খুলতে পারবো।
সে আমার কথা শুনে উত্তর দিলো
-না, আমি এখনই লেট আমার অফিসের জন্য।
এমন পরিস্থিতিতে আমি কাউকে না করতাম না। মাত্র দু মিনিটের পথ গাড়ীতে। এ রকম ঠান্ডায় গত বছরও আমি হেটে অফিসে গিয়েছি গাড়ীটি পুরানো কর্মস্থলে রেখে আসার কারণে। হাটা শুরু করলাম একবার পিছু ফিরে দেখলাম। কেন যেন মনে হলো লোকটি অনুশোচনায় পড়বে। বেশ কিছুদূর হেটে চলে এসেছি হঠাৎ আমার সামনে দিয়ে একটি গাড়ী ঘুরে এসে দাঁড়ালো ভিতর থেকে হাত ইঁশারায় ডাকছে। আমি বুঝতে না পারায় এবার সে দরজা খুলে ডাকলো। কাছে গিয়ে সামনের আসনে বসলাম। সিট বেল্ট বাঁধলাম।
লোকটি ফিলিপিনো বললো
-আমি এখানে ডেন্টাল টেকনিশিয়ানের কাজ করি ডাউন টাউনে। সে তার নাম বললো। ।আমার কাছে অনেকগুলো প্রশ্ন করলো। একটি প্রশ্ন ছিলো বেতন সংক্রান্ত। এরা টাকা পয়সার প্রতি বেশী যত্নশীল।
অফিস থেকে চাবি নিয়ে দেখি সামনে ট্যাক্সি ক্যাব। আমার গাড়ীটি ততক্ষনে বেশ গরম হয়েছে ভিতরে। আমি গাড়ী নিয়ে ফিরে এলাম অফিসে। গাড়ীর, বাসার চাবি আলাদা করলাম।
তার উপর একটু অভিমান হয়েছিলো তথাপি সেই কিন্তু উপকার করলো। উপকারীর উপর কখনো কি অভিমান করা চলে?
ইয়েলোনাইফ, কানাডা