ঘৃণার চর্চা আজকাল কেন বেশী হচ্ছে? এক কথায় উত্তর হলো, দুই পক্ষই ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ চলে গেছে বলে মনে করছে। একজনের অস্তিত্ব মানেই অপরজনের বিনাশ!
একজন ছিনতাইকারী ছিনতাই করতে এসে বা ডাকাত ডাকাতি করতে এসে কেন হত্যা করে ফেলে? যখন ভিকটিম বলে ফেলে যে সে তাদেরকে চিনতে পেরেছে। তখন ঐ ছিনতাইকারী বা ডাকাত দল ভাবে যে তার আর রক্ষা নাই। ভিকটিম বেঁচে থাকলে তাদের ফাঁসি অনিবার্য। তখন নিজেকে বাঁচাতে ভিকটিমকে হত্যা করে, যদিও তারাও আসলে বাঁচতে পারে না, দুদিন আগে অথবা পরে ধরা পড়ে এবং ফাঁসিতে ঝুলে।
২০১৮ এবং ২০২৪ এর বিগত দুটি নির্বাচন ফেয়ার করার আর উপায় ছিল না তৎকালীন সরকারী দলের। তারা ভাবতো নির্বাচন ফেয়ার হলে বিরোধী দল বিজয়ী হবে। আর বিরোধীরা বিজয়ী হলে তাদের শাস্তি অনিবার্য। ফলে যত দিন গেছে, ততই নির্বাচন ফেয়ার করা বিগত সরকারের জন্যে অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। ২০১৪ তে স্বেচ্ছায় যে কাদায় তারা পা দিয়েছিল, ২০২৪ এ এসে সেই কাদায় আরো বেশী আটকা পড়ে গিয়েছিল আওয়ামীলীগ।
পাঠকের হয়তো মনে আছে, সাবেক সরকারী দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলতেন, বিরোধী দল ক্ষমতায় গেলে তাদের লক্ষ লোক মারা যাবে। আর তখন প্রায়ই বেগম জিয়া, তারেক রহমান এমনকি মির্জা ফখরুলের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করতে হতো, তারা প্রতিশোধ প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন না। কিন্তু তবুও কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারেন নাই। যার ফলে ২০২৪ এর ৭ই জানুয়ারির সর্বশেষ নির্বাচনটাও এক তরফা হতে বাধ্য হয়েছিল।
বর্তমান অবস্হা অনেকটা সেরকমই, বরং আরো খারাপ। বিরোধী দলকে আস্থায় নিয়ে ফেয়ার নির্বাচন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের একেবারেই যখন অনীহা পরিস্কার হয়ে গেল ঠিক তখনই জুলাই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হলো।
এখন বিশেষ করে সরকার ও ছাত্র সমন্বয়কদের কেউই আর চায় না, আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরে আসুক। তাদের কেউ কেউ বিভিন্ন টকশোতে বলেই ফেলেছেন যে আওয়ামী লীগ ফিরে আসা মানে তাদের জীবন শংকার মধ্যে পড়ে যাওয়া। আবার একই সাথে আওয়ামী লীগের পলাতক বা প্রকাশ্য কোন নেতার পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এরকম কোন আশ্বাস বাণী পাওয়া যায় নি যে তারা ফিরে এলে নুতন করে শুরু করবেন, কেউ এখন পর্যন্ত অনুতাপ বা অনুশোচনা করেন নি। ক্ষমা চান নি বা ক্ষমা করবেন বলেন নি, বলছেন না যে তারা ফিরে এলেও আর প্রতিহিংসার রাজনীতি করবেন না।
ফলে দুটো পক্ষই মোটামুটি ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ অবস্থান করছে। অতএব আগামীতে দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের আশা নেই বললেই চলে। উভয়পক্ষই সর্বশক্তি নিয়োগ করবে একে অপরকে নিশ্চিহ্ন করতে। বাকী রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ কেউ অবস্হা বুঝে ব্যবস্হা নিবেন, কেউ কেউ ব্যালেন্স অলরেডি শুরু করে দিয়েছেন বলে তাদের বক্তব্য বিবৃতিতে প্রতীয়মান হয়।
এহেন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে কেউ ভাবছেন কিনা এখন পর্যন্ত তা দৃশ্যমান নয়।
স্কারবোরো, কানাডা