
রোববারে টরন্টোয় প্রবল তুষারপাতের দিন ছিল। সন্ধ্যা হওয়ার বাকি ঘণ্টাখানিক। তখন তুষারের ছটায় চারিদিক ধবধবে করছে। মাঝেমাঝে দমকা হাওয়ারও আওয়াজ কানে আসছিল জানালা ভেদ করে। আমি রান্না করছিলাম একটা কিছু। হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেলাম দরজায় নক করার শব্দে।
দরজায় লাগানো স্বচ্ছ গ্লাসের ওপাশে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে আচঁ করতে পারলাম। অনেকেই আসে বিভিন্ন দরকারে বা ইন্টারনেট মার্কেটিংয়ের কাজে। ভেবেছিলাম আজও হয়তো বেল কানাডা ইন্টারনেটের সংযোগ জোর করে দেওয়ার জন্য কেউ এসেছে।
দরজা না খুলেই এপাশ থেকে বললাম হাই। বাইরে থেকে বলল, “Hello, I am here to request your vote for Doly Begum.”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, are you Bangali? সে বলল, Yes.
তারপর আমি দরজা খুললাম। দেখলাম মাধ্যম সাইজের উচ্চতায় ফর্সা গোলগাল কাঠামোর অবয়বের একজন ছেলে হাস্যোজ্জ্বল মুখে দাঁড়িয়ে আছে। আপাদমস্তক তুষারের কণায় ঢাকা। সে হাত বাড়িয়ে ডলি বেগমের লিফলেটটা আমার হাতে দিল। বলল, “ভোট দিয়েন আন্টি।” যেহেতু বাঙালি তাই একটু আলাপচারিতা বাড়ালাম। সে বলল, সে U of T থেকে একটা বিষয় ব্যাচেলার্স ডিগ্রি পাশ করেছে। চাকরি খুঁজছে। বয়স ২২ কিংবা ২4 হবে ছেলেটার। আমার কাছে অনুমতি নিল আমাদের ফ্রন্টইয়ার্ডে একটা প্লে কার্ড লাগিয়ে দেওয়ার জন্য। ছেলেটা অনেক ছোট বেলায় এসেছে বাবা-মায়ের সঙ্গে। আজ সেই প্লেকার্ডটা লাগিয়ে দিয়ে গেছে স্নোর স্তুপের মধ্যে।
সে বলল, ডলি বেগম তার বোনের মতো তাই তার হয়ে সে কাজ করতেছে।
ডলি বেগম হলেন বাঙালি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান। তিনি 2018 সাল থেকে এনডিপি পার্টির প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্টের এমপি হয়ে আসছেন। এই ধরে তিনি টানা তিনবারের এমপি হবেন যদি এবার তিনি জিততে পারেন। তার এলাকা বাংলাদেশের মৌলভীবাজার। তিনি টরন্টোর এই এলাকার যথেষ্ট জনপ্রিয়।
যাই হোক, আমি ঐ ছেলেকে বললাম, ডলি বেগম তো সব সময় জেতেন। ছেলেটা হেসে বলল, “তবুও চেষ্টা করতে হবে।”
অন্টারিওতে বর্তমানের প্রিমিয়ার ডাগ ফোর্ড। তিনি ট্রাম্পের মোকাবেলার জন্য চার বছরের নতুন ম্যান্ডেট নিতে এই অগ্রিম ভোটের আয়োজন করেছেন। আগামী ২৭শে ফেব্রুয়ারি হবে ভোট।
এই ভোটে চারজন নেতা হলেন
Progressive Conservative Leader Doug Ford,
NDP Leader Marit Stiles,
Liberal Leader Bonnie Crombie
and Green Party Leader Mike Schreiner
ডলি বেগমের দল হলো NDP। এই দল জিতলে প্রিমিয়ার হবেন Marit Stiles। কিন্তু সে সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কারণ NDPএর জন সমর্থন 17% এর মতো হবে। সে দল জিতুক আর না জিতুক ডলি বেগম বরাবরই জেতেন। কারণ মেয়েটা ভালো, নরম স্বভাবের। তাই বাঙালিরা তাকে ভোট দেয়। তাছাড়া কানাডিয়ান পার্লামেন্টে আমাদের বাঙালির সংখ্যা বৃদ্ধি করা দরকার।
আমি হয়তো ডলিকে ভোট দিব কিন্তু আমি মোটেও তার দলের সমার্থক না। আমরা চাই ডাগ ফোর্ড আবার আসুক। ফোর্ড খুবই straight forward মানুষ। তিনি দুইবার এই আসনে আছেন। তিনি কিন্তু কোনো ট্যাক্স বাড়ান নি। তাছাড়া ট্রাম্প ইস্যুতে ফোর্ডের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
কিন্তু টরন্টোর যিনি মেয়র হয়েছেন NDP দলের চাইনিজ অরিজিন অলিভিয়া চাও, তাঁকে অধিকাংশ বাঙালি ভোট দিয়ে জিতিয়েছে। তারপর এই চাও কী করল? প্রথম বছরেই প্রোপার্টি ট্যাক্স বাড়িয়ে দিলেন $270 CAD বা 6.9%
আমরা প্রোপার্টি ট্যাক্সের বিল পেয়েছি। $4,000 এর মতো হবে দিতে হবে। যদিও আমরা চাওকে ভোট দেই নি কিন্তু অন্যান্য বাঙালিরা ভলেন্টিয়ারিং করেছে তাকে জেতাতে। পুনরায় চাও পাশ করবে বলে আশা নেই।
এদেশের মানুষ দল দেখে ভোট দেয় না। প্রার্থী দেখে ও তার যোগ্যতা দেখে ভোট দেয়। দেখা যাক কী হয়।
টরন্টো, কানাডা