
গত জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে ৬ আগস্ট। এরপর ৯ আগস্ট ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এই অভ্যুত্থানের ফলে তিন দিন বাংলাদেশে কার্যত কোনো সরকার ছিল না।
এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় দেশে ব্যাপক সহিংসতা ঘটে, যেখানে কয়েক হাজার মানুষ হতাহত হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় ছাত্র-জনতা বেশ কয়েকটি থানা ঘেরাও করে এবং পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়, যার ফলে পুলিশ সদস্যদের হতাহতের ঘটনাও ঘটে। অনেকেই এই হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের অনুগত পুলিশ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র গোষ্ঠীকে দায়ী করছেন।
৬ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন বলে জানা গেছে। তার সঙ্গে মন্ত্রিসভার সদস্যরাও পলাতক রয়েছেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা ও কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এমনকি আন্তর্জাতিক আদালত থেকেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিচারিক কার্যক্রম এগিয়ে চলছে, এবং আরও অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকে বিচারের আওতায় আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা অভ্যুত্থানের সময় নিহত ছাত্র-জনতার জন্য তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারকে দায়ী না করে বরং বিশেষ একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠীর ওপর দোষ চাপাচ্ছে। তাদের দাবি, সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য এই গোষ্ঠী স্নাইপার রাইফেল দিয়ে ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করেছে। তারা মনে করে, এর মাধ্যমে সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তারা সফলও হয়েছে।
এই দাবির সত্যতা এখনো প্রমাণিত হয়নি। তবে, সাম্প্রতিক এই ঘটনাবলীর ওপর জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন একটি বিস্তারিত তদন্ত পরিচালনা করেছে এবং তাদের প্রতিবেদন এই মাসেই জেনেভায় প্রকাশিত হবে। ড. ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই এই মিশনকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, তাই এটি নিরপেক্ষ হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। জাতিসংঘ কোনো পক্ষের চাপে নেই, ফলে তাদের প্রতিবেদন বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া বাস্তব ঘটনাগুলো সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা দিতে পারবে।
এই প্রতিবেদনে উঠে আসতে পারে, পুলিশ আদৌ ছাত্র-জনতাকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিল কি না, নাকি তারা শুধুমাত্র প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল। পাশাপাশি, ছাত্র-জনতার আক্রমণে পুলিশের হতাহতের প্রকৃত চিত্র কী ছিল, তাও পরিষ্কার হতে পারে। তদুপরি, বিশেষ কোনো গোষ্ঠী সত্যিই পরিকল্পিতভাবে গুলি চালিয়ে সাধারণ মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে কি না, সে বিষয়টিও হয়তো স্পষ্ট হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ বর্তমানে এক জটিল রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সরকার পরিবর্তনের পাশাপাশি দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। তবে, জাতি যেন পথ না হারায়, সে প্রত্যাশাই সবার।
স্কারবোরো, কানাডা