
২০০২ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা আয়োজিত পরিবেশ স্বাস্থ্য বিষয়ক মাসব্যাপী এক কর্মশালায় যোগ দিতে থাইল্যান্ড যাই।ব্যাংকক থেকে আমাদেরকে বুরাপা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হ’ল। স্থানীয় একটা থ্রিষ্টার হোটেলে থাকতে দেয়া হয়।থাই ভাষায় বুরাপা শব্দের অর্থ পূর্ব।
বিশ্ববিদ্যালয়টি ব্যাংকক শহরের পূর্বে পাতায়ার নিকটবর্তী।প্রথমদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজক বিভাগ আমাদেরকে সংবর্দ্ধনা প্রদান করে। দুজন সহকারী সচিব ও আমি মিলে আমরা ৩ জন বাংলাদেশী। বাকিরা পাকিস্থান, লাওস, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনস, শ্রীলন্কা ও থাইল্যান্ডের।বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে উক্ত বিভাগের ছাত্র ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং আমরা অংশগ্রহনকারীরা উপস্থিত হয়েছি রাতে। আমাদের সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো।
জানানো হলো যে পরিচয় পর্বের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং তারপর ভোজন পর্ব।ভেবেছিলাম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাই শিল্পীরা অংশগ্রহন করবে কিন্ত্ত ঘোষনা এলো আমরা যারা বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছি তারা তাদের দেশের গান শোনাবে। তিনজন মিলে আলাপ করছি বিষয়টা কেমন করে সামলাবো। এরই মধ্যে জানানো হলো যে, ইংরাজী বর্নমালার অক্ষর অনুযায়ী এক এক দেশকে ডাকা হবে।শুরুতেই বাংলাদেশ।সহকারী সচিব দু’জনকে বললাম আপনাদের মধ্যে একজন চলে যান।
তারা দুজন একসাথে হয়ে আমাকে একা করে দিলেন। হাজির হলাম ষ্টেজে।মাইক্রোফেনের সামনে দাঁড়িয়ে একটু চিন্তা করেনিলাম যে কি গাইবো। আমি তো শিল্পী নই। সবাই তাকিয়ে আছে আমার দিকে। গাইতে শুরু করলাম আমার প্রিয় রবীন্দ্র সংগীত- ‘তোমায় কিছু দেবো বলে চায় যে আমার মন—-’। মুহুর্তে দর্শক ভর্তি অডিটরিয়াম নিরব হয়ে গেল। পিন পতন সে নি:স্তব্ধতা। গান গাইছি আর চোখ ঘুরিয়ে সবাইকে দেখছি।
হঠাৎ ফুলের মালা হাতে একটি মেয়ে দর্শকসারির মাঝখান থেকে উঠে দাড়ালো, তারপর দু’হাতে ধরা মালাটি নিয়ে ধীর পায়ে ষ্টেজের দিকে এগিয়ে আসছে। আমি গাইছি আর দেখছি। মনে হলো স্বপ্ন দেখছি। গান প্রায় শেষের পর্যায়ে এরই মধ্যে সে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। শেষ হওয়ার পূর্বেই তার দু’হাত থেকে মালাটি আমার হাতে নিলাম যেন হাত বদল হলো মালাটি। মনে মনে ভাবলাম মালা কয়বার পরবো তাই তার হাত থেকে নিয়ে ভালই করেছি। সে দৌড়ে পালালো।
গান গাওয়া শেষ হলে দর্শক সারিতে বসা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মহিলা প্রফেসর বললেন-বাংলাদেশীদের কাছে আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই।ইতোমধ্যে সহকারী সচিব দু’জন আমার পাশে চলে এসেছেন।–বাংলাদেশীরা আমাদের মেয়েদেরকে কিভাবে দেখে? প্রফেসর জানতে চাইলেন।বুঝতে পারলাম মালাটি তার হাত থেকে নেয়ার জন্য তারা অপমান বোধ করেছেন।
একটু গুছিয়ে উত্তর দিলাম যে আমাদের মা, বোন, স্ত্রী সন্তানদের মতো তারাও আমাদের কাছে শ্রদ্ধার। তারা শান্ত হলো বলে মনে হলো। আমি দর্শক সারিতে চলে এলাম।অনুষ্ঠান শেষে সবাই আমার কাছে এসে বাংলা গানের প্রশংসা করলেন। পাকিস্তানি এক ডাক্তার এসে বললেন যে, সে বাংলা বুঝে না কিন্ত্ত এই গানটি শুনতে তার ভাল লেগেছে।
টরন্টো, কানাডা