0.2 C
Toronto
বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫

কানাডা নাম শুনলেই চোখ আমার চকচক করে

কানাডা নাম শুনলেই চোখ আমার চকচক করে
কানাডা নাম শুনলেই চোখ আমার চকচক করে

কাজের ব্রেকে, দুপুরের শুরুতে একে-ওকে ফোন করার নেশায় ধরে। ফোন করতে থাকি সিরিয়ালী:

জিয়া ফোন ধরে বলল- আসসালামু আলাইকুম দোস্ত!

- Advertisement -

– ওয়ালিকুম সালাম..

– কাইফ হালুক?

– এইতো, আল্লাহ রাখছে

– কি সৌভাগ্য রে আমার, বড়োলোক বন্ধু ফোন দিছে!

– শোন, চকচকে জীবন মানেই বড়োলোক না। বিশ্বের এক নাম্বার ফকির দেশ হলো কানাডা

– কানাডা নাম শুনলেই চোখ আমার চকচক করে রে..

– সৌদি আরবে থাকিস, ল্যাবে কাজ করিস; এরকম কাজ আমি যদি একখান পাইতাম! খালি তেল আর তেল.. এদিকে আমাদেট জীবন শেষ। শুধু নামেই কানাডা; টাকা পয়সা নাই; সরকার ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে আটকায় ফেলছে

– রিপন, মুখ ছুটাইসনি! যাই হোক, স্নো পড়ে?

– হু

– গরিবের পড়ে বৃষ্টি, বড়োলোকের পড়ে স্নো

– তোদের সৌদি কতো আরামের; বরফ নাই, ঠান্ডা নাই..

– আচ্ছা, মনে কর আমার আর তোর বিয়ের জন্য  মেয়ে খোঁজা হচ্ছে..

– সৌদিদের মাথায় বিয়ে ছাড়া কিছু নাই?

– আরে শোন না, মনে কর এক সুন্দরী মেয়েকে বলা হলো তোর আর আমার মধ্যে যেকোনো একজনকে চুজ করতে। তখন সেই মেয়ে কাকে নিবে?

– তোকে নিবে, আমার মতো টাক মাথা কে কোনো মেয়ে পছন্দ করবে না।  তোর মাথায় য ঝাকড়া চুল!

– টাক, কানা, খোঁড়া এইসব কোনো ব্যাপার না রে। শুধু কানাডার পাসপোর্ট থাকলেই তুই কুয়ালিফায়েড। সৌদি থাকি শুনলেই মানুষ ভাবে রাস্তা ঝাড়ু দেই, খেজুর-খোরমা বেচি, দারোয়ান-ড্রাইভারগিরি করি..

– হয় রে, আর কানাডায় বাসন মাজলেও লোকে ভাবে এসি রুমে বসে কম্পিউটার টিপতেসে, মিটিং করতেছে

– তোদের সামনে তো বিরাট সুখবর রে!

– ক্যা?

– তোরা আমেরিকার একান্নতম স্টেট হয়ে যাচ্ছিস.. কি সৌভাগ্য তোদের!

– ধ্যাৎ! রাখলাম দোস্ত, পরে কথা বলবো।

.

এবার চিশতী কে ফোন দেই। গম্ভীর আর সিরিয়াস গলায় বললাম- দোস্ত কেমন আছিস?

– এইতো ভালো

– জরুরি কাজে ফোন দিছিলাম। একটু বিপদেই পড়ছি। তুই কি ফ্রি?

– মোটামুটি ফ্রি, বল

– তাহলে থাক। পরে ফোন দিবো

– কি সমস্যা বল? [সে এবার সত্যি সত্যি খুব সিরিয়াস হয়ে গেলো]

– কীভাবে বলি, না হয় বাসায় যা, তখন আলাপ করি?

– এখনই বল

– মানে.. একটু আগে জিয়ার সাথে কথা বলতেছিলাম। এমন বিপদে পড়লাম..

– আবার দেরি করিস! বল!

– ঘটনা হলো, কামে গেলে তোর ভাবি আমাকে দুই বক্সে দুইটা নাস্তা দেয়। একটা খাই সকাল এগারোটার দিকে, আরেকটা খাই দুপুর দুইটার দিকে

– তো?

– আজকে খুব বেখেয়াল ছিলাম। জিয়ার সাথে কথা বলতে বলতে দুইটা বক্সের নাস্তাই একসাথে খাইসি। টের পাইনি। এখন দুপুরে কী খাবো?

– হারামি, মশকরা করার জায়গা পাস না? ওই খালি বাক্স দুইটা চিবায়ে খা বুকা.. আজাইরা কামে আমার  সময় নষ্ট করিস।

রাখলাম।

.

রাত দু’টার সময় হঠাৎ ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারে ফোন বেজে উঠলো। অনেকসময় জিয়া ভুল করে মাঝ রাতে ফোন দিয়ে সরি বলে। ফোন হাতে নিয়ে দেখি আম্মা। ফোন ধরে এক্সট্রা ঘুমঘুম গলায় বললাম, হ্যালো আম্মা?

– কি রে বাবা ঘুম?

– হু

– হায় হায়, তোকে ঘুম থেকে জাগালাম! কয়টা বাজে?

– দুইটা

– দেখ তো কান্ড.. ভাবছিলাম তোদের বেশি রাত হয়নি। আমি অতো তোদের সময়-টময় বুঝি না। তোরা সবাই ভালো তো?

– হু

– সকালে কথা বলি তাহলে?

– আচ্ছা। তোমরা সবাই ভালো তো?

– হা বাবা আলহামদুলিল্লাহ ভালো

– আচ্ছা রাখি

– রাখবি? রিপন রে..

– হু

– তোর কপালটা দে তো, চুমু দেই?

– এই নাও- বলে আমার কপালটা এগিয়ে দেই। মা আমার আওয়াজ করে চুমু দিলো।

মনে মনে বললাম- মা গো, ভুলে আরও বেশি বেশি যখন খুশি ফোন দিও। দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা আমার ফোন তোমার জন্য খোলা।

শুধু তোমার জন্য..

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles