
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সে দেশে ডাইভারসিটি, ইক্যুইটি এবং ইনক্লুসন নীতিমালা বিলুপ্তির ঘোষণা দিয়েছেন। এখন থেকে শুধুমাত্র মেধার ভিত্তিতে টিকে থাকতে হবে, তাতে মহিলা, কালো, বাদামী বা অন্য সংঘ্যালঘু জাতি চাকুরী বা পড়াশোনায় টিকে থাকতে পারলেন কি না তা তিনি কেয়ার করবেন না। তিনি আরো ঘোষণা দিয়েছেন, তৃতীয় লিংগ বা ট্রান্সজেন্ডার বলে কাউকে স্বীকৃতি দেয়া হবে না, হয় পুরুষ না হলে মহিলা। তার ভাষায় পুরুষ মানুষ মহিলা সেজে নিজেকে মহিলা বা মহিলা মানুষ নিজেকে পুরুষ বলে পরিচয় দিতে পারবে না।
ডাইভারসিটি, ইক্যুইটি এবং ইনক্লুসন নীতিমালার অর্থই ছিল সমাজে ভারসাম্য তৈরী করা, পিছিয়ে পড়া বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব যাতে সকল কর্মক্ষেত্রে থাকতে পারে সে ব্যবস্হা করা। বর্ণ, লিংগ, ধর্ম ইত্যাদির ভিত্তিতে যাতে কারো প্রতি বৈষম্য করা না হয় তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি কোম্পানীর চাকুরীর বিজ্ঞাপনে লেখা থাকতো, “উই আর এ্যান ইুক্যুয়াল অপরচুনিটি এম্পলইয়ার”। এখন থেকে সেটা আর থাকছে না। ফলে আমেরিকার মানুষ যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে শত বছর ধরে লড়াই করে সমাজটাকে অনেকদুর এগিয়ে নিয়ে এসেছিল তা এখন আবার পিছনের দিকে চলে যাবে। অর্থাৎ পরিস্কারভাবে বর্ণবাদী আমেরিকার নুতন যুগ শুরু হবে। এর মুল কথা হলো বর্ণবাদী ধর্মীয় উগ্রবাদের আবারও উত্থান শুরু হবে খোদ আমেরিকার মাটিতে।
কোথাও খৃষ্টান উগ্রবাদী, কোথাও হিন্দু উগ্রবাদী, কোথাও বৌদ্ধ উগ্রবাদী আর কোথাও মুসলিম উগ্রবাদীদের ছোবলে শান্তির পৃথিবী খুব শীঘ্রই নরকে পরিণত হবার হাত থেকে বাঁচাতে হলে বিবেকবান মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। আশার কথা হলো, আমেরিকার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কংগ্রেসম্যানরা ঘোষণা দিয়েছে তাদের পার্লামেন্টে প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান সদস্যদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সব মৌলবাদী কর্মকাণ্ড রুখে দিবেন। অর্থাৎ আমেরিকার গনতন্ত্র শক্তিশালী বলে তাদের সংসদ সদস্যরা জাতীয় স্বার্থে এক হয়ে কাজ করবেন। কিন্তু পৃথিবীর যে সব দেশে গণতন্ত্র নেই, প্রতিপক্ষ দলকে শত্রু মনে করে একে অপরকে খতম করার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত থাকে সেসব দেশে কী হবে তা একমাত্র ভবিতব্যই বলতে পারে!
টুকরো স্মৃতি
১৯৯১ সালের কথা। গোয়ালন্দ উপজেলার সবচেয়ে বড় হাট উজানচর হাট। মুলত গোয়ালন্দ বাজারের হাট। বর্তমানে পৌরসভার বড় হাট। প্রতিবছর ইজারার জন্যে টেন্ডার বা ডাক হয়। উপজেলা পরিষদের টেন্ডার কমিটির চেয়ারম্যান তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ইউএনও, উপজেলা প্রকৌশলী ও আরো কয়েকজন কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে এই টেন্ডার কমিটি সকল উন্নয়ন কাজের টেন্ডার যাচাই বাছাই করে আইন মোতাবেক সর্বোচ্চ ডাককারীকে উপজেলা পরিষদের অনুমোদনের জন্যে সুপারিশ করেন। আর উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান সেটা অনুমোদন করেন। তো, একদিন বসে আছি অফিসে। ইউএনও সাহেব একটি ফাইল অনুমোদনের জন্যে পাঠালেন। গোয়ালন্দ বাজারের হাট ডাক হয়েছে। সর্বোচ্চ ডাককারী হিসেবে হাটটি ইজারা পেয়েছেন আমারই আপন সহোদর আবু হেনা। ইউএনও সাহেব ভেবেছিলেন, আমার ছোট ভাইয়ের নাম দেখে আমি চোখ বন্ধ করে অনুমোদন দিয়ে দিব। বিধিবাম! আমার ভাইয়ের নাম দেখে, আমার সন্দেহ হলো। সাধারণত এই হাট ডাক করে যারা নেয়, প্রতিবছর যাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দিতা হয়, তারা হলেন তিনজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার মধ্যে একজন আমার ছোট ভাই বটে তবে অন্য দুজনের সেই ডাকে বা টেন্ডারে অংশ গ্রহণের কোন নমুনা দেখতে পেলাম না। যাদের নাম দেখলাম তাদেরকে চিনি না। অর্থাৎ কাগজটি বানানো। মুলত আমার ভাইকে নামকাওয়াস্তে হাটটি ইজারা দেবার বন্দোবস্ত করে আমার কাছে অনুমোদনের জন্যে পাঠিয়েছেন। ভেবেছে, আমার ভাই, নাম দেখলেই আমি অনুমোদন দিয়ে দিব।
মনে পড়লো জনগণের কাছে আমার ওয়াদার কথা। ১৯৯০ সালে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের রাতে হাজার হাজার জনতার সামনে বলেছিলাম, অন্য উপজেলায় কী হয়, আমি জানি না, কিন্তু আমার উপজেলায় আমি যতদিন থাকবো কোন দুর্নীতি আমি করবো না, কাউকে করতেও দিব না।
ফাইলটি প্রত্যাখান করে ইউএনওকে ভর্ৎসনা করলাম। এভাবে তিন বার তিনি চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন। যদিও প্রত্যেকবারই তিনি আইন সম্মতভাবেই ফাইলটি আমার সামনে অনুমোদনের জন্যে প্লেস করেছিলেন। চতুর্থবার তিনি বাধ্য হয়েছিলেন, সঠিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের অংশগ্রহণ করিয়ে টেন্ডারের কাজ শেষ করতে। এতে আমার ভাইয়ের বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকার ক্ষতি হয়েছিল। সকালে এই ঘটনা। দুপুরে বাসায় খেতে গিয়েছি। একই টেবিলে আমরা দুই ভাই, কেউ কারো মুখের দিকে তাকাই নি। আমি বাসার বাজার সদাই করি না। তখনো বাবার হোটেলের ভাতই খাই…।
স্কারবোরো, কানাডা